Advertisement
E-Paper

এবার ট্রেনেই অক্সিজেন করিডর! প্রাণ ফিরে পেল মায়ের কোলে নেতিয়ে পড়া শিশু

গ্রিন করিডর করে অন্য শহর থেকে হৃৎপিণ্ড নিয়ে আসার সাক্ষী থেকেছে কলকাতা। এ বার দু’মাসের অসুস্থ শিশুকন্যার জন্য রেলকর্মী এবং সহযাত্রীরা তৈরি করলেন ‘অক্সিজেন করিডর’—মঙ্গলবার, যশবন্তপুর-হাওড়া দুরন্ত এক্সপ্রেসে। যার মধ্যমণি ট্রেন সুপার (টিটিই) মিহির কুমার।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৮ ০৩:৪৬
মায়ের কোলে। নিজস্ব চিত্র

মায়ের কোলে। নিজস্ব চিত্র

গ্রিন করিডর করে অন্য শহর থেকে হৃৎপিণ্ড নিয়ে আসার সাক্ষী থেকেছে কলকাতা। এ বার দু’মাসের অসুস্থ শিশুকন্যার জন্য রেলকর্মী এবং সহযাত্রীরা তৈরি করলেন ‘অক্সিজেন করিডর’—মঙ্গলবার, যশবন্তপুর-হাওড়া দুরন্ত এক্সপ্রেসে। যার মধ্যমণি ট্রেন সুপার (টিটিই) মিহির কুমার।

মঙ্গলবার টিকিট পরীক্ষা শেষ করে নিজের আসনে ফিরছিলেন মিহিরবাবু। কান্নাকাটি শুনে থমকে যান। ভিড় সরিয়ে দেখতে পান, মায়ের কোলে নেতিয়ে পড়ছে এক শিশুকন্যা। অক্সিজেন চাই দ্রুত। কিন্তু সঙ্গে থাকা অক্সিজেন শেষ!

আর দেরি করেননি মিহিরবাবু। নিজের পরিচয় কাজে লাগিয়ে পরবর্তী স্টেশনেই জোগাড় করেন অক্সিজেন সিলিন্ডার। এগিয়ে আসেন সহযাত্রীরাও। ট্রেন যাতে নির্ধারিত সময়েই স্টেশনে পৌঁছয়, সেই ব্যবস্থা করা হয় রেলের তরফে। কলকাতায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার পরে বৃহস্পতিবার শিশুটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিন মাস পর তার হৃদ্‌যন্ত্রে অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা।

মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ যশবন্তপুর-হাওড়া দুরন্ত এক্সপ্রেসে চেপেছিলেন কলকাতার গার্ডেনরিচের বাসিন্দা সাগর এবং বনশ্রী কাঞ্জিলাল। এ-ওয়ান কোচে। সাগরবাবু জানিয়েছেন, জন্মের পর থেকেই হার্টের সমস্যায় ভুগছে তাঁর কন্যা। চিকিৎসকদের পরামর্শে গত মাসে তাকে বেঙ্গালুরু নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার খরচ বেড়ে যাওয়ায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।

সাগরবাবুর কথায়, ‘‘ডাক্তারেরা প্রথমে ছাড়তে চাইছিলেন না। অক্সিজেন নিয়ে যাওয়ার কথা বললে তাঁরা রাজি হন। বন্ড সই করে বাচ্চাকে নিয়ে আসি। দু’টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনেছিলাম। ডাক্তারেরা বলেছিলেন, ভুবনেশ্বর পর্যন্ত দু’টোতে হয়ে যাবে। ভুবনেশ্বরে আমার আত্মীয়েরা আবার সিলিন্ডার দিয়ে যাবেন। কিন্তু যে দোকান থেকে সিলিন্ডার কিনেছিলাম, তারা ভর্তি সিলিন্ডার দেয়নি। তাই অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ায় পৌঁছনোর আগেই তা ফুরিয়ে যায়।’’

স্টেশন আসতে তখনও ৩০ মিনিট বাকি। অক্সিজেনের অভাবে শিশুটি নেতিয়ে পড়তে থাকে। তা দেখে মিহির ফোনে যোগাযোগ করেন বিজয়ওয়াড়া স্টেশনের সিটিআই, বন্ধু জগ্গা রাওয়ের সঙ্গে। তাঁরই মধ্যস্থতায় মিহির কথা বলেন রেলওয়ে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে, যাতে স্টেশনে ঢোকার মুখে ‘আউটারে’ দাঁড়াতে না হয় ট্রেনটিকে। এর মধ্যেই জগ্গা জোগাড় করেন দু’টি সিলিন্ডার। সাগরবাবু বলেন, ‘‘মিহিরবাবু তো বটেই, সকলে মিলে চাঁদা তুলে একটা সিলিন্ডারের টাকা জোগাড় করে দেন। বাকি সিলিন্ডারের টাকা আমি দিতে পেরেছিলাম। যাত্রীদের মধ্যে এক জন সেনাকর্মী, এক জন ডাক্তার ছিলেন। ওঁরাই অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগিয়ে দেন। বাচ্চার শরীর ঠিক আছে কি না, ডাক্তারবাবু বারবার পরীক্ষা করেন। সকলে মিলে না এলে কী যে হত!’’

কলকাতা থেকে পুরী এক্সপ্রেসে শিশুটির আত্মীয়েরা যাতে নির্বিঘ্নে সিলিন্ডার নিয়ে ভুবনেশ্বরে পৌঁছতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও করেন ব্যারাকপুরের বাসিন্দা মিহিরবাবু। বুধবার বিকেলে হাওড়া স্টেশনে ট্রেন পৌঁছনোর পরে শিশুটিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেন আর এক রেলকর্মী, পি কে চৌধুরীর সাহায্যে। বৃহস্পতিবার মিহিরবাবু বলেন, ‘‘আমার সব রকম যোগাযোগ কাজে লাগিয়েছি ওই দিন। রেল কর্তৃপক্ষ এবং যাত্রীরাও এগিয়ে এসেছিলেন শিশুটিকে বাঁচাতে।’’

তবে এখানেই থেমে যাচ্ছেন না মিহিরবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘বাচ্চাটা যাতে সুস্থ হয়ে যায়, সে জন্য সব চেষ্টা করব। যত টাকা লাগে, জোগাড় করব।’’

Oxygen corridor Child Train Howrah Yeshvantapur Duronto Express Indian Railway Health Treatment TT Passengers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy