Advertisement
১০ মে ২০২৪
Purulia

বন্দির জন্য রক্ত দিলেন দুই কারারক্ষী

তাঁরা রক্তদান করার পরে ওই বন্দি এখন কিছুটা সুস্থ রয়েছেন বলে জানান চিকিৎসকেরা।

শান্তনু পণ্ডা ও শেখ নইম বক্স। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু পণ্ডা ও শেখ নইম বক্স। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২০ ০৪:২৮
Share: Save:

বন্দি ও রক্ষীদের মধ্যে সাম্প্রতিক কালে রক্তারক্তি কাণ্ড বেধেছে রাজ্যের নানা জেলে। এ বার বন্দি ও রক্ষীর ‘রক্তের সম্পর্ক’ গড়তে দেখা গেল পুরুলিয়া জেলা সংশোধনাগারে। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি এক বিচারাধীন বন্দির জন্য যখন হন্যে হয়ে নির্দিষ্ট গ্রুপের রক্ত খুঁজছেন পরিজন, তখনই এগিয়ে এলেন দুই কারারক্ষী। তাঁরা রক্তদান করার পরে ওই বন্দি এখন কিছুটা সুস্থ রয়েছেন বলে জানান চিকিৎসকেরা।

সংশোধনাগার সূত্রে জানা যায়, অগস্টের শেষে একটি ডাকাতির মামলায় বিচারাধীন ওই ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো হয়। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, তাঁর রক্তচাপ কমে গিয়েছিল। মাথা ঘুরছিল। সংশোধনাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার ভূপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, ‘‘শনিবার হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, দুই ইউনিট ও-নেগেটিভ রক্ত দিতে হবে।’’

কিন্তু হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে ওই গ্রুপের রক্ত বাড়ন্ত। অন্যত্রও মিলছিল না। খবর পেয়ে পরিজন ছোটাছুটি করছিলেন। ভূপেন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘হাতে সময় কম ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শেখ নইম বক্স ও শান্তনু পণ্ডা নামে দুই রক্ষীর সঙ্গে রক্তের গ্রুপ মিলে যাচ্ছে। বলা মাত্র রক্ত দিতে রাজি হয়ে যান তাঁরা।’’ রবিবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে নইম ও শান্তনু রক্ত দেন। ওই বন্দির ছেলে বলেন, ‘‘অনেক চেষ্টা করেও রক্ত জোগাড় করতে পারছিলাম না। দুই রক্ষী যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন, আমরা খুবই কৃতজ্ঞ।’’

পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের হারনান গ্রামের বাসিন্দা, বছর বত্রিশের নইম বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর পড়ার সময়েই চাকরি পান। তাঁর বাবার ছোটখাট ব্যবসা রয়েছে। নইম বলেন, ‘‘কে কী মামলায় সংশোধনাগারে এসেছেন, আমরা জানি না। আমাদের কাছে সবাই একই পরিবারের সদস্য।’’ বাঁকুড়ার ইঁদপুরের দুবরাজপুরের বছর আঠাশের শান্তনু ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। স্থানীয় শালডিহা কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক হয়ে কারারক্ষীর চাকরিতে যোগ দেন। তিনিও বলেন, ‘‘পরিবারের কোনও সদস্যের প্রয়োজনে যেমন অন্যেরা এগিয়ে আসেন, আমরা সে ভাবেই কর্তব্যটুকু পালন করেছি।’’

রাজ্যের কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের কথায়, ‘‘জেল বন্দি করে রাখার নয়, সংশোধন করার জায়গা। ওই দুই রক্ষী যা করেছেন, তা দৃষ্টান্ত হওয়া উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood Donation Prison Guards Purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE