বেহাল সূর্য সেন পার্ক।—নিজস্ব চিত্র।
অবসর কাটানোর জায়গা নিয়ে দুদিন ধরে ‘আমার শহর’-এ লেখা পড়লাম। যা পড়ার পরে আমারও মনে হল, শহরের মধ্যে যে সম্পদ রয়েছে তারও যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। বিশেষ করে বাঘা যতীন পার্কের কথা বলব। ছোটবেলায় ওই পার্কে কত খেলাধূলাই না হতো। পরে ধীরে ধীরে তা রেলিংয়ে ঘেরা হয়ে গেল। একটা মঞ্চ হয়েছে তার আগেই। একটা পার্ক ধীরে ধীরে তা বদ্ধ জায়গায় পরিণত হয়ে গেল। সরকারি স্তরে কী যে পরিকল্পনা হচ্ছে অনেক সময়ে তার মাথামুণ্ড বুঝতে পারি না। হয়তো বোঝার ক্ষমতাও আমার নেই।
এটা হলফ করে বলতে পারি, বাঘা যতীন পার্কের চার দিকে রোজ সূর্যাস্তের পরে আড্ডার নামে গুটিকয়েক যুবক-যুবতী যে নেশার আসর বসায় তা কখনও চলতে দেওয়া যায় না। কেউ বাইকের উপরে বসে ঠাণ্ডা পানীয়ের বোতলে নেশার রসদ মিশিয়ে চুমুক দেয়। পাশেই গরম মুর্গি-ভাজা মেলে। কাজেই মৌতাতের ত্রুটি থাকার উপায় নেই। ওখানে যাঁরা আড্ডা দেন, তাঁরা বেশির ভাগই ভাল মানুষ। হাতে গোনা কয়েকজনের জন্য সকলের দুর্নাম হয়। তার উপরে রয়েছে বাইকের উৎপাত। রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত আড্ডার ফাঁকে বিকট শব্দে সেগুলি ঘোরাফেরা করে। কখনও রেস হয়। প্রতিবাদ করলে সমস্যা হয়।
যাঁরা ওই এলাকায় থাকেন, তাঁদের কয়েকজনকে আমি চিনি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে বহুবার নেতা-মন্ত্রীদের জানানো হয়েছে। পুলিশকে বলা হয়েছে। কিন্তু, কাজের কাজ হয়নি। বরং, দৌরাত্ম্য বেড়েছে। ইদানীং তো অশোভন দৃশ্যও দেখি। আমরা শহরে ‘নীতি পুলিশ’ চাই না। কিন্তু, প্রকাশ্যে মদ-গাঁজার আসর চলুক সেটাও মানতে পারব না। ভাবতে অবাক লাগে, আমাদের এলাকায় থাকেন উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রী। আমাদের এলাকা দিয়ে রোজ যাতায়াত করেন উত্তরবঙ্গের বিরোধী দলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা তথা মেয়র। আপনারা সকলে মিলে চাইলে কবে বাঘা যতীন পার্ক আগের মতো আবার অবসর বিনোদনের নিরাপদ জায়গা হয়ে উঠত। কিন্তু, কোনও কারণে তা হচ্ছে না বলেই এখন বাঘা যতীন পার্ক যেন উৎপাত হিসেবে ক্রমশ পরিচিত হয়ে উঠছে গোটা শহরে। আশা করব, নেতা-মন্ত্রীরা কিছু করবেন।
নিত্যপ্রসন্ন রায়, শিলিগুড়ি
পার্কে যেতে অস্বস্তি হয়
তথৈবচ অবস্থা বাঘাযতীন পার্কেরও।—নিজস্ব চিত্র।
শিলিগুড়ি শহরে আমাদের কয়েক প্রজন্মের বাস। শহরের দক্ষিণ ভাগে আমরা থাকি। দেখতে দেখতে আমিও মধ্য চল্লিশে পা দিয়েছি। ছোটবেলার শহরটা কী ভাবে পাল্টে গিয়েছে তা চোখের সামনেই দেখতে পাই। আমরা স্কুলের সময়ে প্যারেড করতে তিলক ময়দান, কলেজ মাঠে কতবার গিয়েছি। বাঘা যতীন পার্কেও বহুবার গিয়েছি। কখনও অসুবিধে হয়নি। এখন যখন দুই কিশোর-কিশোরী ছেলেমেয়েকে নিয়ে কোনও পার্কে গেলে অস্বস্তি হয়। ক’দিন আগে সূর্য সেন পার্কে গিয়ে দেখি এক কোণে বিয়ারের ক্যান ডাঁই হয়ে রয়েছে। ঝোপের আড়ালে তাকালে আরও বিব্রত হতে হয়। আধুনিকতার নামে প্রকাশ্যে যা হচ্ছে, তাতে মনটা খারাপ হয়ে যায়। সূর্য সেন পার্কের বাইরে পার্কিংয়ের সামনে প্রায়ই গোলমাল হয়। ওই জায়গাটা ভাল করা যায় না? একটা ভাল রেস্তোরা কেন সূর্যসেন পার্কে হয় না? শৌচাগারেরও কোনও ব্যবস্থা নেই। শিলিগুড়ির কাছে সরিয়া পার্কের চেহারাও বদলে গিয়েছে। আগে অনায়াসে ঘুরে বেড়াতাম। এখন যে কোনওদিন গেলে দেখা যায়, ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের ভিড় যেন উপচে পড়ছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হল, কোনও পার্কেই বয়স্ক নাগরিকদের জন্য পৃথক কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। এমনকী, নিরামিশ খাবার যাঁরা খান, তাঁদের জন্য পৃথক কোনও ব্যবস্থা রাখার কথা ভাবা হয় না। ফলে, শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে গেলে সমস্যা হয় আমাদের মতো অনেকেরই। আগামী দিনে পার্কগুলি ঘিরে অনেক পরিকল্পনা হচ্ছে শুনছি। আশাকরি এ সব সমস্যার দিকে নজর দেওয়া হবে।
বিন্দিয়া অগ্রবাল, শিলিগুড়ি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy