Advertisement
১১ মে ২০২৪

মাসের গোড়ায় নগদ জোগাতে হিমশিম

পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তাঁদের জানা নেই। তবে মোটামুটি সামাল দেওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছতে আরও দিন পনেরো লাগতে পারে বলে রাজ্যকে জানাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৯
Share: Save:

পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তাঁদের জানা নেই। তবে মোটামুটি সামাল দেওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছতে আরও দিন পনেরো লাগতে পারে বলে রাজ্যকে জানাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এর মধ্যেই মাস পয়লা বেতনের সময়ে নগদের জোগান বাড়াতে তাঁদের যে হিমশিম খেতে হবে, তা এক প্রকার মেনেই নিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পূর্বাঞ্চলের কর্তারা।

নোট বাতিলের পরবর্তী পরিস্থিতি রাজ্যে বেশ ঘোরালো। তা নিয়ে আলোচনার জন্য বুধবার নবান্নে বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো প্রতিনিধি কৃষি মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব রাঘবেন্দ্র সিংহ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক অধিকর্তা রেখা ওয়ারিয়ারও। তিনিই বৈঠকে বলেন, ‘‘নগদ জোগানে উন্নতি হতে আরও অন্তত ১৫ দিন লাগবে। এখন গ্রামীণ এলাকায় নগদের জোগানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।’’

নবান্নের এক কর্তা জানান, গত তিন দিনে রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলি ৫৪ কোটি টাকা পেয়েছে। অথচ নোট বাতিলের পর রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক প্রথম দিকে দিনে গড়ে ২-৩ কোটি টাকার বেশি পায়নি। রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের পরেই গ্রামীণ এলাকায় বেশি শাখা বন্ধন ব্যাঙ্ক এবং ইউবিআই-এর। তাদেরও বাড়তি টাকা দেওয়া হচ্ছে। যে সব বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখা শহর ও আধা শহরেই বেশি, আগামী ১৫ দিন তাদের তুলনামূলক ভাবে কম টাকা পাঠাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

গ্রামীণ ব্যাঙ্কের পাশাপাশি পোস্ট অফিস মারফতও বাড়তি টাকা পাঠানো হবে। চিফ পোস্ট মাস্টার জেনারেল (ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেল) অরুন্ধতী ঘোষ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৮৭০০টি ডাকঘরের ৭৫ শতাংশই গ্রামীণ এলাকায়। আমরা সব ক’টিতেই কম-বেশি টাকা পাঠাতে পেরেছি।’’ তিনি জানান, হেড এবং সাব-পোস্ট অফিসগুলিকে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত টাকার অন্তত ৪০% গ্রামীণ এলাকার শাখা ডাকঘরগুলিতে পাঠাতে। পাশাপাশি ডাকঘরের নিজস্ব গ্রাহকেরা যাতে আগে পরিষেবা পান, তার চেষ্টাও করা হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় রাজ্যের ডাকঘরগুলিতে টাকার জোগান কম থাকার কথা মেনে নিয়েছেন অরুন্ধতীদেবী।

নবান্নের বৈঠকে মুখ্যসচিব রাজ্যের সরকারি কর্মীদের বেতনের সময় নগদের পর্যাপ্ত জোগানের প্রসঙ্গ তোলেন। রাজ্য সরকার এ মাসে বেতন ছাড়াও ৫০০০ টাকা নগদে অগ্রিম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই টাকা পরের মাসে কেটে নেওয়া হবে। এর জন্য প্রয়োজন হবে ৩০০ কোটি টাকা। বেতন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। মাস পয়লায় সংসার খরচের জন্য নগদের চাহিদা বাড়বে। মুখ্যসচিব বৈঠকে বলেন, ‘‘যে ভাবেই হোক, ডিসেম্বরের শুরুতে বেতনের সময়ে যেন ব্যাঙ্ক এবং এটিএমে টাকা মজুত থাকে। আর রাজ্যের অর্থ দফতরকে যেন প্রয়োজনীয় ৩০০ কোটি টাকা এ মাসের শেষেই দেওয়ার ব্যবস্থা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।’’

ব্যাঙ্ক কর্তারা জানান, কেন্দ্রীয় সরকারও এ মাসে ১০ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়ার কথা জানিয়েছে। কলকাতা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অধীনে রেলের তিনটি জোন রয়েছে। কোল ইন্ডিয়ার অফিসও রয়েছে। তাদের জন্যও বিশাল অঙ্কের নগদ প্রয়োজন। ফলে ডিসেম্বরের শুরুতে রাজ্য সরকারের হাতে এত টাকা তুলে দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্তারা সংশয় প্রকাশ করেন। রাজ্যের এক শীর্ষ কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘সমস্যা হলেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আমাদের টাকা পাঠিয়ে দেবে বলেই আশা করছি। সেই টাকা যাতে ৫০০ এবং ১০০ টাকার নোটে আসে, তার জন্য ওদের অনুরোধ করা হয়েছে।’’

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে ২০০০ টাকার নতুন নোট নিয়ে সমস্যার কথাও জানানো হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। ভাঙানোর অসুবিধার জন্যঅনেকেই ২০০০ টাকার নোট নিতে চাইছেন না। ফলে ব্যাঙ্কের শাখাগুলিও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে ওই নোট নিতে চাইছে না। ৫০ কোটি টাকার ৫০০-র নতুন নোট কয়েক দিন আগে এ রাজ্যে এসেছে। সে বার দশটি ব্যাঙ্ককে তা দেওয়া হয়েছিল। এর পরে ৫০০ টাকার নতুন নোট আরও এসেছে। এ বার তা গ্রামে পাঠানো হবে। কারণ, গ্রামের বাজারে ২০০০ টাকার নোট চালানো কঠিন। এ রাজ্যে কৃষি ঋণের ৩০-৩৫ ভাগ দেওয়া হয় সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার মতো পিছিয়ে পড়া জেলায় আবার মোট কৃষি ঋণের প্রায় ৭৫ ভাগ যায় সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। তাই গ্রামে ৫০০ টাকার নতুন নোট আরও বেশি করে পাঠাতে চায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

এক সরকারি কর্তা জানান, ভাঙানোর অসুবিধা ছাড়াও ২০০০ টাকার নোট নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। কেউ ভাবছেন নোটে চিপ লাগানো আছে, কেউ ভাবছেন এই নোট ফের বাতিল হবে। তাই দু’হাজারের নোট নিতে অনেকে আপত্তি করছেন। এ সব যে নেহাতই গুজব, গ্রাহকদের তা বলা হচ্ছে। অন্য দিকে, ১০০ টাকার নোট হাতে এলেও অনেকে খরচ করতে চাইছেন না। ফলে বাজারে টাকা ছাড়া হলেও তা হাতবদল হচ্ছে না। এতে সমস্যা বে়ড়েছে বলে জানান ওই কর্তা। রাজ্য এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তারা মনে করছেন, ৫০০ টাকার নতুন নোট পর্যাপ্ত না এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cash people demonetization
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE