Advertisement
E-Paper

হাঁটা থেকেই নাম, এখন হাঁটাই দায় দিনহাটায়

সে প্রায় ৮০-৯০ বছর আগের কথা। এখনকার দিনহাটা শহর তখন গড়ে ওঠেনি। এখন যে এলাকা নিয়ে পুরসভা এলাকা গড়ে উঠেছে, সেখানকার পরিবেশও ছিল গাছগাছালির জঙ্গলে ভরা। মাঝেমধ্যে ইট-কাঠ টিনের বাড়ির সারি ছিল। রাস্তাঘাটও সন্ধে হলেই বাঘের গর্জনে কেঁপে উঠত। ফলে, দিনের বেলা ছাড়া লোকজনের দেখা মিলত না। দিনে দিনে হাটে বিকিকিনি শেষ করে বাড়ি মুখো হতেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:২১
এমনই অবস্থা দিনহাটার ফুটপাথে। পথচারিদের চলা দায়। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

এমনই অবস্থা দিনহাটার ফুটপাথে। পথচারিদের চলা দায়। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

সে প্রায় ৮০-৯০ বছর আগের কথা। এখনকার দিনহাটা শহর তখন গড়ে ওঠেনি। এখন যে এলাকা নিয়ে পুরসভা এলাকা গড়ে উঠেছে, সেখানকার পরিবেশও ছিল গাছগাছালির জঙ্গলে ভরা। মাঝেমধ্যে ইট-কাঠ টিনের বাড়ির সারি ছিল। রাস্তাঘাটও সন্ধে হলেই বাঘের গর্জনে কেঁপে উঠত। ফলে, দিনের বেলা ছাড়া লোকজনের দেখা মিলত না। দিনে দিনে হাটে বিকিকিনি শেষ করে বাড়ি মুখো হতেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

জনশ্রুতি রয়েছে, দিনের বেলা ওই হাট বসত। সকাল থেকে হাঁটাপথে প্রত্যন্ত এলাকার ক্রেতা বিক্রেতাদের বেশির ভাগ সেখানে ভিড় করতেন। মহকুমার বাইরে থেকে তো বটেই, এখনকার বাংলাদেশের কিছু এলাকা থেকেও নৌকোয় সিঙ্গিমারি নদী পেরিয়ে অনেকে আসতেন। সূর্য ডোবার আগে বিকেলের মধ্যে হাট ভেঙে যেত। পাট, তামাক, গরু কেনাবেচার ওই হাট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। দিনের বেলা বসা হাটে হাঁটা পথেই মূলত ক্রেতা বিক্রেতারা আসতেন বলে ক্রমে এলাকাটি দিনহাটা নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।

দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ নিজেই ওই বাঘ দৌরাত্ম্যের কথা শুনেছেন। উদয়নবাবু বলেন, “বাবার কাছেই (প্রয়াত কমল গুহ, প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী) শুনেছি, তাঁদের ছোটবেলায় বাবুপাড়ায় আমাদের বাড়ির পেছনের দিকের জঙ্গল থেকে সন্ধ্যে নামলেই বাঘের গর্জন শোনা যেত। আমি যখন ক্লাস ফাইভ বা সিক্সে পড়ি তখন তো সাহেগঞ্জে একজন আস্ত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার মেরে সেটির দেহ নিয়ে গোটা দিনহাটা ঘুরেছিলেন। তা নিজে দেখেছি।”

সময়ের প্রবাহে গত কয়েক দশকে সেই দিনহাটার ছবিটাই আমূল বদলে গিয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, যানবাহনের ভিড়, তুলনামূলক ভাবে অপ্রশস্ত রাস্তা এমনকী, অপরিকল্পিত ডিভাইডারের মত কিছু সমস্যায় সেই দিনহাটাতেই এখন দিনের বেলা হাঁটা দায় হয়ে পড়েছে। কিন্তু একদিন দিনের বেলা হাট থেকে হাঁটাহাঁটির সূত্র ধরে যে শহরের নামকরণ, সেখাকার পরিস্থিতি কী ভাবে বদলে গেল?

বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাজার আমলে দিনহাটার বেশির ভাগ রাস্তা ছিল কাঁচা। কয়েকটি রাস্তা ছিল ইটের তৈরি। সন্ধ্যার পরে কয়েকটি এলাকায় কেরোসিনের পথবাতি জ্বলত। সত্তরের দশক থেকে পুরসভা গঠনের পর থেকে সেই ছবিটা খানিকটা বদলাতে থাকে। আশির দশকে মোট ১০ টি ওয়ার্ড নিয়ে প্রথম পুর নির্বাচন হয়। বাড়তে থাকে জনবসতি। মহকুমা ও লাগোয়া বিভিন্ন এলাকা থেকে শহরমুখি হতে অনেকেই দিনহাটায় ভিড় বাড়তে থাকে।

কলেজপাড়া, বলরামপুর রোড, স্টেশন পাড়া, ঝুড়িপাড়া, বাবুপাড়া লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকাকে নব্বইয়ের দশকে পুরসভার এলাকা হিসাবে সংযোজন করতে হয়। সব মিলিয়ে শুধু ওই পুরসভা এলাকাতেই এখন ৫০ হাজারের বেশি মানুষের বাস। তার ওপর দিনহাটা শহরেই গোটা মহকুমার তিনটি ব্লকের একমাত্র কলেজ। যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় দশ হাজারের কাছাকাছি। ছোটবড় বাস, গাড়ি, মোটর বাইক মিলিয়েই দৈনিক গড়ে এক হাজারের বেশি যানবাহন শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে যাতায়াত করছে। তার ওপর রিক্সা, অটোর দৌরাত্ম তো রয়েইছে।

লাগোয়া বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে ট্রেনতো বটেই দিনমজুরির কাজে সাইকেল, ভ্যান নিয়ে বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। তেমনই মহকুমা সদরে সরকারি অফিস, থানা, স্কুলে নানা কাজে চাকরি, ব্যবসা, চিকিসার মত নানা কারণেও দৈনিক আরও অন্তত ৪০ হাজার লোক দিনহাটা শহরে যাতায়াত করেন। সব মিলিয়ে লক্ষাধিক লোক আর ক্রমবর্ধমান যানবাহনের দৈনিক চাপ সামলাতে শহর দিনহাটার নাভিশ্বাস বাড়তে শুরু করে। অথচ কোচবিহার থেকে শহরে ঢোকার মুখে একটা বাইপাস রাস্তা ছাড়া ছাড়া বিকল্প যাতায়াতের রুট কিছু হয়নি।

ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, কলেজ, একাধিক স্কুল, হাসপাতাল, মহকুমা শাসকের দফতর, পুরসভা থেকে শুরু করে আদালত, ব্যাঙ্ক, বাজার, সিনেমা হল সবই হয়েছে। অথচ রাস্তা যথেষ্ট চওড়া হয়নি। তার ওপর মদনমোহন বাড়ি লাগোয়া এলাকা থেকে চৌপথী পর্যন্ত ডিভাইডার বসানো হয়েছে। চৌপথী চত্বরে দাঁড়িয়ে যাত্রীবাহী যানবাহনে যাত্রীদের ওঠানো-নামানো হয়। যথেচ্ছ পার্কিংও চলছে। ফলে, দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।

জৈন মন্দির লাগোয়া এলাকা রাস্তা দখল করে ছোটগাড়ি দাঁড়াচ্ছে। স্টেশন রোড, গোসানি রোড , বলরামপুর রোড, রঙপুর রোড, সাহেবগঞ্জ রোডের মত ব্যস্ততম রাস্তাতেও একই ছবি। অভিযোগ, সমস্যার সমাধানে প্রশাসন-পুরসভা কেউ উদ্যোগী নয়। দিনহাটা নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক জয়গোপাল ভৌমিক বলেন, “জনসংখ্যার চাপ, যানবাহন জেলার অন্য শহরেও প্রায় একভাবে বেড়েছে। কিন্তু এমন যানজট, যে দিনের ব্যস্ত সময়ে মেন রোড-সহ কিছু রাস্তায় হাঁটাচলা করা যায় না। প্রবীণ বাসিন্দারা মনে করেন, পরিকল্পনার অভাবেই দিনহাটায় যানজট এখন নিত্য যন্ত্রণা।

(চলবে)

city named after walking walking at stake dinhata arindam saha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy