বীরশিবপুরের গরুহাট। ছবি: সুব্রত জানা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির বিবাদে উলুবেড়িয়ার বীরশিবপুরের গরুহাট থেকে রাজস্ব আদায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যে বিবাদে না চাইতেও জড়িয়ে গিয়েছে শাসকদলেরই এক সাংসদ ও মন্ত্রীর নাম। শুধু তাই নয়, হাট চালানোর জন্য লাইসেন্স দেয় নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি। এই বিবাদের জেরে চলতি বছরে লাইসেন্স নবীকরণও করানো হয়নি। এই অবস্থায় কার্যত বিনা লাইসেন্সে চলছে হাটটি। ফলে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি, যা রাজ্য কৃষি বিপণন দফতরের অধীন। ফলে ক্ষতি হচ্ছে সরকারি রাজস্বেরও।
কৃষি বিপণন দফতরের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে কম রাজস্ব দিয়ে আসছিলেন হাটের মালিক। এ বছর থেকে তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বর্ধিত রাজস্ব আদায় করতে গেলে হাট মালিক এবং এখানকার ব্যবসায়ীরা বাধা দেন। আর এখানেই উঠে এসেছে উলুবেড়িয়ার সাংসদ সুলতান আহমেদের নাম। দফতর সূত্রের খবর, হাট মালিক ও ব্যবসায়ীদের মদত দিচ্ছেন সুলতান আহমেদ। সুলতান অবশ্য বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীরা বর্ধিত রাজস্ব দিতে অনিচ্ছুক নন। তবে অনেক বেশি টাকা চাওয়া হচ্ছে। এই টাকা দিতে হলে তো গরুহাটই উঠে যাবে। কৃষি বিপণন দফতরকে আমি অনুরোধ করেছি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন করে রাজস্বের হার ঠিক করা হোক।’’ এ বিষয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি কৃষি বিপণন দফতরের মন্ত্রী অরূপ রায়।
ঠিক কী হয়েছিল বীরশিবপুর গরুহাটায়?
হাওড়া জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময়ে হাটমালিক মাসে কুড়ি হাজার টাকা করে রাজস্ব জমা দিতেন বাজার সমিতিকে। এ বাবদ বছরে সরকার রাজস্ব পেত ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এর বিনিময়ে বছরে একবার করে হাটের লাইসেন্স নবীকরণ করা হত। রাজ্য জুড়ে যে সব পশুহাট আছে সেগুলির রাজস্ব বাড়ানোর জন্য কৃষি বিপণন দফতর ২০১৪ সালে সিদ্ধান্ত নেয়। তার ভিত্তিতে ঠিক হয় হাটে যত টাকার ব্যবসা হবে তার এক শতাংশ হারে রাজস্ব দিতে হবে। সমীক্ষা করে জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি দেখে, বীরশিবপুর গরুহাটে এই নিয়ম মেনে রাজস্ব বাড়ালে তার পরিমাণ হবে বছরে ২ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। একটি বেসরকারি সংস্থাকে গরুহাট থেকে এই টাকা তোলার জন্য বরাত দেওয়া হয়।
গত জানুয়ারি মাসে তারা রাজস্ব আদায় করার জন্য হাটে আসে। একেকটি গাড়ি পিছু তারা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা আদায় করতে শুরু করে। এতেই বেঁকে বসেন ব্যবসায়ীরা। প্রথম দিনেই বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের মারপিট বেধে যায়। সংস্থার কর্মীদের আটকে রাখেন ব্যবসায়ীরা। পুলিশ এসে তাঁদের উদ্ধার করে। ব্যবসায়ীরা দ্বারস্থ হন সাংসদ সুলতান আহমেদের। রাজস্ব আদায় বন্ধ হয়ে যায়। হাটে একটি কার্যালয় খুলেছিল ওই বেসরকারি সংস্থা। বন্ধ হয়ে যায় সেটিও।
হাটমালিক আসপিয়ার আলি বলেন, ‘‘হাটে যে সব ব্যবসায়ী আসছেন তাঁদের গাড়ি আটকে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছিল। এর ফলে ব্যবসায়ীরাই রুখে দাঁড়ান। তাঁরা হুমকি দিচ্ছিলেন এইভাবে রাজস্ব দিতে হলে তাঁরা আর হাটে ব্যবসা করতে আসবেন না। তা হলে আমাদের হাট চলবে কী করে?’’ এরপরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি সুলতান আহমেদের কাছে গিয়েছিলেন বলে জানান আসপিয়ার। তিনি বলেন, ‘‘বাড়তি রাজস্ব দিতে আমরা রাজি। তা বলে এত টাকা? সবার সঙ্গে কথা বলে রাজস্বের হার ঠিক করতে হবে। তার পরিমাণ এমন হওয়া চাই যাতে আমরা দিতে পারি।’’ কৃষি বিপণন দফতরের কর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা হাটের ব্যবাসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সমীক্ষা করেই বর্ধিত রাজস্বের হার ঠিক করা হয়েছে। সারা রাজ্যেই পশুহাট থেকে বর্ধিত হারে রাজস্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
বর্তমানে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে, বর্ধিত হারে রাজস্ব নেওয়া তো হচ্ছেই না, উল্টে পুরনো হারেও রাজস্ব নেওয়া বন্ধ রয়েছে। আসপিয়ার বলেন, ‘‘আমরা পুরনো হারে রাজস্ব দিতে চাইছি। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি তা নিচ্ছে না। আমাদের লাইসেন্সও নবীকরণ করা হয়নি।’’ কৃষি বিপণন দফতরের এক কর্তা জানান, পুরনো হারে আর নয়, বর্ধিত হারেই রাজস্ব নেওয়া হবে। তবে কবে থেকে বর্ধিত হারে রাজস্ব নেওয়া হবে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি ওই কর্তা। তবে দফতরেরই অন্য একটি সূত্রের খবর, সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে যাতে এ নিয়ে কোনও ঝামেলা না হয় তাই আপাতত বিষয়টি ঠান্ডাঘরে পাঠানো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy