Advertisement
০২ জুন ২০২৪
Jaynagar violence

আক্রান্ত গ্রামে যেতে বাধা, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি সুজন-কান্তিদের

দলুয়াখাকিতে হামলার পরে মহিলা শিশু-সহ এলাকার প্রায় ২৬ জন দক্ষিণ বারাসতে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

জয়নগরের বামনগাছি পঞ্চায়েতের দলুয়াখাকিতে প্রায় পনেরোটি বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। —ফাইল চিত্র।

জয়নগরের বামনগাছি পঞ্চায়েতের দলুয়াখাকিতে প্রায় পনেরোটি বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জয়নগর ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৮
Share: Save:

তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা সইফুদ্দিন লস্করের মৃত্যুর পরে জয়নগরের দলুয়াখাকি গ্রামে ভাঙুচর ও আগুন লাগিয়ে তাণ্ডব চলেছিল সোমবার। ঘরছাড়া লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে সেই গ্রামে যাওয়ার পথে সিপিএম নেতাদের মঙ্গলবার আটকে দিল পুলিশ। বাধা দেওয়াকে ঘিরে পুলিশের সঙ্গে তুলকালাম বাধল সিপিএম নেতাদের। ওই গ্রামে যাওয়ার অনেক আগেই এ দিন আটকে দেওয়া হয়েছে আইএসএফের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীকে। শাসক দলের নির্দেশে পুলিশ-প্রশাসন অসাংবিধানিক আচরণ করছে বলে সরব হয়েছেন বিরোধী নেতারা। শাসক দল তৃণমূলের পাল্টা কটাক্ষ, মহিলাদের ‘ঢাল’ করে প্রচার পেতে সিপিএম ‘নাটক’ করেছে!

দলুয়াখাকিতে হামলার পরে মহিলা শিশু-সহ এলাকার প্রায় ২৬ জন দক্ষিণ বারাসতে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে এ দিন প্রথমে সেখানে আসেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল ঘোষেরা। ঘরছাড়াদের সঙ্গে নিয়েই দলুয়াখাকির দিকে রওনা দেন তাঁরা। কিন্তু দলুয়াখাকিতে ঢোকার চার-পাঁচ কিলোমিটার আগে রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক স্কুলের কাছে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় পুলিশের। ঘরে ফেরার দাবিতে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান মহিলারাও। কান্তি পায়ে চোট পান বলে অভিযোগ। সুজন-কান্তিরা পুলিশকে ঠেলে সরিয়ে এগোনোর চেষ্টা করেন। তবে বেশি দূর এগোতে পারেননি। পরে কান্তি এক কর্মীর বাইকে চেপে ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিছু দূর এগোতে ফের আটকে দেয় পুলিশ। ফিরে এসে রামচন্দ্রপুর থেকে গ্রামের মহিলাদের নিয়েই জয়নগর থানার দিকে রওনা দেন সুজনেরা। পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে দাবি-দাওয়া পেশ করা হয়। ভাঙচুরের ঘটনায় আহত এক মহিলাও এ দিন অভিযোগ দায়ের করেছেন।

থানা চত্বরেই এ দিন গ্রামের মহিলাদের হাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তুলে দিয়েছেন সিপিএম নেতারা। রাতে দলীয় কার্যালয়েই ঘরছাড়াদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আগামী ২২ তারিখ জয়নগরে অবস্থান বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে সিপিএম। সুজনের অভিযোগ, ‘‘এলাকায় ১৪৪ ধারা ছিল না। কোনও সরকারি নির্দেশিকা দেখাতে পারেনি পুলিশ। মহিলা পুলিশ ছাড়াই গ্রামের মহিলাদের জোর করে আটকানো হয়েছে। রাজনৈতিক নির্দেশে পুলিশ-প্রশাসন এই কাজ করেছে। অথচ তৃণমূলের বিধায়কের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা নন, এমন অনেকেই এ দিন এলাকায় ঢুকেছিলেন।’’ কান্তিও বলেন, ‘‘আমি একা যেতে চেয়েছিলাম। তাও যেতে দেওয়া হয়নি। এতগুলো মানুষের থাকা-খাওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। প্রশাসন কিছু করছে না। দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা পাশে দাঁড়াতে যেতে চাইলে বাধা দেওয়া হচ্ছে, সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।’’

বারুইপুরের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাসের দাবি, ‘‘এলাকার শান্তি রক্ষায় বহিরাগত কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।” গ্রামের মহিলাদের কেন বাধা দেওয়া হল, তার কোনও ব্যাখ্যা অবশ্য পুলিশ-প্রশাসনের তরফে মেলেনি। জয়নগরের বিধায়ক বিভাস সর্দার-সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এ দিনই বাঙালবুড়ির মোড়ে সইফুদ্দিনের বাড়ির কাছে দলীয় কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। সইফুদ্দিনের বাবার সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন তাঁরা। সিপিএম নেতাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘খুন করেছে সিপিএম আবার তারাই স্থানীয় মহিলাদের ঢাল করে সস্তায় প্রচার পেতে এলাকায় ঢুকতে চাইছে! তাই পুলিশ বাধা দিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় যাঁরা বাইরে চলে গিয়েছিলেন, পুলিশ তো তাঁদের ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছে। সিপিএম নাটক করছে!’’

গোচরণ হয়ে এ দিন বিকালেই জয়নগরে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ। গোচরণ স্টেশন রোডে তাঁকে আটকে দিলে পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘ বাদানুবাদ চলে নওসাদের। কীসের ভিত্তিতে আটকানো হচ্ছে, জানতে চান নওসাদ। দলুয়াখাকির শিশুদের জন্য যে খাবার নিয়ে এসেছিলেন নওসাদ, শেষ পর্যন্ত তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য পুলিশকেই দিয়ে যান তিনি। নওসাদের অভিযোগ, ‘‘কোনও কারণ ছাড়াই আমাকে আটকানো হয়েছে। আমি নাকি বহিরাগত।! কোন এলাকা থেকে এলে বহিরাগত বলা হবে, জানতে চাইলাম, ওঁরা বলতে পারেননি। ওই এলাকায় ঘর-পোড়া মানুষগুলির জন্য প্রশাসন খাবার, এমনকি, পানীয় জলের ব্যবস্থা করছে না। শিশু দিবসের দিনেও এলাকার শিশুরা না খেয়ে আছে।” দলুয়াখাকিতে আক্রান্ত পরিবারগুলির পাশাপাশি নিহত সইফুদ্দিনের বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলেও জানান নওসাদ।

দলুয়াখাকি লস্করপাড়ায় আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলতে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে এ দিন বাধা পেয়েছে এপিডিআর-এর প্রতিনিধিদলও। সংগঠনের অভিযোগ, ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ মিটার দূরে বামনগাছিতে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। ঘটনার নিন্দা করে সংগঠনের দাবি, খুন ও সেই ঘটনা ঘিরে এলাকায় যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে আর্থিক সাহায্য দিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jaynagar violence CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE