Advertisement
০৪ মে ২০২৪

নাবালিকার বিয়ে, শ্বশুর শাশুড়ির সঙ্গে জেলে বর

নাবালিকা মেয়ের আপত্তি অগ্রাহ্য করে ভিন্ রাজ্যের পাত্রের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন বাবা-মা। সেই খবর পেয়ে বুধবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা থানার লক্ষ্মীপুর গ্রামে অভিযান চালায় পুলিশ। বরকে ধরা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে পাত্রীর মা-বাবাকেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৪:১৮
Share: Save:

নাবালিকা মেয়ের আপত্তি অগ্রাহ্য করে ভিন্ রাজ্যের পাত্রের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দিয়েছিলেন বাবা-মা। সেই খবর পেয়ে বুধবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা থানার লক্ষ্মীপুর গ্রামে অভিযান চালায় পুলিশ। বরকে ধরা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে পাত্রীর মা-বাবাকেও। ধৃতদের বিরুদ্ধে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অভিযুক্তদের ঘাটাল আদালতে তোলা হয়।

আদালতে আনা হয়েছে নাবালিকা পাত্রীকেও। পুরো ঘটনায় আর সকলের মুখ ভার হলেও বেজায় খুশি সে। স্বেচ্ছায় হোমে যেতে চাইছে। তার কথায়, ‘‘বিয়ে করব না বলেছিলাম। কিন্তু বাবা-মা আমার কথার গুরুত্ব দেয়নি। আমি আর বাড়ি ফিরব না। হোমে যাব। ওখান থেকেই পড়াশোনা করব।” বাড়ি ফিরলে উত্তরপ্রদেশে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে ভয় পাচ্ছে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীটি। তার সাফ কথা, ‘‘ওই ছেলের সঙ্গে ঘর করব না। এ বিয়ে আমি মানি না।”

পডুন: নাবালিকার বিয়ে নয়, ক্লাস নিচ্ছেন ওসি

কিন্তু উত্তরপ্রদেশের পাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ হল কী সূত্রে?

এর আগে নাবালিকার এক আত্মীয়ার বিয়ে হয়েছে উত্তরপ্রদেশের বড়াওন জেলার রামনগরে। ওই আত্মীয়ার পছন্দের পাত্র মহাবীর। রামনগরের বাসিন্দা পেশায় মজুর মহাবীর কোনও যৌতুক না নিয়েই বিয়েতে মত দিয়েছিলেন। এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি মেয়ের বাড়ির লোকজন। মেয়ের অমতেই দু’দিনের মধ্যে বিয়ের প্রস্তুতি সেরে ফেলেন তাঁরা। দিন না থাকলেও গত মঙ্গলবার রাতে রীতি মেনে বিয়ে হয়ে যায়। আয়োজনে কমতি ছিল না। ম্যারাপ বেঁধে শ’খানেক লোককে খাওয়ানো হয়েছিল। বুধবার শ্বশুরবাড়িতে থেকে বৃহস্পতিবার সকালে স্ত্রীকে নিয়ে রামনগরে ফেরার কথা ছিল মহাবীরের।

শেষ রক্ষা হল না। খবর পেয়ে বুধবার রাতে ওই গ্রামে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে অভিযান চালান চন্দ্রকোনা থানার ওসি। বেগতিক বুঝে চম্পট দেয় বিয়েতে যোগাযোগকারী আত্মীয়া। বাড়ির লোকেরাও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ দেখে নাবালিকা পাত্রী মনে বল পায়। সেই সব ঘটনা খুলে পুলিশকে বলে।

এরপর বর-সহ মেয়ের বাবা-মাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার চন্দ্রকোনা থানার লকআপে বসে কাঁচুমাচু মুখে মহাবীর বলেন, “এত সব নিয়মকানুন আমার জানা নেই। বিয়ে করতে এসে জেলে ঢুকতে হবে, ভাবতে পারিনি।”

নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে আইন হয়েছে, সচেতনতা প্রচার চলছে, অভিযান চলছে, এমনকী কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু তাতেও নাবালিকা বিয়ে আটকাচ্ছে কই। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক মাসে ঘাটাল মহকুমাতেই চারটি নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। প্রশাসনের অজান্তে আরও কত নাবালিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে নিত্য, তার হিসাব নেই। পুলিশি অভিযানে ধরা পড়ার পর বাবা-মা বলছে, নাবালিকার বিয়ে দেওয়া যে অপরাধ, তা জানা ছিল না। চন্দ্রকোনা ১-এর বিডিও সুরজিৎ ভড় বলেন, “সচেতনতা বাড়াতে আমরা প্রচার চালাচ্ছি। লোকজনদের বোঝাচ্ছি। এক্ষেত্রে পাত্রীর বাবা-মা-বরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নরমে-গরমে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

state news child marriage police rescued child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE