Advertisement
E-Paper

বিক্রি হবে আবর্জনা থেকে তৈরি জৈব সার

অবশেষে লক্ষ্য সফল। বাড়ি বাড়ি থেকে সংগৃহীত আবর্জনা থেকে জৈব সার তৈরি করে তা বাজারে পাঠানোর ব্যবস্থা চূড়ান্ত করে ফেলল হুগলির উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভা।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৬ ০১:৫৬
বাঁ দিকে, তৈরির পথে। ডান দিকে, বস্তা বন্দি জৈব সার। ছবি: দীপঙ্কর দে।

বাঁ দিকে, তৈরির পথে। ডান দিকে, বস্তা বন্দি জৈব সার। ছবি: দীপঙ্কর দে।

অবশেষে লক্ষ্য সফল।

বাড়ি বাড়ি থেকে সংগৃহীত আবর্জনা থেকে জৈব সার তৈরি করে তা বাজারে পাঠানোর ব্যবস্থা চূড়ান্ত করে ফেলল হুগলির উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভা। গত মঙ্গলবার কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে এ ব্যাপারে চুক্তি করেছে পুরসভা। পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘আবর্জনা থেকে তৈরি সার বিক্রি করা নিয়ে সমস্যা মিটে গেল। কলকাতার একটি সংস্থা আমাদের থেকে সার কিনবে। পুর-এলাকা পুরোপুরি দূষণমুক্ত করার দিকে আরও এক কদম এগিয়ে গেলাম আমরা।’’

যে সংস্থার সঙ্গে পুরসভার চুক্তি হয়েছে, তার কর্ণধার কুমার বসু জানান, উত্তরপাড়ায় যে পরিমাণ সার উৎপাদিত হবে, তার সবটাই তাঁরা কিনে নেবেন। কুমারবাবু বলেন, ‘‘ফুল, ফল, সব্জি চাষের ক্ষেত্রে ওই সার ব্যবহার করা যেতে পারে। উত্তরবঙ্গে চা এবং রবার চাষের পক্ষেও এই সার উপযোগী। এর চাহিদাও রয়েছে ভালই। তবে, বাজারজাত করার আগে আমাদের এখানে আরও কিছুটা প্রক্রিয়ায় তা চূড়ান্ত করা হবে।’’

হুগলি জেলার ছ’টি পুরসভা (উত্তরপাড়া-কোতরং, কোন্নগর, রিষড়া, শ্রীরামপুর, বৈদ্যবাটি এবং চাঁপদা‌নি) মিলিয়ে কঠিন-বর্জ্য প্রতিস্থাপনের ভাবনা বাম আমলের। জাপানের আর্থিক সহায়তায় এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে ২০০৮ সালে বৈদ্যবাটির দীর্ঘাঙ্গিতে দিল্লি রোডের ধারে ওই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তৎকা‌লীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। ৫১ একর জমিতে ওই প্রকল্প গড়ে তোলা হয়।

সেই সময় ঠিক ছিল, দীর্ঘাঙ্গিতেই ছ’টি পুরসভার বর্জ্য একত্রে জমা হবে। তা থেকে অপচনশীল পদার্থ পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আর, পচনশীল জিনিস দিয়ে জৈব সার তৈরি করা হবে। পরে ঠিক হয়, প্রত্যেকটি পুরসভাই নিজেদের এলাকায় আলাদা করে ইউনিট তৈরি করে ওই কাজ করবে। অতিরিক্ত জিনিস দীর্ঘাঙ্গিতে নিয়ে গিয়ে ‘স্যানিটারি ল্যান্ড ফিলিং’ করা হবে। সেই মতো পুরসভাগুলি নিজেদের এলাকায় ওই ইউনিট তৈরি করে। গোটা প্রক্রিয়ার জন্য ধার্য হয় ১৭০ কোটি টাকারও বেশি। জাপানের সরকারি সংস্থা ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি’ (জাইকা) এই প্রকল্পে ১৪১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। প্রকল্পটি গড়ে কেএমডিএ।

এর আগে পর্যন্ত মাখলার ভাগাড়ে উত্তরপাড়া পুর-এলাকার আবর্জনা এসে জমা হত। সেই জায়গাতেই কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন ইউনিট তৈরি করা হয়। বছর খানেক হল ওই প্রকল্প চালু হয়ে গিয়েছে। কী ভাবে চলছে কাজ?

পুরসভার তরফে বাড়ি বাড়ি দু’টি করে বালতি দেওয়া হয়ে। নীল রঙের বা‌লতিতে অপচনশীল (প্লাস্টিক, কাচ, কাগজ প্রভৃতি) আর সবুজ রঙের বালতিতে তরকারি বা ফলের খোসা-সহ অন্য পচনশীল জিনিস জমিয়ে রাখেন নাগরিকরা। প্রতিদিন‌ সকালে পুরসভার সাফাইকর্মীরা সেই আবর্জনা সংগ্রহ করেন। তা নিয়ে আসা হয় মাখলার প্ল্যান্টে। অপচশীল জিনিস ‘ট্রান্সফার স্টেশনে’ নিয়ে আসা হয়। লোহা-কাগজ কুড়ানিরা সেগুলি ঝাড়াই-বাছাই করে প্লাস্টিক, কাচ, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি নানা জিনিস বস্তাবন্দি করে নিয়ে যান।

পচনশীল জিনিস নিয়ে আসা হয় ‘বায়ো-ম্যানিওর ইউনিটে’ (জৈব সার তৈরির ইউনিট)। সেখানে নির্দিষ্ট উচ্চতায় আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয়। ৪২ দিন পরে তা ‘বায়ো ম্যানিওর’ যন্ত্রে ফেলা হয়। তাতে কাগজ, কাচ, প্লাস্টিকের মতো জিনিস আলাদা হয়ে যায়। বাকী অংশ সারে পরিণত হয়। দু’টি ইউনিটে যে অতিরিক্ত আবর্জনা থাকে, তা দীর্ঘাঙ্গিতে ‘স্যানিটারি ল্যান্ড ফিলিং’য়ের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। উত্তরপাড়া পুরসভার স্যানিটারি ইনস্পেক্টর রথীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য জানান, মাখলার ইউনিটে জনা পনেরো কর্মী কাজ করছেন। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, প্রথম দিকে দিনে ২ টন আবর্জনা ইউনিটে আসত। এখন প্রায় ১০ টন আসছে। মাসে ৩০-৩৫ টন সার তৈরি হচ্ছে। পুরসভার লক্ষ্য প্রতিদিন ২২ টন আবর্জনা সংগ্রহ।

সে ক্ষেত্রে সারের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। পুরসভার জঞ্জাল বিভাগের চেয়ারম্যান ইন-কাউন্সিল তাপস মুখোপাধ্যায় জানান, নরেন্দ্রপুরের সংস্থাটি প্রতিকেজি ২ টাকা ৭৫ পয়সা দরে সার কিনবে। তাপসবাবুর কথায়, ‘‘যত বেশি সার তৈরি হবে, বিক্রি করে তত রাজস্ব মিলবে। তাতে লাভ না হোক, প্রক্রিয়ার খরচ উঠে আসবে।’’

এত দিন সার বিক্রির ব্যবস্থা না থাকায় আশপাশের লোকজনকে বিনা পয়সায় দিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। প্রকল্প এলাকায় অর্জুন, রাধাচূড়া-সহ নানা ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে। তাতে নিজেদের হাতে তৈরি জৈব সারই ব্যবহার করেছে পুরসভা।

organic fertilizer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy