ধান সংগ্রহে প্রত্যাশিত গতি না-থাকায় এমনিতেই রাজ্য সরকারের চিন্তা বাড়ছিল। তার উপরে কলকাতা হাইকোর্টের একটি নির্দেশে জোর ধাক্কা খেল তারা।
যে-সব চালকল ধান সংগ্রহ করে তা ভাঙিয়ে সরকারি গুদামে পাঠাবে না, তাদের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ হবে না বলে জানুয়ারিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল রাজ্যের খাদ্য দফতর। সেই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে যায় চালকল-মালিক সংগঠন। বৃহস্পতিবার সেই মামলায় বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগ ওই বিজ্ঞপ্তির উপরে দশ সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। বিচারপতির নির্দেশ, কেন এই বিজ্ঞপ্তি, সরকারকে হলফনামা দিয়ে তা জানাতে হবে।
‘বেঙ্গল রাইস মিল ওনার্স’-এর সাধারণ সম্পাদক দীপক প্রামাণিক জানান, খাদ্য দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খাদ্যমন্ত্রীর ইচ্ছে অনুযায়ী চালকল-মালিকদের জানানো হচ্ছে, ধান ভাঙিয়ে সরকারি গুদামে তোলার কাজে যোগ না-দিলে চালকলের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ হবে না। দীপকবাবুর অভিযোগ, ধান মান্ডি, স্বনির্ভর গোষ্ঠী বা কৃষক সমবায় সমিতি থেকে ধান কিনে তা চালকলে আনার খরচ খাদ্য দফতর দেয় না। সেই চাল সরকারের গুদামে পৌঁছে দেওয়ার পুরো টাকাও মেটানো হয় না। লোকসান দিয়ে ধান সংগ্রহ করা বা ভাঙানো বেশি দিন চালানো যায় না বলে মন্তব্য করেন দীপকবাবু।
এ দিন মামলার শুনানিতে মালিক সংগঠনের পক্ষে প্রবীণ আইনজীবী শক্তিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, খাদ্য দফতরের ওই বিজ্ঞপ্তি অবৈধ এবং সংবিধান-বিরোধী। সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে স্বাধীন ভাবে ব্যবসা করার অধিকার দিয়েছে। চালকল-মালিকেরা সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করবেন কি না অথবা তা ভাঙিয়ে সরকারি গুদামে মজুত করবেন কি না, সেটা তাঁদের নিজস্ব ব্যাপার। তা ছাড়া কোনও মন্ত্রীর ইচ্ছে অনুযায়ী এই ধরনের প্রশাসনিক বিজ্ঞপ্তি জারি করা যায় না।
চালকল-মালিক সংগঠনের অন্যতম আইনজীবী পিঙ্গল ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, প্রতি ১০০ কিলোগ্রাম ধান ভাঙিয়ে ৬৪ কেজি চাল মেলে বলে এর আগে খাদ্য দফতরই আদালতে হলফনামা পেশ করে জানিয়েছে। কিন্তু এখন খাদ্য দফতর বলছে, প্রতি ১০০ কিলোগ্রাম ধান থেকে ৬৮ কিলোগ্রাম চাল দিতে হবে চালকল-মালিকদের।
এ বার খরিফ মরসুমে ৫২ লক্ষ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে সরকার। কিন্তু সংগ্রহ আশাব্যঞ্জক মাত্রায় না-পৌঁছনোয় উদ্বেগ বাড়ছিল সরকারের। অনেক ক্ষেত্রে চাষিরা সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে না-গিয়ে সহায়ক-মূল্যের থেকেও কম দামে মহাজনদের কাছে ধান বিক্রি করছেন বলে খবর। পরিস্থিতি সামাল দিতে সচিবদেরও মাঠে নামিয়ে দিতে বাধ্য হয় সরকার। খাদ্য দফতরের খবর, এই অবস্থায় চালকলগুলিকেও ধান সংগ্রহের নতুন উদ্যোগে সক্রিয় ভাবে সামিল করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সমস্যা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনজীবী শীর্ষণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন আদালতে জানান, চালকল-মালিকেরা ধান সংগ্রহ এবং তা ভাঙিয়ে দেওয়ার কাজে সহযোগিতা না-করলে বাজারে চালের জোগানই বন্ধ হয়ে যাবে।
দু’পক্ষের সওয়াল শোনার পরে বিচারপতি বাগ জানান, খাদ্য দফতরের বিজ্ঞপ্তি রূপায়ণ দশ সপ্তাহ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। ফের শুনানি হবে তিন সপ্তাহ পরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy