প্রতীকী ছবি।
বাঁকুড়ার ইন্দ্রজিৎ রুইদাস। ২০১৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৯৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল। এখন বিজ্ঞান শাখায় পড়াশোনা করছে।
বাঁকুড়ারই ঋতম পাত্র চলতি বছরে মাধ্যমিকে পেয়েছে ৯২ শতাংশ নম্বর। এখন বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছে।
মুস্তাক আহমেদের বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলায়। চলতি বছরে মাধ্যমিকে ৯১ শতাংশ নম্বর পেয়ে মুস্তাকও পড়াশোনা করছে বিজ্ঞান নিয়ে।
সাফল্যে সাদৃশ্য তো আছেই। সেই সঙ্গে এদের মিল আরও একটা জায়গায়। পড়াশোনার ক্ষেত্রে এরা সকলেই বিপুল সাহায্য পেয়েছে ‘টিচার-অন-কল’ প্রকল্প ‘সহজপাঠ’ থেকে। প্রায় আড়াই বছর আগে রাজ্যের শিক্ষা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সমীর ব্রহ্মচারী এবং কর্পোরেট জগতের কয়েক জন মিলে তৈরি করেছিলেন ‘সহজপাঠ’। সম্পূর্ণ অলাভজনক এই বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পড়ুয়ারা পৌঁছে যাচ্ছেন অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে। সমীরবাবু জানাচ্ছেন, এ-পর্যন্ত প্রায় এক লক্ষ ফোন-কল পেয়েছেন তাঁরা। যারা ফোন করছে, তাদের মধ্যে রয়েছে রাজ্যের ৭৯৬টি স্কুলের পড়ুয়া। গ্রামীণ পড়ুয়াদের ফোনই আসে বেশি। সব থেকে বেশি ফোন আসে পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে। সমীরবাবু বলেন, ‘‘যে-সব পড়ুয়া ফোন করে, তাদের বেশির ভাগই অভাবী ঘরের। প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া অনেকেই।’’ এ রাজ্যে গ্রামের অধিকাংশ স্কুলেই শিক্ষকের অভাব খুব সাধারণ ঘটনা। গৃহশিক্ষক রাখার আর্থিক সামর্থ্য অনেকেরই
নেই। সেই সব পড়ুয়ার কাছে পৌঁছতে পারছে ‘সহজপাঠ’। প্রথমে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ারা টোল-ফ্রি নম্বরে ফোন করে শিক্ষকদের সাহায্য নিতে পারত। এখন দশম শ্রেণির পড়ুয়ারাও পারে। ইংরেজি, অঙ্ক, ভৌতবিজ্ঞান আর জীবনবিজ্ঞান— এই চারটি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয় ফোনে। ফোনের অন্য প্রান্তে থাকেন ৪৫ জন অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকা। সমীরবাবু জানান, আগের নম্বর বদলেছে। এখন ফোন করতে হয় ৯৯৮-৩৯৮-৮০০৩ নম্বরে।
মাধ্যমিকে ৯৩ শতাংশ নম্বর পাওয়া ইন্দ্রজিৎ জানাল, তার বাবা পোল্ট্রি ফার্মের কর্মী। তাকে একাধিক গৃহশিক্ষকের কাছে পাঠানোর সামর্থ্য নেই তাঁর। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় সহজপাঠের খবর পেয়ে সে ফোন করেছিল। অঙ্ক, ইংরেজি, ভৌতবিজ্ঞান ও জীবনবিজ্ঞানের তালিম পেয়েছে ফোনেই। বাঁকুড়ার পাথরমোড়া হাইস্কুলের ছাত্র ইন্দ্রজিৎকে বইপত্র কিনতেও সাহায্য করা হয়েছে।
বাঁকুড়ার আরালডিহি গ্রামের ছেলে ঋতম ৯২ শতাংশ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করে এ বছর ভর্তি হয়েছে বাঁকুড়া জেলা স্কুলে। ঋতমের বাবা ক্ষুদ্র চাষি। পাশাপাশি খবরের কাগজ বিক্রি করেন। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে সহজপাঠের ফোনের পরামর্শ খুব কাজে লেগেছে বলে জানাল ঋতম। মাধ্যমিক পাশের পরে বইপত্র কেনার ক্ষেত্রেও সহজপাঠের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছে সে। মুস্তাকের বাবা নাজমুল হক ভাগচাষি। মুস্তাকের মা মাহবুবা বেগম জানান, গৃহশিক্ষক রাখার সঙ্গতি তাঁদের নেই। মাধ্যমিকে ছেলের ভাল ফলের পিছনে খুব কাজে লেগেছে সহজপাঠের সাহায্য।
সমীরবাবু জানান, শুধু পড়ুয়া নয়, অনেক গৃহশিক্ষকও ফোন করেন। নিজেদের পড়ানোর বিষয়ে তাঁদের প্রশ্ন থাকে। তাই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ফোনে গৃহশিক্ষকদের জিজ্ঞাসারও জবাব দেওয়া হবে। ‘‘এই সব গৃহশিক্ষক যদি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ভাল ভাবে যদি জানতে পারেন, আখেরে ছাত্রছাত্রীদেরই লাভ হবে,’’ বলছেন সমীরবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy