রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য
প্রবল বাম হাওয়ার মধ্যেও ১০ বছর আগে সিঙ্গুরের জমিতে ঘাসফুল ফুটিয়েছিলেন তিনি। পাঁচ বছর আগে পরিবর্তনের হাওয়ায় জিতেছিলেন হইহই করে। অথচ এ বার তৃণমূলকে যখন বাম-কংগ্রেস জোটের মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তখন তাঁরই প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে তৎপর দলের একাংশ!
তাঁর ‘অপরাধ’— নিজের দফতরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি টাঙাননি তিনি। কারণ হিসাবে জানিয়েছিলেন, মমতা তাঁর ‘আদর্শ’ নন।
তিনি সিঙ্গুরের প্রবীণ তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। স্থানীয় রাজনীতিতে যিনি মাস্টারমশাই নামে পরিচিত।
রবীন্দ্রনাথবাবু ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ১৭৮৭ ভোটে সিপিএম প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর ব্যবধান ছিল ৩৪,৮১১ ভোটের। সেই রবীন্দ্রনাথবাবুকে এ বার বিধানসভা ভোটে প্রার্থী না করার আর্জি জানিয়ে সিঙ্গুরের ১৬টি পঞ্চায়েতের প্রধান, উপ-প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং জেলা পরিষদের সদস্যরা মমতাকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠির প্রতিলিপি দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীকে। চিঠিতে বলা হয়েছে, তৃণমূল নেত্রী মমতাই তাঁদের ‘আদর্শ’। রবীন্দ্রনাথবাবু দল এবং দলনেত্রীকে হেয় করে সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, নেত্রী তাঁর আদর্শ নন। ফলে তাঁকে টিকিট দেওয়ার যুক্তি নেই।
ওই চিঠিতে মাস্টারমশাইয়ের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেগুলি হল— ২০১২ সালের নভেম্বর থেকে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ না দেওয়া, দলকে বিপদে ফেলতে সংবাদমাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্য, গত লোকসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করা, ভোটার তালিকা সংশোধন-সহ নানা কাজে অংশ না নেওয়া, মন্ত্রীর পদকে কাজে লাগিয়ে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের চাকরি দেওয়া।
ওই চিঠির প্রসঙ্গে পার্থবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলকে চিঠি কেউ দিতেই পারেন। তবে ভোটে কারা দলের টিকিট পাবেন, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।’’ সিঙ্গুরে মাস্টারমশাইয়ের প্রতিপক্ষ কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না অবশ্য এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। আর রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘এই বিষয়টা আমার কানে এসেছে। কিন্তু এই নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। দলে যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের প্রতি আমার আস্থা আছে। কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা, তা তাঁরা জানেন। দল আমাকে বাতিল করুক বা প্রার্থী করুক, তা আমি অম্লান বদনে মেনে নেব।’’
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে রবীন্দ্রনাথবাবুকে স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী করেছিলেন মমতা। পরে তিনি কৃষিমন্ত্রী হন। বর্তমানে রবীন্দ্রনাথবাবু পরিসংখ্যান ও রূপায়ণ দফতরের মন্ত্রী। তাঁর দফতরে কেন দলনেত্রীর ছবি নেই—বছর তিনেক আগে এই প্রশ্নের উত্তরে সংবাদমাধ্যমে রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘উনি আমার আদর্শ নন।’’ তাতে অস্বস্তিতে পড়ে দল। দু’পক্ষের তিক্ততার জেরে সিঙ্গুরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকেও গরহাজির ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তার পর বেচারামকে সিঙ্গুরে দলীয় কাজকর্মের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যার ফলশ্রুতিতে মাস্টারমশাই এবং বেচারামের অনুগামীদের মধ্যে শিবির ভাগ হয়ে যায়। তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব বিরোধ মিটিয়ে নিতে বললেও দুই নেতার কেউই তা করেননি।
তবে বর্তমান বিধায়ককে এ বার বিধানসভা ভোটে প্রার্থী না করার দাবি তৃণমূলের অন্দরে এ-ই প্রথম নয়। সাতগাছিয়ায় সোনালি গুহকে প্রার্থী না করার দাবিতে পোস্টার দিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান, উপ-প্রধানেরা সোনালিদেবীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-সভা করেন। উলুবেড়িয়া উত্তরের বিধায়ক নির্মল মাজিকে প্রার্থী করা হলে দলের ক্ষতি হবে বলে জানিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির জনপ্রতিনিধিরা চিঠি দিয়েছেন দলীয় নেতৃত্বকে। হাওড়ার পাঁচলায় গুলশন মল্লিকের বিরুদ্ধে কাজ না করার অভিযোগে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে তৃণমূল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy