Advertisement
০২ মে ২০২৪

বিতর্কের মধ্যেই প্রেসিডেন্সিতে বিচিত্র শিল্পপাঠ

পরিকল্পনা-প্রস্তাবনা পর্বেই বিতর্ক শুরু হয়েছিল। পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি, পাল্টা যুক্তি শানানো হচ্ছে এখনও। তার মধ্যেই ঘোষণা অনুযায়ী ‘পারফর্মিং আর্টস’-এর পঠনপাঠন শুরু করে দিচ্ছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়।

মধুরিমা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৬ ০৯:২৮
Share: Save:

পরিকল্পনা-প্রস্তাবনা পর্বেই বিতর্ক শুরু হয়েছিল। পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি, পাল্টা যুক্তি শানানো হচ্ছে এখনও। তার মধ্যেই ঘোষণা অনুযায়ী ‘পারফর্মিং আর্টস’-এর পঠনপাঠন শুরু করে দিচ্ছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। স্নাতকোত্তর স্তরে ‘অভিনব’ এই বিষয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে। অনলাইনে আবেদন জমা নেওয়া হবে ২৮ জুন পর্যন্ত।

আবেদনপত্র পেশ করলেই হবে না। রীতিমতো প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসে এই বিষয়ে পড়াশোনা করার যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। ‘‘সব বিষয়ের পড়ুয়াই যে-হেতু আবেদন করতে পারবেন, প্রবেশিকা পরীক্ষা সে-ভাবেই নেওয়া হবে। ওয়েবসাইটে সমস্ত তথ্য দেওয়া হয়েছে,’’ বলেছেন উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া।

বিষয়টি আসলে কী? সেটিকে ঘিরে বিতর্কই বা কেন?

বিষয়টি হল ‘পারফর্মিং আর্টস’ বা ‘পারফরম্যান্স স্টাডিজ’। সোজা বাংলায় শিল্পকলার ইতিবৃত্ত। সব শিল্পকলার ছায়াসঙ্গী হচ্ছে সেই শিল্পের আঞ্চলিক ঐতিহ্য, রাজনীতি, এমনকী সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যও। এই বৈশিষ্ট্যের সুবাদেই খেয়াল থেকে ঠুমরি, পাহাড়ি ধুন থেকে ভাটিয়ালি, রবি বর্মা থেকে রবীন্দ্রচিত্রকলা, ভরতনাট্যম থেকে কথাকলি— সবই স্বাতন্ত্র্যে সমুজ্জ্বল। সময়, রাজনীতি, জীবনযাপনের স্রোতেই পাল্টে যেতে থাকে গানের কথা, চিত্রভাষা, নৃত্যের অঙ্গসংস্থান, নাটকের দর্শন। কিন্তু শিল্পকলার সেই ইতিহাস নিয়ে সবিস্তার চর্চার সুযোগ বাংলার কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এ-হেন ‘পারফরম্যান্স স্টাডিজ’-এর পাঠ চালু করার ক্ষেত্রে এ রাজ্যে তারাই প্রথম বলে প্রেসিডেন্সির দাবি।

আর এই পাঠ্যক্রম নিয়ে বিতর্কের মূলে আছে এর বাস্তব উপযোগিতার প্রশ্নটি। অর্থাৎ এটা পড়ে রুটিরুজির সংস্থান হবে কি না, সেই প্রশ্নটি। শিক্ষা শিবিরের একাংশ বলছেন, বিষয়টি অভিনব, তবু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা থাকছে। কারণ, এটা পড়ে চাকরির কোনও নিশ্চয়তা নেই। কেউ কেউ বলছেন, যে-বিষয় পড়ুয়াদের নিশ্চিত কর্মসংস্থানের দিশা দেখাতে পারে না, সেই বিষয়ের কোনও গ্রহণযোগ্যতাই থাকতে পারে না। শিল্পী ও শিক্ষাবিদদের অন্য অংশ বলছেন, শিল্প সম্পর্কে জানতে হলে পড়াশোনা অবশ্যই দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হলে সেটা পৃথক গুরুত্ব পাবে। কলা-মননের অনুশীলনের স্বার্থে এমন পাঠ্যক্রম জরুরি। বিদেশে এই বিষয়ের পঠনপাঠন হয়, চাকরিও জোটে।

বিদেশে যা-ই হোক, এ দেশে স্নাতকোত্তর স্তরে এই বিষয় পড়ানো কতখানি যুক্তিযুক্ত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ। উপাচার্য অনুরাধাদেবীর বক্তব্য, বর্তমানে কাজের গণ্ডি অনেক ব্যাপ্ত হয়েছে। সেখানে শিল্পকেও পেশা হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। সেই সমস্ত ক্ষেত্রে বিষয়ের সম্যক জ্ঞান না-থাকলে এই ধরনের কাজের বাজারে পিছিয়ে পড়বেন পড়ুয়ারাই।

বিতর্ককে বিতর্কের জায়গায় রেখে ২০১৬-’১৭ শিক্ষাবর্ষেই ‘পারফর্মিং আর্টস’‌কে স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করছে প্রেসিডেন্সি। ওই বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ব্যাপক আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়ে বেশ কয়েকটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত। আসন ১৫টি। স্নাতক স্তরে কলা, বিজ্ঞান বা বাণিজ্য— যে-কোনও বিভাগে ৬৫ শতাংশ নম্বর পেলেই এই বিষয়ে আবেদন করা যাবে। তার পরে প্রবেশিকা।

পঠনপাঠন চলবে কী ভাবে?

এই বিষয়ের পঠনপাঠন হবে চারটি সেমেস্টারে। নাট্যশাস্ত্র, শব্দ ও সঙ্গীতের ইতিহাস, নাচের ইতিবৃত্ত— সবই রয়েছে পাঠ্যক্রমের আওতায়। প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে উত্তরাধুনিক সমাজে শিল্পমাধ্যমের বিবর্তন, ধর্মের সঙ্গে শিল্পের ওতপ্রোত সম্পর্ক— সমস্ত বিষয়েই সবিস্তার পাঠ দেওয়া হবে ছাত্রছাত্রীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Performing art Presidency
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE