E-Paper

বিএসএফের উপর নজরদারি চালাবে বেসরকারি ক্লাব! মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবে বিতর্ক

প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, প্রায় প্রতিটি জেলায় বিপুল খরচ করে সরকার কর্মতীর্থ তৈরি করলেও সেগুলির বেশির ভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের কোনও আগ্রহই নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৩২
Mamata Banerjee and BSF.

রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়ে গিয়েছে বিএসএফ বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গতিবিধির উপরে নজরদারির গুরু দায়িত্ব বেসরকারি ক্লাবগুলির হাতে ছাড়ার উদ্যোগকে ঘিরে। ফাইল চিত্র।

নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কর্মতীর্থ’। দোকান-সহ নানান ব্যবসা করার জন্য নির্মিত সেই সব অব্যবহৃত পরিকাঠামো স্থানীয় ক্লাবের হাতে গেলে সেগুলো আর কতটা কর্ম-তীর্থ থাকবে, অকর্মস্থল বা অসামাজিক কাজের আখড়া হয়ে উঠবে কি না, সেই প্রশ্ন, সংশয় ও বিতর্ক জোরদার হয়েছে। একই ভাবে শুধু বিতর্ক নয়, রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়ে গিয়েছে বিএসএফ বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গতিবিধির উপরে নজরদারির গুরু দায়িত্ব বেসরকারি ক্লাবগুলির হাতে ছাড়ার উদ্যোগকে ঘিরে।

অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা কর্মতীর্থগুলি নিয়ে বুধবার আলোচনা হয়েছিল নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠকে। প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, প্রায় প্রতিটি জেলায় বিপুল খরচ করে সরকার কর্মতীর্থ তৈরি করলেও সেগুলির বেশির ভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের কোনও আগ্রহই নেই। কারণ, দোকান-ব্যবসা করার জন্য নির্ধারিত এই পরিকাঠামোগুলি লাভজনক জায়গায় গড়ে ওঠেনি বলেই অভিযোগ। দীর্ঘ কাল ধরে পড়ে থাকা কর্মতীর্থগুলির পরিচালনার ভার সেই জন্যই এলাকার বিভিন্ন ক্লাবের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বহু দিন ধরেই বিএসএফ-কে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করার অভিযোগ করে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস। নবান্ন সূত্রের খবর, এ বার বিএসএফের ‘বাড়াবাড়ি’ ঠেকাতে স্থানীয় ক্লাবগুলিকে সক্রিয় করার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। ওই সূত্র জানাচ্ছে, বুধবার রাজ্য স্তরের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রস্তাব দেন, পুলিশকে যেমন গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহে তৎপর হতে হবে, তেমনই সীমান্তবর্তী এলাকার ক্লাবগুলির মাধ্যমে বিএসএফের বাড়াবাড়ির উপরে নজরদারি চালানো প্রয়োজন।

কালিয়াচকের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ওই প্রশাসনিক বৈঠকে আলোচনার ফাঁকে প্রসঙ্গক্রমে বিএসএফের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ওঠে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, মমতা প্রশাসনিক কর্তাদের উদ্দেশে (বিশেষ করে পুলিশকর্তাদের) জানান, গ্রামে গ্রামে ঢুকে অত্যাচার চালাচ্ছে বিএসএফ। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই প্রবণতা বাড়তে পারে। তাদের টহলদারির তথ্য যেন স্থানীয় থানার ওসি-র কাছে থাকে। আইনশৃঙ্খলা দেখবে পুলিশ, বিএসএফ নয়। আর সীমান্ত দিয়ে কোনও চোরাচালান যাতে না-হয়, সেটা দেখবে বিএসএফ। সেই প্রসঙ্গেই স্থানীয় ক্লাবগুলিকে এ ব্যাপারে সচেতন করার বার্তা দিয়েছেন মমতা। এক মন্ত্রী বলেন, “সরকারি স্তরে আলোচনার ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট বিধি প্রস্তুত করা হয়। এ ক্ষেত্রেও পরে তেমনই হবে হয়তো।”

এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “জাতীয় পতাকার নীচে বসে বিএসএফের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। স্থানীয় মানুষকে দিয়ে প্রতিরোধ করাতে চাইছেন। এটা সাংঘাতিক মনোভাব।” তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেন, “ক্লাব মানে স্থানীয় সংগঠন, সমাজের অংশ। বিএসএফের জওয়ানদের নিয়ে আমাদের গর্ববোধ রয়েছে। কিন্তু যে-সব অভিযোগ উঠছে, তা অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী এটা বলেছেন। এতে তো বিএসএফের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণার কোনও ব্যাপার নেই!”

পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “এমন নয় যে, এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে ক্লাবগুলো দায়িত্ব পেতে শুরু করল। সরকারি স্তরে নির্দিষ্ট বিধিনিয়ম স্থির হবে। সেই অনুযায়ী করা হবে পদক্ষেপ।” তবে শমীকের অভিযোগ, “পুরো ব্যবস্থাটাই ভোটকেন্দ্রিক। জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে ওই দল। ডোবার মুখে খড়কুটোর মতো সব আঁকড়ে ধরতে চাইছেন।” পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় কুণাল বলেন, “এলাকার মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখে ক্লাবগুলি। বিজেপির সবেতেই সমস্যা! যারা হল ভাড়া করে দুর্গাপুজো করে, তারা ক্লাবের মর্ম কী বুঝবে?”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee BSF

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy