Advertisement
E-Paper

Brick Kiln: গনগনে আগুনে পুড়ছে ইট, পাশে সরঞ্জাম রাখার এক চিলতে বারান্দায় নামতা পড়ছে অমিতরা

পুরুলিয়ার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ফি বছর বিষ্ণুপুরের বিভিন্ন ইটভাটায় কাজ করতে আসেন কয়েকশো শ্রমিক। বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলেমেয়েরাও আসে ভাটায়।

অভিজিৎ অধিকারী

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২২ ০৫:৩৬
ইটভাটায় চলছে পড়াশোনা। বিষ্ণুপুরে।

ইটভাটায় চলছে পড়াশোনা। বিষ্ণুপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

গনগনে আগুনে পুড়ছে ইট। মাথায় করে মাটি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বাবা-মা। কিছু দূরে, ইটভাটার সরঞ্জাম রাখার এক চিলতে বারান্দায় তখন দুইয়ের নামতা পড়ছে অমিত, পল্লবীরা।

বিষ্ণুপুর-আরামবাগ রাজ্য সড়কের পাশে, বাঁকুড়ার কৃষ্ণবাঁধ এলাকার একটি ইটভাটার ছবি। ইটভাটায় কাজ করা শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের জন্য পাঠশালার ব্যবস্থা করেছেন ওই ইটভাটার মালিক। উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষানুরাগী মানুষজন থেকে প্রশাসন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুরুলিয়ার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ফি বছর বিষ্ণুপুরের বিভিন্ন ইটভাটায় কাজ করতে আসেন কয়েকশো শ্রমিক। বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলেমেয়েরাও আসে ভাটায়। কাজ শেষে ছ’-সাত মাস পরে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। এ পরিস্থিতিতে সন্তানদের স্কুলে পড়াশোনা করার সুযোগ মেলে না বলে জানান তাঁরা।

ইটভাটার মালিক বিষ্ণুপুরের কাটানধারের বাসিন্দা, গৌরচন্দ্র নন্দী জানান, প্রতি বছরই বাইরে থেকে মা-বাবার সঙ্গে ছেলেমেয়েগুলো ভাটায় আসে। কাজ চলাকালীন ওদের যে পড়াশোনা হয় না, তা
আগে ভাবেননি। তাঁর কথায়, “এক দিন ওদের পড়াশোনা করা নিয়ে কয়েক জনের প্রস্তাব আসে। তার পরে, যাবতীয় ব্যবস্থা করে ফেলি। এ ভাবে সব ভাটায় পড়ানোর ব্যবস্থা থাকলে ভাল। যত দিন পারি, পাঠশালা চালিয়ে যাব।” বিষ্ণুপুর-আরামবাগ রাজ্য সড়কের পাশে,
কৃষ্ণবাঁধ এলাকায় ইটভাটার একটি ছাউনিতে বসছে অস্থায়ী পাঠশালাটি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বই-স্লেট নিয়ে পড়তে বসেছে অমিত বাউড়ি, পল্লবী বাউড়ি, শ্রাবণী বাউড়ির
মতো প্রায় কুড়ি-বাইশ জন। বছর দশেকের অমিত বলে, “আমরা
কোনও দিন স্কুলে যেতে পারিনি। মা-বাবার সঙ্গেই চলে আসি এখানে। রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে স্কুলের পোশাক পরে আমার মতো অনেকে যখন স্কুলে যায়, তখন মন খারাপ লাগত। পড়তে পেরে এখন
ভাল লাগছে।”

আপাতত সকাল ও বিকেল ঘণ্টা দুই করে চলছে পড়াশোনা। পারিশ্রমিক দিয়ে এক জন শিক্ষকও নিয়োগ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বই, খাতা, স্লেট পেনসিলেরও জোগান দিয়েছেন গৌরচন্দ্র। তিনি জানান, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের অনেকেই ওই শিশুদের পড়ানো নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। কেউ কেউ সময়ও দিচ্ছেন খুদে পড়ুয়াদের সঙ্গে। শিক্ষক হিসাবে যুক্ত শেখ সাজ্জাদ বলেন, “প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনা হচ্ছে মূলত। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরাও সহায়তা করছেন।”

ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা হওয়ায় অত্যন্ত খুশি দেবী বাউড়ি, মঞ্জু বাউড়ি, বৈদ্যনাথ বাউড়ি, কংস বাউড়িরা। তাঁরা বলেন, “এত দিন ছেলেমেয়েগুলো আমাদের সঙ্গে ফাই-ফরমাস খাটত। এখন পড়ছে। এর চেয়ে আর কী ভাল হতে পারে!” আর এক শ্রমিক দেবী বাউড়িও বলেন, “আমরা নিজেদের নামটাও লিখতে পারি না। ছেলেমেয়েরা সেটা তো পারবে।” সরকারি ভাবে ওদের খাবারের ব্যবস্থা হলে ভাল হয় বলে জানান তিনি।

এ মুহূর্তে জেলার প্রায় ৪৫০টি ইটভাটায় কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ হাজার এমন ছোট ছেলেমেয়েরা রয়েছে বলে জানান ‘মল্লভূম ব্রিক্‌স ফিল্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক জয়ন্ত ভট্টাচার্য। গৌরবাবুর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিটি ভাটার শিশুদের পড়াশোনার ব্যবস্থা হলে ভাল হয়। কয়েক বছর আগে আমিও এমন চার জনকে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। তারা পরে, বাড়ি ফিরে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে।”

মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত বলেন, “ব্যবসায়িক স্বার্থের বাইরে গিয়ে ওই ইটভাটার মালিক যে শিশুদের পড়াশোনার কথা ভেবেছেন, তার জন্য ওঁকে ধন্যবাদ। এ ভাবে অন্যেরাও যদি শিক্ষার বিস্তারে আগ্রহী হন, সমাজের মঙ্গল।”

brick kiln school Bishnupur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy