জলপাইগুড়ি জেলা গ্রন্থাগার। ছবি: সন্দীপ পাল।
প্রবীণদের আর বই পড়তে গ্রন্থাগারে যেতে হবে না৷ বরং গ্রন্থাগারই যাবে প্রবীণদের কাছে৷
বই পিপাসু, অথচ বয়সের ভারে গ্রন্থাগারে যেতে অক্ষম—এমন মানুষদের সুবিধার্থে এ বার এমন পরিষেবা চালু হতে চলেছে জলপাইগুড়িতে৷ যে পরিষেবায় বাড়িতে বসেই নিজের পছন্দের বই পেয়ে যাবেন প্রবীণ নাগরিকরা৷ জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, উত্তরবঙ্গ তো বটেই, এমনকি গোটা রাজ্যের কোথাওই এমন ব্যবস্থা চালু নেই—যা জলপাইগুড়িতে চালু হতে যাচ্ছে৷ তবে আপাতত এই পরিষেবা জলপাইগুড়ি পুর এলাকাতেই চালু হবে ৷
জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত জেলাশাসক সুদীপ মিত্রের কথায়, “জলপাইগুড়িতে অনেক প্রবীণ নাগরিক রয়েছেন, যাঁরা এক সময় নিয়মিত গ্রন্থাগারে গিয়ে বই পড়তেন৷ কিন্তু বয়সের ভারে আজ তাঁদের সেই উপায় নেই৷ সেই মানুষদের কথা চিন্তা করেই এই ব্যবস্থা৷ জলপাইগুড়ি পুর এলাকায় এই পরিষেবা সফল হলে নিশ্চয়ই আগামী দিনে জেলার অন্যত্রও এর রূপায়ণের কথা ভাবা হবে৷ প্রবীণ নাগরিকদের জন্য রাজ্যে আর কোথাও এমন উদ্যোগ আগে হয়েছে বলে জানা নেই ৷”
নতুন এই পরিষেবায় যত বেশি সম্ভব প্রবীণ নাগরিককে সামিল করতে ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ি পুর এলাকায় লিফলেট বিলি শুরু করেছেন জেলা গ্রন্থাগারের কর্মীরা৷ লিফলেট দেখে এই পরিষেবা নিতে ইচ্ছুক জলপাইগুড়ির প্রবীণ নাগরিকরা জেলা গ্রন্থাগারে যোগাযোগ করতেও শুরু করেছেন৷ তাঁদের মধ্যেই একজন চিকিৎসক রাধারমণ বণিক৷ এক সময়ে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তা হিসাবে রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় কাটিয়েছেন৷ এই মুহুর্তে জলপাইগুড়ির রায়কত পাড়ায় নিজের বাড়িতে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন৷ রাধারমণবাবুর কথায়, “বই হল আমার জীবনের সঙ্গী৷ চাকরি জীবনেও কাজের ফাঁকে যখন এতটুকু সুযোগ পেয়েছি, বই পড়ে কাটানোর চেষ্টা করেছি৷ আর জলপাইগুড়ি জেলা গ্রন্থাগার তো এ বার আমায় বাড়িতে বসেই বই পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছে৷ এর থেকে ভাল উদ্যোগ আর হতেই পারে না৷” রাধারমণবাবুর মতোই এই পরিষেবা নিতে ইতিমধ্যেই জেলা গ্রন্থাগারে যোগাযোগ করেছেন জলপাইগুড়ির বাসিন্দা অপরা মজুমদার৷ অপরাদেবীর কথায়, “স্কুলে নিজের শিক্ষকতা ও স্বামীর চাকরির সূত্রে অনেক জায়গায় থাকতে হয়েছে৷ যেখানেই গিয়েছি প্রথমেই সেখানকার গ্রন্থাগারের সদস্য হয়ে বইতে ডুবে পড়েছি৷ কিন্তু বয়সের ভারে আজ আর কোনও গ্রন্থাগারে যেতে পারিনা৷ তার জন্য খুব কষ্টও হত৷ কিন্তু ভাবতেই পারিনি জলপাইগুড়ি জেলা গ্রন্থাগার এমন ভাবে উদ্যোগী হবে ৷”
জলপাইগুড়ি জেলা গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক দেবাশিস মিশ্র জানিয়েছেন, “জলপাইগুড়ি পুর এলাকায় আমাদের ছড়ানো লিফলেট দেখে অনেক প্রবীণ নাগরিকই টেলিফোনে যোগাযোগ করে এই পরিষেবা নিতে চাইছেন৷ এই মাসেরই কুড়ি তারিখ থেকে তাঁদের বাড়িতে আমাদের কর্মীরা গিয়ে গ্রন্থাগারের সদস্য করবেন৷ তারপর আমাদের গ্রন্থাগারে বইয়ের ভাণ্ডারের একটা তালিকা তাঁদের দেওয়া হবে৷ এবং সেই ভাণ্ডার থেকে তাদের যে যে বই পছন্দ, তা তাঁদের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসা হবে৷ এবং সাত দিন পর আমাদের কর্মীরা আবার তাঁদের চাহিদা মতো নতুন বই দিয়ে পুরানো বইটি ফেরত নিয়ে আসবেন৷” জেলা গ্রন্থাগার সূত্রের খবর, নতুন এই পরিষেবার জন্য প্রবীণ নাগরিকদের গ্রন্থাগারের সদস্য হওয়ার জন্য মাত্র পঞ্চাশ টাকা খরচ করতে হবে ৷ বছরে চাঁদা দিতে হবে মাত্র চব্বিশ টাকা ৷
তবে জেলা গ্রন্থাগারের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীরাই সাইকেলে চেপে এই কাজ করবেন। কিন্তু সেই কর্মীর সংখ্যা মাত্র ছয়৷ জেলা গ্রন্থাগারের কর্তারা বলছেন, এই পরিষেবা সদস্য সংখ্যা বেশি হলে রোটেশন পদ্ধতিতে সপ্তাহের একটি দিনের জন্য একটি এলাকাকে বেছে নিয়ে পরিষেবা দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy