Advertisement
০৩ মে ২০২৪

মিউটেশন ছাড়া জমি বা বাড়ি বিক্রি নয়

নতুন নিয়মবিধিতে নিজের নামে জমি মিউটেশন না-করিয়ে কোনও জমি বা বাড়ি বিক্রি করা যাবে না। মিউটেশন সার্টিফিকেট না-থাকলে করা যাবে না রেজিস্ট্রেশনও। নতুন বছরেই রাজ্যে এই বিধি চালু হয়ে যেতে পারে বলে নবান্নের খবর।

সোমনাথ চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:০৫
Share: Save:

লক্ষ্য এক ঢিলে অন্তত তিনটি পাখি মারা। ‘বাধ্যতামূলক মিউটেশন’ বা নামজারির নতুন বিধি জারি করে সেই উদ্দেশ্য পূরণ করতে চাইছে রাজ্য।

নতুন নিয়মবিধিতে নিজের নামে জমি মিউটেশন না-করিয়ে কোনও জমি বা বাড়ি বিক্রি করা যাবে না। মিউটেশন সার্টিফিকেট না-থাকলে করা যাবে না রেজিস্ট্রেশনও। নতুন বছরেই রাজ্যে এই বিধি চালু হয়ে যেতে পারে বলে নবান্নের খবর।

এই বিধি এনে সরকার যে-তিনটি লক্ষ্য পূরণ করতে চাইছে, সেগুলি হল:

• জমি-বাড়ি (ফ্ল্যাট নয়) কেনাবেচায় জালিয়াতি ঠেকানো।

• হাতবদলের সঙ্গে সঙ্গেই জমির ডিজিটাল ম্যাপ ‘আপডেট’ বা হালতামামি করা।

• বাধ্যতামূলক এই মিউটেশনকে হাতিয়ার করে আয় বাড়বে। অর্থাৎ রাজ্যের কোষাগারে বাড়তি কিছু অর্থ সংগ্রহ অন্যতম লক্ষ্য। নতুন বন্দোবস্তের জন্য জেলায় জেলায় প্রস্তুতিও শুরু করেছে ভূমি দফতর। তবে কলকাতা পুর এলাকা থাকছে এই বিধির বাইরে।

আরও পড়ুন: কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না আবাস যোজনার, অভিযোগ নবান্নের

নবান্নের ভূমি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৫৫ সালের ভূমি সংস্কার আইনেও প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। এবং সেই সংশোধনী অনুমোদন করানো হবে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনেই। ইংরেজি নতুন বছরে জমি কেনাবেচার কাজ হবে এই নতুন বিধি মেনেই।

ভূমি দফতরের এক অফিসার জানান, ধরা যাক, কারও বাবার নামে ১০ কাঠা জমি আছে। বাবার মৃত্যু হয়েছে। জমির দলিল বাবার নামে। উত্তরাধিকার সূত্রে সেই জমির মালিক হয়তো চার জন। তাঁদের মধ্যে ‘পার্টিশন ডিড’-এর ভিত্তিতে এক-এক জনের ভাগে পড়ল আড়াই কাঠা জমি। প্রচলিত নিয়মে সেই পার্টিশন ডিড অনেক ক্ষেত্রেই ছেলেমেয়েরা রেজিস্ট্রি করান না। অথচ ভোগদখল করতে থাকেন। কোনও ভাই নিজের অংশের জমি বেচতে চাইলে পার্টিশন ডিড এবং পঞ্চায়েত বা পুরসভা থেকে পাওয়া ‘ওয়ারিশন সার্টিফিকেট’ জমা দিয়ে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রি করে বিক্রি করতে হয়। যিনি কেনেন, তিনি নতুন কেনা জমির মিউটেশন করিয়ে রেকর্ডে নিজের নাম ঢোকান।

কিন্তু নতুন বিধি বলছে, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে উত্তরাধিকারীকে আগে তাঁর ভাগের জমি মিউটেশন করাতে হবে। জমি বাবার নাম থেকে তাঁর (ছেলে বা মেয়ের) নামে আসার পরে তবেই তিনি জমি বিক্রি করার অধিকার পাবেন। রেজিস্ট্রি করাতে পারবেন।

জমি যদি বিক্রেতার নিজের নামে না-ই থাকে, তা হলে তিনি সেটা বিক্রি করছেন কী ভাবে?

ভূমি দফতরের এক প্রবীণ অফিসারের বক্তব্য, গাঁ-গঞ্জে বড় মহাজনেরা বহু ক্ষেত্রে পারস্পরিক পরিচিতির ভিত্তিতেই জমি কিনে নেন। অভাবী বিক্রির সুযোগও নেন অনেকে। মিউটেশনের ধারও ধারেন না। কারণ পরিচিতির সূত্রে তিনি জানেন, জমির মালিক ওই বিক্রেতাই।

ভূমি দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, নতুন নিয়মবিধি চালু হলে এক দিকে সরকারের আয় বাড়বে, তেমনই ডিজিটাল ম্যাপিং ব্যবস্থা আপডেট করার কাজও ত্বরান্বিত হবে। জমির ডিজিটালম্যাপিংয়ের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ বেশ পিছিয়ে রয়েছে। এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্য ডিজিটাল ম্যাপিংয়ের কাজ একশো ভাগ সম্পূর্ণ করে ফেলেছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা, বড় জোত নেই। অধিকাংশই খণ্ড খণ্ড জমি। বহু ক্ষেত্রে তার পুরনো পরচা বা দলিলও মেলে না। সেই জন্যই এ রাজ্যে ওই প্রকল্প চলছে ঢিমে তালে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE