সংখ্যালঘু দফতরের অধীন অন্তত ছ’টি সংস্থার কর্মীদের অভিযোগ, অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না তাঁদের। সংখ্যালঘু দফতরের মাথায় রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ সেই দফতরের আওতায় বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরাই অবসরের পরে একেবারে ব্রাত্য!
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নিচ্ছেন রাজ্যের সংখ্যালঘু প্রতিমন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লা। তিনি বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু দফতরের অধীনে কয়েকটি সংস্থার কর্মীরা দীর্ঘদিন চাকরি করেও অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না, এটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। ওঁদের সমস্যার সুরাহায় পঞ্চায়েত ভোটের পরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’’ তাঁর দফতরের সচিব পি বি সেলিম শুধু জানাচ্ছেন, স্বশাসিত সংস্থার কর্মীদের অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত ফাইল অর্থ দফতরে পাঠানো হয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে, এত দিন এই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা হয়নি কেন? মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ, সংখ্যালঘু কমিশন, সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম-সহ সংখ্যালঘু দফতরের অধীন অধিকাংশ স্বশাসিত সংস্থার কর্মীরা কেন ডিসিআরবি (ডেট কাম রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট) বা অবসরকালীন সুবিধা পাচ্ছেন না? কেন চরম দুর্দশায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের? সদুত্তর মিলছে না।
সংখ্যালঘু দফতরের অধীনে ১০টি স্বশাসিত সংস্থা রয়েছে। সেগুলি হল মাদ্রাসা পর্ষদ, হজ কমিটি, ডিরেক্টরেট অব মাদ্রাসা এডুকেশন বা মাদ্রাসা শিক্ষা অধিকর্তার দফতর, সংখ্যালঘু কমিশন, সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম, উর্দু অ্যাকাডেমি, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন, ওয়াকফ বোর্ড, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়াকফ ট্রাইবুনাল। এর মধ্যে মাত্র চারটি— ওয়াকফ বোর্ড, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, উর্দু অ্যাকাডেমি এবং ডিরেক্টরেট অব মাদ্রাসা এডুকেশনের কর্মীরা অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা পান। ওই চারটি স্বশাসিত সংস্থায় কর্মীদের অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা চালু হয়েছে বাম আমলেই। কিন্তু নতুন সরকারের সাত বছরের শাসনকালেও বাকি ছ’টি সংস্থায় অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধার চালু করা হয়নি।
রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশন এবং সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম চালু হয়েছে ১৯৯৫ সালে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসা পর্ষদের এক প্রাক্তন কর্মীর কথায়, ‘‘দীর্ঘ ৪০ বছর কাজ করেও অবসরকালীন কোনও সুবিধা পাচ্ছি না। শেষ বয়সে এর থেকে ব়়ড় বঞ্চনা আর কী হতে পারে!’’
২০০৮-এ বাম আমলে সংখ্যালঘু প্রতিমন্ত্রী আব্দুস সাত্তারের উদ্যোগে ওয়াকফ বোর্ডের কর্মীদের জন্য অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা চালু হয়। ‘‘অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা পাওয়া সব কর্মীরই মৌলিক অধিকার। অথচ বর্তমান সরকার সাত বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও সংখ্যালঘু দফতরের কর্মীদের কথা ভাবেনি, এটা বিস্ময়কর,’’ বলছেন সাত্তার। সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবিকেই সরাসরি কটাক্ষ করছেন সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু দফতর খোদ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা সত্ত্বেও সেখানকার কর্মীরা অবসরের পরে কোনও সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, সংখ্যালঘুদের কতটা উন্নয়ন হয়েছে!’’