Advertisement
E-Paper

কারখানায় কর্তাদের মার, অভিযুক্ত তৃণমূল

উৎপাদন এখনও শুরুই হয়নি। সবে কারখানা তৈরি হচ্ছে। সেই কাজেই এলাকার লোকেদের লাগানোর দাবি তুলে দাদাগিরি করার অভিযোগ উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের কাজ দেওয়ার দাবিতে হলদিয়ায়, সিন্ডিকেটের দাপট অক্ষুণ্ণ রাখতে আসানসোল খনি-শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলের দাদাগিরি এ রাজ্য আগেও দেখেছে। এ বার বাঁকুড়ার বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলে তারই পুনরাবৃত্তি হল। কারখানার ভিতরে ঢুকে শিল্পসংস্থার আধিকারিকদের বাঁশ দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের কিছু লোকজনের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৫ ০৩:০৮

উৎপাদন এখনও শুরুই হয়নি। সবে কারখানা তৈরি হচ্ছে। সেই কাজেই এলাকার লোকেদের লাগানোর দাবি তুলে দাদাগিরি করার অভিযোগ উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে।

স্থানীয়দের কাজ দেওয়ার দাবিতে হলদিয়ায়, সিন্ডিকেটের দাপট অক্ষুণ্ণ রাখতে আসানসোল খনি-শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলের দাদাগিরি এ রাজ্য আগেও দেখেছে। এ বার বাঁকুড়ার বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলে তারই পুনরাবৃত্তি হল। কারখানার ভিতরে ঢুকে শিল্পসংস্থার আধিকারিকদের বাঁশ দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের কিছু লোকজনের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ নিতে পুলিশ প্রথমে টালবাহানা করলেও রাতে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শনিবার বড়জোড়ার ঘুটগোড়িয়ায় একটি নির্মীয়মাণ ফেরো-অ্যালয় কারখানায় ঘটনাটি ঘটে। কারখানাটির নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের মুখ। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই উৎপাদন চালু হওয়ার কথা। এলাকার ২২ জন শ্রমিককে গাড়ি থেকে সিমেন্ট ও রড নামানোর কাজে লাগানো হয়েছে। সম্প্রতি কারখানাটিতে কিছু দামি যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।

কারখানার কমার্শিয়াল ম্যানেজার রাজেশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ঠিকাদারের মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিকদের দিয়ে কোটি কোটি টাকা মূল্যের ওই যন্ত্রপাতি নামানোর কাজ করানো হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় শ্রমিকেরাও ওই সব যন্ত্র নামাবেন বলে দাবি তোলেন।’’ তাতে যন্ত্রপাতির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় তাঁরা রাজি হননি। তাঁদের অভিযোগ, তাতে খেপে গিয়ে গত কয়েক দিন ধরে কারখানার মূল দরজা আটকে রেখেছিল আইএনটিটিইউসি সমর্থক শ্রমিকেরা। কয়েক দিন তাঁরা কারখানার গাড়ি ঢুকতে-বেরোতেও দেননি। কিছু দক্ষ শ্রমিককে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ।

এ দিন সকাল থেকে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। রাজেশবাবুর অভিযোগ, আন্দোলনরত শ্রমিকেরা মেজাজ চড়াচ্ছিলেন। নানা হুমকিও দিচ্ছিলেন। ঝামেলা হতে পারে বুঝে দুপুরেই তিনি পুলিশকে ফোন করেন। কিন্তু পুলিশ আসে অনেক দেরিতে। তত ক্ষণে ওই শ্রমিকেরা কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীকে মারধর করে জোর করে দরজা খুলিয়ে কারখানার ভিতরে ঢুকে পড়ে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওরা বাঁশ দিয়ে আমায় পেটায়। প্রাণে মারার হুমকিও দেয়। নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর করে গুরুত্বপূর্ণ নথি ছিঁড়ে ফেলে দেয়।”

তাণ্ডবকারীরা চলে যাওয়ার পরে পুলিশ আসে। রাজেশবাবুর ক্ষোভ, অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ প্রথমে তাঁদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে শরীরের জখমের ডাক্তারি রিপোর্ট নিয়ে আসতে বলে। থানা থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলে সেখান থেকে তাঁদের পুলিশের লিখিত নির্দেশ আনতে বলা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে থানায় এলে পুলিশ উল্টে আমাদেরই আটক করে বিকেল পর্যন্ত থানায় বসিয়ে রাখে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, তত ক্ষণে আধিকারিকদের বিরুদ্ধে শ্রমিকেরাই পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন।

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার প্রথমে বলেছিলেন, “বিষয়টি জানি না। কী হয়েছে, খোঁজ নিচ্ছি।” পরে তিনি দাবি করেন, বিকেল পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষ এই মর্মে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। যদিও রাজেশবাবু জনান, পুলিশের কাছে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘এ দিনের মারধরের ঘটনায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের লোকেরা যুক্ত। এ সবের পিছনে স্থানীয় তৃণমূল নেতা গণেশ মণ্ডলের ইন্ধন রয়েছে।’’

বিকেলে থানায় গিয়ে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বড়জোড়ার তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুখেন
বিদ এবং আইএনটিটিইউসি নেতা অলোক মুখোপাধ্যায়। পরে সুখেনবাবু বলেন, “শ্রমিকেরা দাবি নিয়ে আন্দোলন করতেই পারেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সাফ নির্দেশ, কারখানার দরজা বন্ধ করে কোনও আন্দোলন চলবে না।” আইএনটিটিইউসি অবশ্য মারধরের অভিযোগ মানতে চায়নি। উল্টে, অভিযুক্ত গণেশবাবু ও অলোকবাবুর দাবি, “শ্রমিকদের অভিযোগ ছিল, কারখানা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিনের পাওনা মেটাচ্ছেন না। তাই টাকা চাইতে তাঁরা কারখানায় ঢুকেছিলেন। কাউকে মারা হয়নি।’’ রাতে অবশ্য পুলিশ সুপারের নির্দেশে পুলিশ ধনঞ্জয় পাল নামে দু’জন, তপন পাল, আনন্দ পাল ও জীবন ঘোষ— পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে। সকলেই আইএনটিটিইউসি সমর্থক বলে পরিচিত।

Barjora factory Trinamool Officers haldia INTTUC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy