Advertisement
০১ মে ২০২৪

ট্রেনযাত্রীর ফোনে উদ্ধার আট বালক

মঙ্গলবার সকালে ওই ট্রেনেই কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন শামিম আখতার। কৌতূহলেই জিজ্ঞাসা করেছিলেন— ‘‘কোথায় যাচ্ছ তোমরা?’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৮ ০৪:০৮
Share: Save:

বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার তখন ছুটছে হাওড়া স্টেশনের দিকে। কামরার এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে বসে এক দল বাচ্চা ছেলে। মঙ্গলবার সকালে ওই ট্রেনেই কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন শামিম আখতার। কৌতূহলেই জিজ্ঞাসা করেছিলেন— ‘‘কোথায় যাচ্ছ তোমরা?’’

বাকিটা গল্পের মতো। শামিমের একটা ফোন। তার সৌজন্যেই রামপুরহাট থেকে সাড়ে চার ঘণ্টার যাত্রা শেষে হাওড়া স্টেশনে আটটি বালক উদ্ধার। দিনের শেষে শামিমের আক্ষেপ তবু যাচ্ছে না— ‘‘জনা তেরো ছেলে ছিল। সবাইকেই উদ্ধার করা সম্ভব হলে আর পাচারকারীদের ধরা গেলে ভাল লাগত।’’

প্রতিদিনের মতো এ দিন সকালে রামপুরহাট থেকে ওই ট্রেনে ওঠেন ‘কুরিয়র সার্ভিস’ সংস্থার কর্মী শামিম। তখনই ওই বাচ্চাদের দেখতে পান। ওই কামরায় ছিল পাচারকারীরাও। শামিমের কথায়, ‘‘পাশাপাশি বসলেও বাচ্চারা কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছিল না। চোখমুখে ভয়। হঠাৎ এক যুবক এসে ওদের গালিগালাজ করে যায়।’’ শামিমের প্রশ্নে বাচ্চারা জানায়, তারা হাওড়া যাচ্ছে। সন্দেহ হওয়ায় এক নম্বর জোগাড় করে ট্রেন থেকে ‘বীরভূম চাইল্ড লাইন’-এর হেল্পলাইনে ফোন করেন শামিম। তিনি নেমে যান প্রান্তিক স্টেশনে।

জেলা চাইল্ড লাইনের সদস্য শেখ ফজলুল হক এ দিন কাজে কলকাতা যাচ্ছিলেন। শামিমের কাছে খবর পেয়ে বোলপুর স্টেশন থেকে ওই কামরাতেই উঠে ফজলুল বালকদের উপরে নজর রাখেন। পরে নিজের পরিচয় দিয়ে বর্ধমান জিআরপি-কে ফোনও করেন। ট্রেন বর্ধমান স্টেশনে পৌঁছলেও ওই কামরাটি ছিল প্ল্যাটফর্মের বাইরে। কিছু ক্ষণ পরে ওই কামরায় পৌঁছন রেলপুলিশের দুই কর্মী। ফজলুলের ধারণা, তাতেই হয়তো বেগতিক বুঝে ভিড়ের সুযোগ নিয়ে কয়েকটি ছেলেকে নিয়ে নেমে যায় পাচারকারীরা। ফজলুলের দাবি, ওই সময়ে চিৎকার করে তিনি লোক ডাকলে হিতে বিপরীত হতে পারত। তাই সে ‘ঝুঁকি’ নেননি তিনি। বলেন, ‘‘রেলপুলিশের ওই দু’জনকে বলি, আরও লোক পাঠানো হলে পাচারকারীদের ধরা যেত।’’

হাওড়া স্টেশনে রেল পুলিশ ছেলেগুলির সঙ্গে কথা বলে জেনেছে, তাদের বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। বয়স ১০-১৪ বছরের মধ্যে। পরিবারের আর্থিক অনটনের সুযোগ নিয়ে কয়েক জন লোক তাদের শিশুশ্রমিক হিসেবে কাজে লাগাতে কলকাতার মেটিয়াবুরুজে নিয়ে যাচ্ছিল। তাদের এ দিন সন্ধ্যায় হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, শিশুকল্যাণ কমিটির নির্দেশমতো পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child trafficking Child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE