Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Dengue

জ্বরে কাবু ডাক্তারই, কার সেবা কে করবে? কুল পাচ্ছে না দেগঙ্গা

মুখের কথা শেষ হতে না হতেই উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাঘবেশ মজুমদার জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘ডেঙ্গি কিনা এখনই বলা যাবে না। তবে জ্বর এসেছে।’’

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
দেগঙ্গা ও গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৫২
Share: Save:

যে হাসপাতালে গত দু’মাস ধরে রোগী দেখছিলেন ডাক্তারবাবু, মঙ্গলবার সেখানেই জ্বর গায়ে কাঁপতে কাঁপতে ভর্তি হতে হয়েছে তাঁকে। বুধবার সেখান থেকে গাইঘাটার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক কৌশিক রায়কে পাঠানো হয়েছে এনআরএস হাসপাতালে।

হলটা কী ডাক্তারবাবুর?

মুখের কথা শেষ হতে না হতেই উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাঘবেশ মজুমদার জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘ডেঙ্গি কিনা এখনই বলা যাবে না। তবে জ্বর এসেছে।’’

দেগঙ্গায় জ্বরে ভুগে গত দু’মাসে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। সেখানকার বিএমওএইচ সুরজ সিংহের গায়েও জ্বর। দিন দু’য়েক ধরে ওষুধপত্র, ওআরএস খেয়ে এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

পরিস্থিতি এমনই, লোকে বলছে, খোদ ওঝাই যদি কাবু হয়, তবে ভূত তাড়াতে ভরসা করব কাকে?

দেগঙ্গার বাসিন্দা আবু হাসান বলেন, ‘‘জ্বরে ভুগে গোটা গ্রামটা কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে এসেছে। ছেলেপিলের খেলাধূলো বন্ধ। পাড়ার আড্ডায় জান নাই। রাজনীতির কচকচিও ভুলতে বসেছে লোকে। সবার মুখে শুধু জ্বর আর জ্বর।’’ রফিক মণ্ডলের কথায়, ‘‘কোনও কোনও বাড়িতে লোক হয় তো ছ’জন। পাঁচজনেরই গায়ে জ্বর। কে কাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে, তার ঠিক নেই।’’ বৃহস্পতিবার বিশ্বনাথপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, বেলা ৪টেতেও কয়েকশো লোকের লাইন। হাসপাতালে ঢোকার মুখে আর দাঁড়াতে পারলেন না জাহানারা বিবি। ধপাস করে বসে পড়লেন। লোকজন ধরাধরি করে মাথায় জল ঢালতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। হাসপাতালের চিকিৎসক কৃষ্ণগোপাল শাসমল রোগী দেখতে দেখতেই বললেন, ‘‘সকাল থেকে মনে হয় হাজারখানেক রোগী দেখেছি। চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারছি না। দু’মাস ধরে চলছে এই পরিস্থিতি। আর
পেরে উঠছি না।’’

গ্রামে বহু বাড়িতে উনুন জ্বলছে না, জানালেন রহিমা মণ্ডল। দোকানপাট খোলেননি অনেকে। জ্বরে ভুগে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বহু লোক শহরের দিকে আত্মীয়-পরিজনের বাড়িতে উঠছেন তল্পিতল্পা নিয়ে। দেগঙ্গা-সহ উত্তর ২৪ পরগনার গ্রামীণ এলাকায় বৃহস্পতিবারও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে জ্বরে ভুগে। পাড়ার মোড়ে মোড়ে জটলা। তারই মধ্যে থেকে ভেসে এল মন্তব্য, ‘‘কোন ঘর থেকে কখন কান্নার রোল উঠবে, কেউ জানে না।’’

কেএম চাঁদপুর গ্রামের আব্দুল মাজেদের বয়স পঁচাত্তর ছুঁয়েছে। বললেন, ‘‘১৯৫০ সালে একবার কলেরায় গাঁ উজাড় হয়ে গিয়েছিল। তারপর আর এমন কাণ্ড দেখিনি।’’

সহ প্রতিবেদন: সীমান্ত মৈত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE