Advertisement
E-Paper

ঈশ্বর, ওদের ক্ষমা করো, নীতিবোধ ভুলে বোধোদয় হয়?

পথে, ঘাটে, হাটে, মাঠে, চায়ের দোকানে, সমাজ-মাধ্যমে একটাই আলোচনা— বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ মনে করিয়ে দিয়েছেন সেই ভুবনের কথা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ০১:২৭
বহরমপুরে বিদ্যাসাগরের মূর্তি। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

বহরমপুরে বিদ্যাসাগরের মূর্তি। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার খবরটা মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই আছড়ে পড়েছে নবাবের জেলায়। সংবাদমাধ্যমে সব দেখে-শুনে-পড়ে অবাক ইতিহাসের জেলা। প্রবীণদের অনেকেই উদ্বিগ্ন, ‘‘আবার কি তাহলে সত্তরের দশক ফিরে এল!’’ কেউ আবার ধরা গলায় বলেছেন, ‘‘যারাই এটা করেছে ঈশ্বর তাদের ক্ষমা করুক। এর বেশি আর কী বলব, বলুন তো!’’

পথে, ঘাটে, হাটে, মাঠে, চায়ের দোকানে, সমাজ-মাধ্যমে একটাই আলোচনা— বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ মনে করিয়ে দিয়েছেন সেই ভুবনের কথা। যে তার সেই অবস্থার জন্য মাসিকে দায়ী করেছিল। কেউ মনে করিয়ে দিয়েছেন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার লাইন— ‘আমাকে তুই আনলি কেন, ফিরিয়ে নে।’

সমাজ-মাধ্যমে প্রতিবাদের তুফান ওঠে। তার পরে বুধবারে প্রতিবাদ মিছিল, প্রতিবাদ সভার ডাক দেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংস্থা। সব মিলিয়ে অন্তত ৩৫টি সংস্থা এ দিন বহরমপুর শহরে বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তির পাদদেশে প্রতিবাদে শামিল হয়। প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে শহর পরিক্রমা করে। আলোচনায় উঠে আসে ভারতীয় নবজাগরণ, নারীশিক্ষা, বিধবা বিবাহ ও বাল্য বিবাহ রদে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদানের প্রসঙ্গ।

বুধবার রোদের তেজ যত বেড়েছে আট থেকে আশির বুকে ক্ষোভ, যন্ত্রণা, কষ্ট, অভিমান ততই তীব্র হয়েছে। দুপুরের মধ্যেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তিতে মালা দিয়ে, মূর্তির পাদদেশে প্রতিবাদসভা করা হয়। এসইউসি-র পক্ষ থেকে বিকেলে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। খাগড়া থেকে সেই মিছিল এসে পৌঁছয় বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তির পাদদেশে। মূর্তিতে মালা দিয়ে সেখানেই চলে প্রতিবাদসভা।

টেক্সটাইল মোড়ে জমা হয়েছিলেন সিপিএমের গণসংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে মিছিল করে তাঁরাও পৌঁছন বিদ্যাসাগরের মূর্তির পাদদেশে। এসইউসি-র কাছ থেকে কয়েক মিনিট সময় চেয়ে নিয়ে তাঁরা মূর্তিতে মালা দিয়ে মিছিল করে আবার পৌঁছে যান টেক্সটাইল মোড়ে। সেখানেই চলে তাঁদের প্রতিবাদসভা। নাটক, আবৃত্তি, সঙ্গীত, বিজ্ঞান চর্চা, সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠন মিলিয়ে প্রায় ২০টি সংস্থার সদস্যরা যৌথ ভাবে গানে, কবিতায়, আলোচনায় মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদ করেন। কেউ কেউ এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘মুখে আমরা যতই যতই বিদ্যাসাগর, বিগদ্যাসাগর কিংবা গেল গেল রব তুলি না কেন, বহু আগেই আমরা নীতিবোধ বিসর্জন দিয়েছি। সেই নীতিবোধ ভুলে কি আর বোধোদয় হয়?’’

সাংস্কৃতিক কর্মীরা প্রথমে বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তিতে মালা দেন। তার পরে কবিতা পড়তে পড়তে, প্রতিবাদের গান গাইতে গাইতে মোহনের মোড় হয়ে জেলার কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ভবনের সামনে দিয়ে রবীন্দ্রসদন প্রাঙ্গণে সমবেত হন। সেখানে তাঁরা প্রতিবাদের গান ও কবিতা পরিবেশন করেন। কোনও একটি মাত্র বিষয়ের উপর শহরের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনকে এ ভাবে শেষ কবে পথে নামতে দেখা গিয়েছে তা মনে করতে পারছে না বহরমপুর।

সোস্যাল মিডিয়ায় পঞ্চম শ্রেণির রূপকথা দে লিখেছে দু’টো প্রতিবাদের ছড়া। তিন স্তবকের ‘ক্ষয়’ ছড়ার শেষ স্তবক, ‘‘যে মানুষটি সবে শিখিয়েছে / বর্ণের পরিচয়/ মূর্তি গুঁড়িয়ে প্রমাণ করলে/ বোধের হয়েছে ক্ষয়’।’’

কেউ কেউ ‘ওয়ালে’ টেনে এনেছেন সুকুমার রায়কেও। সঙ্গীত শিল্পী শিউলি ভট্টাচার্য ফেসবুকে তুলে দিয়েছেন—‘দুটোই বাঁদর, দুটোই গাধা,/রোগা মোটা সমান হাঁদা/ভণ্ড বেড়াল, পালের ধাড়ি,/ লাগাও মুখে ঝাঁটার বাড়ি।/ মাথায় মাথায় ঠুকে ঠুকে/চুনকালি দাও দুটোর মুখে।।’’

Vidyasagar College Vandalization Protest Moral
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy