হাওড়া, হুগলি এবং বর্ধমানে বন্যা প্রতিরোধে এ বার নিম্ন দামোদর বেসিন প্রকল্প তৈরি করল রাজ্যের সেচ দফতর। ২১০০ কোটি টাকার ওই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন্দ্র প্রকল্পটি অনুমোদন করলে রাজ্যের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে। প্রকল্পটির অনুমোদন মিললে আরামবাগের মতো বন্যাপ্রবণ এলাকাতেও পরিস্থিতি বদলে যাবে।’’
বস্তুত, ইতিমধ্যেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান, কেলেঘাই-কপালেশ্বরী এবং মুর্শিদাবাদ-কান্দির বন্যা প্রতিরোধে বিশেষ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মুর্শিদাবাদ-কান্দির প্রকল্পের অনুমোদন পায় রাজ্য। ওই প্রকল্পের জন্য ৪৩৮.৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দও হয়েছে। এর মধ্যে রাজ্য দিচ্ছে ২৫ শতাংশ। প্রকল্পের মাপজোকের কাজও শুরু হয়েছে। কাজ শেষ করার সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের মার্চ মাস। প্রকল্পে তৈরি করা হবে কংক্রিটের বাঁধ। মুর্শিদাবাদের মতো নিম্ন দামোদর বেসিন প্রকল্পেরও অনুমোদন কেন্দ্র দেয় কি না এখন তারই অপেক্ষায় রাজ্য সরকার।
সেচ দফতর সূত্রের খবর, প্রকল্পটি হলে নদীবাঁধগুলিকে স্থায়ী ভাবে তৈরি করা হবে। বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলি চিহ্নিত করে সেখানে রিং বাঁধ দেওয়া হবে। বাঁধের জমি যাতে বেদখল না হয় সে দিকে নজর রাখা হবে। একই সঙ্গে যে সব জায়গায় বাঁধ বারবারই ভাঙে সেখানে বাঁধ তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এ ছাড়াও আরও কিছু পদক্ষেপ করা হবে। প্রকল্প রূপায়ণের আগে তা চূড়ান্ত হবে।
হুগলি, বর্ধমান এবং হাওড়ায় বন্যা প্রতি বছরের ছবি। বন্যায় কৃষির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকাও মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু বন্যা প্রতিরোধে প্রশাসন এত দিন সে ভাবে স্থায়ী কোনও সমাধানের রাস্তায় হাঁটেনি। ডিভিসি জল ছাড়লে বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদর এলাকার জামালপুর, রায়না, মাধবডিহি, খণ্ডঘোষে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই এলাকায় কাটোয়া, কেতুগ্রাম, জামালপুরে যে জমিদারি নদীবাঁধগুলি রয়েছে সেগুলির হাল খারাপ। মূলত দামোদর ও অজয়ের উপর এই বাঁধগুলি রয়েছে। বর্ধমানের মতো একইভাবে ডিভিসি-র ছাড়া জলে হুগলির আরামবাগ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। মহকুমায় মূলত দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী, রূপনারায়ণ, কানা নদী ছড়াও অসংখ্য ছোট বড় নদী রয়েছে। বর্ষায় এবং ডিভিসি-র ছাড়া জলে খানাকুলের দু’টি ব্লকে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। পাশাপাশি পুরশুড়া, গোঘাটও বন্যাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। একই ভাবে হাওড়ার আমতা, উদয়নারায়ণপুরও ডিভিসি-র জলে প্লাবিত হয়।
বন্যা পরিস্থিতি হলে তা প্রতিরোধে হুগলি জেলা প্রশাসন কতটা তৈরি তা খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি হুগলির চাঁপাডাঙায় সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক করেন। বৈঠকে জেলা প্রশাসনের কর্তারা ছাড়াও জেলা পরিষদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মাধ্যক্ষরা হাজির ছিলেন। মূলত ডিভিসি, মাইথন, পাঞ্চেত এবং কংসাবতী ব্যারাজের ছাড়া জলে বন্যা হয় হুগলি, বর্ধমান এবং হাওড়ায়। বৈঠকে এই তিন জেলায় বন্যার স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হয়।
সেচমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা আশাবাদী কেন্দ্র আমাদের প্রকল্পের অনুমোদন দেবে। প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে এই তিন জেলায় বন্যার যে সমস্যা রয়েছে তা আর থাকবে না।’’
চলতি বর্ষার মরসুমে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়া ডিভিসি যে নিজেদের ইচ্ছামতো এক তরফা জল ছাড়বে না সে বিষয়েও আশ্বস্ত করেছেন সেচমন্ত্রী। কয়েক বছর আগে আলোচনা ছাড়াই জল চলে আসায় দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি আগাম সতর্ক হতে পারেনি। ফলে, জেলাগুলিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ নিয়ে দু’পক্ষের বিস্তর চাপানউতোর চলে। সেচমন্ত্রী বলেন, ‘‘আগের সমস্যা এড়াতে আমরা এ বার বারে বারেই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।’’
হুগলির জেলা পরিষদের সেচ কর্মাধ্যক্ষ মানস মজুমদার বলেন, ‘‘এ বার বর্ষায় যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে জন্য আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রচুর বালির বস্তা মজুত রাখা হয়েছে। প্রচুর পরিমাণে ত্রিপল এবং খাদ্যশস্যও মজুত রাখা হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy