ভোরের আলো ফোটার আগেই খবরটা পৌঁছে গিয়েছিল বন দফতরের কাছে। পুলিশ, দমকলের কাছেও বার্তা গিয়েছিল, হাতি ঢুকে পড়েছে শিলিগুড়ি শহরের একতিয়াশাল এলাকার লোকালয়ে। ঘুম ভেঙে হাতি দেখার মজা নিতে যে অগুন্তি মানুষের ভিড় উপচে পড়বে সেটাও অজানা ছিল না বনকর্মী-পুলিশ-প্রশাসন, দমকলের অফিসার-কর্মীদের। তাই ভিড় হওয়ার আগেই হাতিটিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া যে জরুরি, তা নিয়ে কারও কোনও সংশয় ছিল না। কিন্তু, পুলিশ-প্রশাসন-বন দফতর, দমকল এবং এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই সব কিছু যেন গুলিয়ে গেল। ফলে, হাতিটি বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলের কাছাকাছি পৌঁছেও ফিরতে পারল না ডেরায়। তাই পরিবেশপ্রেমীদের অনেকেই দূষছেন বন দফতরকেই। পুলিশের একাংশও একান্তে বন দফতরের গয়ংগচ্ছ মনোভাবের জন্যই পরিস্থিতি জটিল হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
যা শোনার পরে বনমন্ত্রী বিনয় বর্মন বিশদে রিপোর্ট তলব করেছেন। মন্ত্রী বলেন, ‘‘পরিস্থিতি সামাল দিতে কখন, কী করা হয়েছে তা নিয়ে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সে সব খতিয়ে দেখা হবে। আগামী দিনে নানা দফতরের সঙ্গে সমন্বয় যাতে আরও জোরদার হয় সেটাও খেয়াল রাখার জন্য অফিসারদের বলা হয়েছে।’’
সেই সঙ্গে বনমন্ত্রী এটাও জানান, হাতির সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে। উত্তরের জঙ্গলে ৬০০ হাতি রয়েছে। বনাঞ্চল এলাকায় জনবসতিও বেড়েছে। এ সব নানা সমস্যা রয়েছে। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘তবে লোকালয়ে ঢুকে পড়া হাতিকে যাতে কেউ বিরক্ত না করেন, সেটা দেখা দরকার। আমরা ওই ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচিও নিচ্ছি। বনভূমি কী করে বাড়ানো যায় সে চেষ্টা হচ্ছে।’’
ঘটনা হল, বন দফতরের এক এক কর্তা জানিয়েছেন, তাঁরাও খবর পাওয়ার পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাতিটিকে ফেরানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু, সব মিলিয়ে কেন ৮ ঘণ্টা লেগে গেল, সেটাই তাঁরা বুঝতে পারছেন না।
হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের অন্যতম কর্তা অনিমেষ বসু বলেছেন, ‘‘এ সব ব্যাপারে সমবেত ভাবে কাজ করতে হয়। একটা টিমওয়ার্ক তৈরি করতে হয়। দেরি হলেই এমন হয়।’’ যেমন, আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের চেয়ারম্যান অমল দত্ত বলেন, ‘‘হাতিটি জঙ্গলে ফেরানোর ক্ষেত্রে যেমন বন দফতরের অদক্ষতা সামনে এসেছে একই ভাবে পুলিশ-প্রশাসন জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। আরও সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে।’’ আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের তরফে ল্যারি বসু মনে করেন, জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় পুলিশ ও বন দফতরের নজরদারি বাড়ানো উচিত। শিলিগুড়ির এসিপি পূর্ব পিনাকী মজুমদার সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘বন দফতর যখন যা বলেছে আমরা সেই মতো সহযোগিতা করেছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে দেয়নি পুলিশ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy