Advertisement
১৯ মে ২০২৪

‘মদের আসর’ তুলতে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশ

প্রকাশ্যে মাঠে মদ খাওয়ার অভিযোগে কিছু যুবককে আটক করতে গিয়ে মঙ্গলবার রাতে পাণ্ডুয়ার মুটুকপুর গ্রামে আক্রান্ত হল পুলিশ। পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে যুবকদের আটক করছে, এই দাবি তুলে গ্রামবাসীদের একাংশ প্রথমে পুলিশের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। তার পরে ঝাঁটা-লাঠি নিয়ে তিন পুলিশকর্মীর উপরে চড়াও হয়। ইটও ছোড়া হয়।

লন্ডভন্ড গ্রামের ক্লাবঘর। (ইনসেটে) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এএসআই শান্তিরঞ্জন ঘোষ।—নিজস্ব চিত্র।

লন্ডভন্ড গ্রামের ক্লাবঘর। (ইনসেটে) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এএসআই শান্তিরঞ্জন ঘোষ।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাণ্ডুয়া শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫ ০১:১৫
Share: Save:

প্রকাশ্যে মাঠে মদ খাওয়ার অভিযোগে কিছু যুবককে আটক করতে গিয়ে মঙ্গলবার রাতে পাণ্ডুয়ার মুটুকপুর গ্রামে আক্রান্ত হল পুলিশ। পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে যুবকদের আটক করছে, এই দাবি তুলে গ্রামবাসীদের একাংশ প্রথমে পুলিশের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। তার পরে ঝাঁটা-লাঠি নিয়ে তিন পুলিশকর্মীর উপরে চড়াও হয়। ইটও ছোড়া হয়। হামলায় জখম হন পাণ্ডুয়া থানার এক এএসআই-সহ তিন পুলিশকর্মী। পরে পুলিশ বাহিনী গিয়ে হামলার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করে। তল্লাশির নামে পুলিশ ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে এবং মহিলাদেরও মারধর করে বলে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসী। পুলিশ সেই অভিযোগ মানেনি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘প্রকাশ্যে মদ খাওয়ার অভিযোগে কিছু যুবককে আটক করায় গ্রামবাসীরা পুলিশের উপর হামলা চালায়। তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’ গ্রামবাসীদের উপরে পুলিশের হামলার অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ওই পুলিশকর্তা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ ওই গ্রামে গাড়িতে টহল দিচ্ছিল পুলিশ। অভিযোগ, গ্রামের একটি মাঠে সেই সময় কলেজ পড়ুয়া জনা ছয়েক যুবক প্রকাশ্যেই মদ খাচ্ছিলেন। তাঁদের নিষেধ করা হলে কটূক্তি উড়ে আসে। পুলিশ ওই যুবকদের আটক করে গাড়িতে তুলতে যায়। তখনই পুলিশের উপরে গ্রামবাসীদের একাংশ চড়াও হয়। হামলাকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল মহিলা। তারা আটক যুবকদের ছাড়িয়ে নেয়। হামলাকারীদের মারে জখম হন পাণ্ডুয়া থানার এএসআই শান্তিরঞ্জন ঘোষ, কনস্টেবল সুজয় ধাউড়ে এবং জীবন সোরেন। একটি ইটের আঘাতে শান্তিরঞ্জনবাবুর কপাল ফেটে রক্ত পড়তে থাকে। কোনও রকমে হামালাকারীদের হাত থেকে গাড়িতে উঠে এলাকা ছাড়েন ওই পুলিশকর্মীরা। তাঁদের পাণ্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এই গোলমালের ঘণ্টা খানেক পরে হামলাকারীদের খোঁজে বিশাল বাহিনী নিয়ে ওই গ্রামে তল্লাশিতে যান মগরার সার্কেল ইনস্পেক্টর ইন্দ্রজিৎ পাল এবং পাণ্ডুয়ার ওসি সুমন রায়চৌধুরী। গ্রেফতার করা হয় বিকাশ ভূমিজ, অনাদ ভূমিজ এবং শ্যামল ভূমিজ নামে তিন গ্রামবাসীকে।

গ্রামবাসীর দাবি, মাঠে যাঁরা বসেছিলেন, কেউই মদ খাচ্ছিলেন না। তাঁরা খন্যান ইটাচুনা কলেজের ছাত্র। কলেজ থেকে ফিরে গরমের জন্য খোলা মাঠে বসেছিলেন। মিথ্যা অভিযোগে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে বলেও দাবি করেছেন গ্রামবাসীরা। শ্যামলী ভূমিজ নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘ছেলেগুলো কলেজ থেকে ফিরে রোজই মাঠে গল্পগুজব করে। ওরা প্রকাশ্যে মদ খাবে না। ওরা মুড়ি-চপ আর জলের বোতল নিয়ে বসেছিল। পুলিশ অকারণে ওদের ধরেছিল বলে গ্রামবাসীরা বাধা দেন। পরে রাতের অন্ধকারে অনেক পুলিশ গ্রামে ঢুকে ভাঙচুর চালাল। মহিলাদের মারধর করল। কোনও মহিলা-পুলিশও ছিল না। চার মহিলা জখম হন।’’

পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে রাতেই গ্রামের অনেক পুরুষ গা ঢাকা দেন। বুধবার গ্রামে গিয়ে কোনও পুরুষের দেখা মেলেনি। কিছু বাড়ির দরজা-জানলা, আসবাবপত্র এবং স্থানীয় ক্লাবের জিনিসপত্র ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশই তা ভেেঙছে বলে দাবি মহিলাদের। হাসপাতালে আহত এএসআই শান্তিরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘টহল দেওয়ার সময় দেখি মাঠের ধারে ছেলেগুলোর সামনে মদের বোতল। মদ খেতে বারণ করি। তারপেরই ওই কাণ্ড।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE