Advertisement
০৫ মে ২০২৪

রবি ঠাকুর পড়িয়ে চাকরি শুরু অর্ণবের

প্রশাসনের নজদারিতে শুক্রবার কাজে যোগ দিলেন প্রতিবন্ধী শিক্ষক অর্ণব হালদার।টেট-এর নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির রায়মণিখাকি স্কুলে গিয়েছিলেন তিনি। প্রাথমিক ভাবে আশাভঙ্গ হয়।

নতুন স্যারকে অভ্যর্থনা পড়ুয়াদের। নিজস্ব চিত্র

নতুন স্যারকে অভ্যর্থনা পড়ুয়াদের। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
রায়দিঘি শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৫
Share: Save:

প্রশাসনের নজদারিতে শুক্রবার কাজে যোগ দিলেন প্রতিবন্ধী শিক্ষক অর্ণব হালদার।

টেট-এর নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির রায়মণিখাকি স্কুলে গিয়েছিলেন তিনি। প্রাথমিক ভাবে আশাভঙ্গ হয়। গ্রামের কিছু মানুষ তাঁর নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তোলেন। বিক্ষোভকারীদের সাফ কথা, ‘‘প্রতিবন্ধী মাস্টার চাই না। উনি ঠিকঠাক পড়াতে পারবেন না।’’

মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকে আগাগোড়া ভাল ফল করা অর্ণব তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, লিখিত পরীক্ষা, ইন্টারভিউ পর্ব পেরিয়ে চাকরি পেয়েছেন। পড়াতে ভালবাসেন। হাঁটাচলার ক্ষমতা না থাকলেও হুইলচেয়ারে বসে প়ড়াতে অসুবিধা হবে না তাঁর। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বিক্ষোভকারীদের হুমকির মুখে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রেখা কাঁসারি পুরকাইতও কাগজপত্রে সইসাবুদ করাতে সাহস পাননি। দিনভর স্কুলেই অপেক্ষা করেন অর্ণব। সঙ্গে ছিলেন বাবা-মা।

সমস্যার কথা কানে ওঠে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের। প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ও নড়েচড়ে বসে। তৃণমূল নেতৃত্ব খোঁজ-খবর করা শুরু করেন। তোলপাড় শুরু হয় নানা মহলে। সন্ধের দিকে নিয়োগ-সংক্রান্ত কাগজপত্রে সই করানো হয় অর্ণববাবুকে দিয়ে। শনিবার ছিল তাঁর চাকরির প্রথম দিন।

আরও পড়ুন: রাজ্যে হাব এ বার বাতাসা, নকুলদানারও

মা এবং এক বন্ধুকে নিয়ে বেলা ১১টা নাগাদ স্কুলে আসেন অর্ণব। আগেই জনা পঁচিশের ছোটখাটো একটা জটলা ছিল সেখানে। কেউ কেউ তখনও গোঁ ধরে বসে আছেন। বলছেন, ‘‘এমন মাস্টার পড়াবে কী করে? ওঁকে আমরা চাই না।’’ অন্য পক্ষ আবার বোঝাচ্ছে, ‘‘পাশের গ্রামের ছেলে। পড়াশোনায় ভাল। পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছে। নিশ্চয়ই কাজটা ঠিকঠাক করবে।’’

এ দিন প্রশাসনের নজরদারি ছিল গোটা পরিস্থিতির দিকে। ক্লাস চলাকালীন ঘুরে যান অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) দেবকুমার নন্দন, বিডিও, পঞ্চায়েত প্রধান। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও এসে কথা বলেন অর্ণববাবুর সঙ্গে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকাকে ভরসা দেন তাঁরা। বিডিও মোনালিসা তিরকে বলেন, ‘‘প্রশাসন সব সময়ে ওই শিক্ষকের পাশে থাকবে।’’

এ দিন হাজিরা খাতায় সই করে অর্ণব ঢোকেন দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাসরুমে। খুদে পড়ুয়ারা ঘিরে ধরে তাঁকে। ‘‘সকলে ভাল আছ তো?’’ একগাল হেসে প্রশ্ন করেন সদ্য যুবক। উত্তরে সমস্বরে জনা পনেরো পড়ুয়া বলে ওঠে, ‘‘হ্যাঁ স্যার।’’ ‘‘আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছ না তো?’’ স্যারের প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই কচি গলায় উত্তর মেলে, ‘‘না না, ভয় পাব কেন?’’

অর্ণব এ দিন পড়ান রবীন্দ্রনাথের ‘অচলায়তন’ নাটকের ‘আলো আমার আলো ওগো আলোয় ভুবন ভরা’’। ক্লাস শেষে কয়েকজন পড়ুয়া বলে, ‘‘স্যার দারুণ পড়ান। আর একটুও বকেন না।’’

চাকরি জীবনের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা কেমন? তরুণ শিক্ষকের কথায়, ‘‘অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার কবিতা পড়িয়েছি আজ। আশা করি সব এ ভাবেই ঠিক হয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arnab Haldar Teacher Primary Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE