Advertisement
E-Paper

বাবাকে না পেয়ে ছেলেকে অপহরণ, খুন

ঠিক ছ’মাসের ব্যবধান। গত বছর ডিসেম্বরের গোড়ায় এক সকালে কালিয়াচকের নওদা যদুপুরে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মহম্মদ আজিম আলম। এলাকার ত্রাস বকুল শেখের ছেলে সে। তারই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সাবির মোমিনের (১২) কপাল কিন্তু ততটা ভাল ছিল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৬ ০৩:৫৯
সাবির মোমিন

সাবির মোমিন

ঠিক ছ’মাসের ব্যবধান। গত বছর ডিসেম্বরের গোড়ায় এক সকালে কালিয়াচকের নওদা যদুপুরে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মহম্মদ আজিম আলম। এলাকার ত্রাস বকুল শেখের ছেলে সে। তারই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সাবির মোমিনের (১২) কপাল কিন্তু ততটা ভাল ছিল না। সোমবার বিকেলে ওই কিশোরকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে খুনের অভিযোগে কাঠগড়ায় সেই বকুল শেখ। যে ঘটনার পরে বকুল ও তাঁর অনুগামীদের গ্রেফতারের দাবিতে তুলকালাম হয়ে গেল কালিয়াচকে। প্রথমে জাতীয় সড়ক অবরোধ। তার পরে সেই অবরোধ তুলতে এলে পুলিশের উপরে হামলা। তার জেরে গাড়ির মধ্যে রাইফেল-লাঠি ফেলেই পালাতে হয় পুলিশকে।

বকুলের সঙ্গে এলাকার আর এক ত্রাস জাকির শেখের গোলমাল বহু দিনের। ঘটনাচক্রে দু’জনেই এক সময় শাসকদলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। পরে অবশ্য দল-বিরোধী কাজের অভিযোগে বকুলকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু এখনও তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা পঞ্চায়েতের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। গত ডিসেম্বরে বকুলের ছেলের উপরে যে হামলা হয়, তাতে জাকিরের হাত ছিল বলে অভিযোগ। বকুলের ছেলে সে দিন গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যায়।

এ বারে বাবার যুদ্ধে প্রাণ দিতে হল সাবিরকে। কী ভাবে? সাবিরের বাবা ইব্রাহিম এলাকায় জাকির ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। পুলিশ সূত্রের দাবি, সোমবার বিকেলে ইব্রাহিমকেই খুঁজতে এসেছিল বকুলের দলবল। না পেয়ে বাড়ির কাছ থেকে সাবিরকে তুলে নিয়ে যায়। জাকিরের দলবল এর জবাব দিতে বকুলের তিন অনুগামীকে অপহরণ করে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। পুলিশের হস্তক্ষেপে সোমবার রাতেই অবশ্য জাকিররা বকুল অনুগামীদের ছেড়ে দেয়। কিন্তু বকুলরা সাবিরকে ছাড়েনি। উল্টে গভীর রাতে বাড়ি থেকে পাঁচশো মিটার দূরে এনায়েতপুরের বাগানে তার দেহ মেলে। পুলিশ জানায়,
প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, তাকে পিটিয়ে
এবং শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। ভেঙে দেওয়া হয় তার দু’টি হাতই।

ছেলে অপহরণের কথা জানার পর থেকে ইব্রাহিম পাগলের মতো খোঁজাখুঁজি করেছেন তাকে। এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, ছেলের খোঁজে তাঁকে গ্রামের এ মাথা থেকে ও মাথা করতে দেখা গিয়েছে সোমবার সন্ধ্যায়। কিন্তু ছেলের দেহ উদ্ধারের পরে পরিস্থিতি বদলে যায়। বাড়িতে ইব্রাহিমের দেখা মেলেনি। বলা হয়, তিনি মর্গে গিয়েছেন ছেলের দেহ আনতে। সেখানেও গিয়ে দেখা যায়, ইব্রাহিম নেই। পরে পুলিশ জানায়, ইব্রাহিমের নিজের মাথার উপরে খুনের চেষ্টা, বোমাবাজি, তোলাবাজি-সহ ছ’টি মামলা রয়েছে। এ বারে গ্রেফতার হয়ে যেতে পারেন, সেই আশঙ্কা থেকেই হয়তো গা ঢাকা দিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, এ বার তিনি নিজেই খুন হয়ে যেতে পারেন, এই আতঙ্কেই লুকিয়ে পড়েছেন তিনি।

স্কুল ছাত্রকে এ ভাবে খুনের ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নওদা যদুপুর। বকুল শেখ-সহ তাঁর অনুগামীদের গ্রেফতারের দাবিতে সকাল আটটা থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু হয়। পুলিশের অভিযোগ, এর পিছনে জাকির-অনুগামীদের উস্কানি ছিল। পুলিশের অভিযোগ, অবরোধের সামনের সারিতে মহিলা ও শিশুরা থাকলেও পিছনে দুষ্কৃতীরাই ছিল। তাই পুলিশ অবরোধ ওঠাতে গেলে ইট-পাথর নিয়ে রে রে করে তাদের উপরে চড়াও হয় বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ ভ্যানে ভাঙচুর চালানো হয়। ঘটনায় অনুপ মণ্ডল নামে এক কনস্টেবলের মাথা ফেটে যায়। আহত হন দুই এএসআই মুকলেসুর রহমান ও অলোক মুখোপাধ্যায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে গাড়ির মধ্যেই রাইফেল, হেলমেট এবং লাঠি রেখে পালিয়ে যায় পুলিশ। কালিয়াচক থানার থেকে বাড়তি পুলিশ গিয়ে শূন্যে চার রাউন্ড গুলি চালালে উত্তেজিত জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আহত পুলিশ কর্মীদের সীলামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাত জন ধরা পড়েছে। এলাকায় টহলদারি চলছে।’’ পুলিশের উপরে হামলার ঘটনায় নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রসূনবাবু।

নওদা যদুপুরের তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি তথা জাকিরের ঘনিষ্ঠ গোলাম কিবরিয়ার দাবি, বকুলের দলবলই পুলিশের উপরে হামলা চালিয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে ওই পঞ্চায়েতের প্রধান তথা বকুলের ভ্রাতৃবধূ ফারহানা বিবি বলেন, ‘‘পুলিশ শুধু বকুলকেই গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। জাকির কিন্তু বহাল তবিয়তেই রয়েছে।’’

কিন্তু এত কিছুর পরেও বকুল-জাকিরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন?
জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী মৌসম বেনজির নূরের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল নেতারা দুষ্কৃতীদের মদত দিচ্ছে। তাই পুলিশ কিছু করতে পারছে না।’’ তৃণমূলের একাংশের দাবি, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের ঘনিষ্ঠ বকুল। আর আবু নাসের খানের কাছের লোক জাকির। তাই পুলিশ কিছু করতে পারছে না। যদিও সাবিত্রী দেবী ও আবু নাসের খান চৌধুরী তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

son abducted Kaliachak
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy