Advertisement
০৬ মে ২০২৪

ডিকিতে পড়ে লাখ টাকা, ফেরালেন ট্যাক্সিচালক

মাত্র ৫০ টাকার জন্য ট্যাক্সি চালকের সঙ্গে বচসা বেধেছিল সওয়ারির। রেগেমেগে সেই ট্যাক্সি থেকে নেমেও গিয়েছিলেন স্নেহাশিস ভট্টাচার্য। পরে সেই ট্যাক্সি চালকের দৌলতেই তিনি ফিরে পেলেন এক লক্ষ টাকার ব্যাগটা।

স্নেহাশিস ভট্টাচার্যকে টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছেন ট্যাক্সিচালক জয়ন্ত ভড় (বাঁ দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।

স্নেহাশিস ভট্টাচার্যকে টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছেন ট্যাক্সিচালক জয়ন্ত ভড় (বাঁ দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়
ডোমজুড় শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০৯
Share: Save:

মাত্র ৫০ টাকার জন্য ট্যাক্সি চালকের সঙ্গে বচসা বেধেছিল সওয়ারির। রেগেমেগে সেই ট্যাক্সি থেকে নেমেও গিয়েছিলেন স্নেহাশিস ভট্টাচার্য। পরে সেই ট্যাক্সি চালকের দৌলতেই তিনি ফিরে পেলেন এক লক্ষ টাকার ব্যাগটা।

পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদার বাসিন্দা স্নেহাশিসবাবু বাবা রাধাকৃষ্ণবাবু ও মা বন্দনাদেবীকে নিয়ে এ দিন নিজেদের গাড়ি করেই কলকাতার গড়িয়া যাচ্ছিলেন। ডোমজুড়ের অঙ্কুরহাটির কাছে তাঁদের গাড়িটি বিকল হয়ে যায়। চালককে গাড়ি সারাতে বলে ট্যাক্সি ভাড়া করেন স্নেহাশিসবাবুরা। স্নেহাশিসবাবুদের সঙ্গে ৫০ কেজি চালের বস্তা থাকায় ৫০ টাকা বেশি দাবি করেন ট্যাক্সি চালক জয়ন্ত ভড়। স্নেহাশিসবাবু রাজি হননি। রেগেমেগেই তিনি বলেন, ‘‘বস্তার আবার ভাড়া কীসের?’’ বাবা-মাকে ট্যাক্সি থেকে নামিয়েও নেন তিনি। ততক্ষণে তাঁদের চালক গাড়ি মেরামত করে ফেলেছেন। ফলে, নিজেদের গাড়িতেই করে গড়িয়া রওনা দেন স্নেহাশিসবাবুরা।

স্নেহাশিসবাবুরা চলে যাওয়ার পরে আর এক জন যাত্রী জয়ন্তবাবুর ট্যাক্সিতে ওঠেন। তাঁর ব্যাগ ডিকিতে রাখতে গিয়েই চোখ কপালে ওঠে কলকাতার মানিকতলা থানার বাগমারি রোডের বাসিন্দা জয়ন্তবাবু। সেখানে রাখা ব্যাগে থরে থরে সাজানো হাজার ও পাঁচশো টাকার নোট। টাকা গোনেননি ওই ট্যাক্সি চালক। সোজা গিয়ে কতর্ব্যরত সিভিক ভলেন্টিয়ার্সদের সব জানান তিনি। তারপর ব্যাগ নিয়ে যান ডোমজুড় থানায়। ব্যাগে থাকা কাগজপত্রে স্নেহাশিসবাবু ফোন নম্বরটা ছিল। ডোমজুড় থানার আইসি সুবীর রায় তাঁকে ফোন করে সব জানান। তড়িঘড়ি বাবাকে নিয়ে গড়িয়া থেকে ডোমজুড় থানায় চলে আসেন ব্যবসায়ী স্নেহাশিসবাবু।

পরে স্নেহাশিসবাবু বলেন, ‘‘ছেলে গড়িয়ায় পড়ে বলে ওখানে ভাড়া থাকেন আমার স্ত্রী-বাবা-মা। সম্প্রতি সেখানে ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার অগ্রিম দিতেই ওই এক লক্ষ টাকা নিয়ে যাচ্ছিলাম।’’ তিনি জানান, গড়িয়ায় পৌঁছে তিনি দেখেন, টাকার ব্যাগটা নেই। কী করবেন, কোথায় খুঁজবেন বুঝে ওঠার আগেই ডোমজুড় থানা থেকে ফোনটা যায়।

এ দিকে, টাকার ব্যাগটা থানায় পৌঁছে দিয়ে ভাড়া নিয়ে সল্টলেকে চলে যান জয়ন্তবাবু। স্ত্রী-মেয়ে নিয়ে অভাবের সংসারে তিনিই যে একমাত্র রোজগেরে। জয়ন্তবাবু আগে অটো চালাতেন। তারপর অন্যের গাড়িও চালিয়েছেন। মাস দশেক আগে ঋণ নিয়ে ট্যাক্সি কেনেছেন। মাসে ১১ হাজার টাকা করে ইএমআই দিতে হয়। ওই ট্যাক্সি চালকের কথায়, ‘‘বাপ-ঠাকুরদার আমলের দোতলা বাড়িটা আছে বলে একার রোজগারে সংসারটা টেনেটুনে চলছে।’’

স্নেহাশিসবাবুরা থনায় আসার পরে ডোমজুড় থানা থেকে ফোন করে ডেকে পাঠানো হয় জয়ন্তবাবুকেও। তাঁকে দেখে দু’টি হাত জড়িয়ে ধরেন স্নেহাশিসবাবু। জিভ কেটে বলেন, ‘‘আপনি সজ্জন ব্যক্তি। মাত্র ৫০ টাকার জন্য আপনার সঙ্গে আমি ঝগড়া করেছি ভাবতেই খুব খারাপ লাগছে এখন।’’

এ বার ডোমজুড় থেকে গড়িয়া ফেরার জন্য জয়ন্তবাবুর ট্যাক্সিতেই চাপেন স্নেহাশিসবাবুরা। নির্দিষ্ট ভাড়া তো বটেই, তাঁকে হাজার টাকাও দেন তিনি। স্নেহাশিসবাবুর কথায়, ‘‘সততার দাম যদিও এ ভাবে চুকনো সম্ভব নয়। এটা সৌজন্য মাত্র।’’ ডোমজুড় থানার পুলিশও সততার জন্য পুরস্কৃত করেছে ওই ট্যাক্সি চালককে।

দিনের শেষে জয়ন্তবাবুর ঠোঁটের কোণে সলজ্জ হাসি। বলছেন, ‘‘যা করেছি তা তো আমার কর্তব্য। এ নিয়ে আলাদা করে বলার কী আছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

taxi driver refund Domjur saltlake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE