রাজ্যের বন্যা নিয়ে তরজার জল গড়াল এ বার দেশের সর্বোচ্চ আদালতে।
পশ্চিমবঙ্গের বন্যার জন্য ক’দিন আগেই ডিভিসি-কে দায়ী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর সেই অভিযোগের সুরেই ডিভিসি-কে দায়ী করে আজ সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। যে মামলায় পশ্চিমবঙ্গের বন্যার জন্য ডিভিসি-কেই দুষে বলা হয়েছে, বিনা নোটিসে, রাজ্যের সেচ দফতরের সঙ্গে আলোচনা না করে জল ছেড়েছে ডিভিসি। এ জন্য ডিভিসি-র কাছে ক্ষতিপূরণও দাবি করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এই মামলার শুনানি হতে পারে।
কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েই যে ভাবে এই জনস্বার্থ মামলাটি হয়েছে, তাতে তৃণমূল নেতৃত্বের উদ্যোগ বা সমর্থন আছে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হয়ে ওঠার পরেই ডিভিসি-র ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছিলেন মমতা। পাল্টা জবাব দিয়েছিল ডিভিসি-ও। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, যে ভাবে ডিভিসি পশ্চিমবঙ্গকে ডুবিয়ে দিচ্ছে, তিনি তার শেষ দেখে ছাড়বেন। আগামী সপ্তাহে দিল্লি আসছেন মমতা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দেখা করার কথা। সেখানেও তিনি বিষয়টি তুলতে চান। বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, ডিভিসি-র প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। কাজেই কেন্দ্ররই নজরদারি দরকার।
আজকের জনস্বার্থ মামলায় ডিভিসি-র বিরুদ্ধে সবথেকে বড় অভিযোগ হল, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডিভিসি-র দিকে আঙুল তোলার ঠিক পরপরই ইচ্ছাকৃত ভাবে আরও জল ছাড়া হয়। নতুন করে বৃষ্টি না হলেও জল ছাড়া হয়। এর পিছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল, রাজ্য সরকারকে হেনস্থা করা।
মামলাকারী কে এন যাদবের আইনজীবী শান্তিরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ডিভিসি-কে দায়ী করার পরেই দুর্গাপুর, পাঞ্চেৎ ও মাইথন, এই তিনটি জলাধার থেকে ১ লক্ষ ৭২ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। রাজ্যকে হেনস্থা করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। কিন্তু হাজার হাজার নিরীহ মানুষ, গবাদি পশু সমস্যার মুখে পড়ে।’’ মামলায় ডিভিসি-কে দায়ী করার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার, কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক, কেন্দ্রীয় জল কমিশনের দিকেও আঙুল তোলা হয়েছে। ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেও এই মামলায় শরিক
করা হয়েছে।
বিরোধী নেত্রী হিসেবে বাংলার বন্যাকে ‘ম্যানমেড’ বলে আখ্যা দিতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত চার বছরে রাজ্যে বন্যা হয়নি। এ বার বন্যার পরে সেই পুরনো সুরেই ডিভিসি-র বিরুদ্ধে কার্যত ‘ম্যানমেড’ বন্যারই অভিযোগ তোলেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই জনস্বার্থ মামলায় অভিযোগ তোলা হয়েছে, ডিভিসি আগাম নোটিস ছাড়াই জল ছাড়ে। জল ছাড়ার আগে রাজ্যের সেচ দফতরের সচিবের সঙ্গে আলোচনা করার কথা। তা করা হয়নি। বহু বছর ধরে জলাধারগুলিতে জমা হওয়া পলি-বালি তুলে নাব্যতা বাড়ানোর কাজও করেনি ডিভিসি।
রাজ্য সরকার সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ত্রাণ-পুনর্বাসনের জন্য সাহায্য ছাড়াও রাজ্যের সেচ দফতরের নদী ও খালগুলির সংস্কারের জন্যও কেন্দ্রের সাহায্য চাইতে পারেন মমতা। কারণ রাজ্য সরকারের নদী সংস্কারের সামর্থ্য নেই। জনস্বার্থ মামলাতেও একই ভাবে দাবি করা হয়েছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। জলাধারগুলির আধুনিকীকরণ ও নাব্যতা বাড়ানোর জন্য প্রকল্প নিতে হবে। এ বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও তৈরি করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের পরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে ডিভিসি-র বৈঠক হয়। কিন্তু কোনও সমাধানসূত্র বের হয়নি। পলি তোলার ক্ষেত্রে দেরির জন্য দু’পক্ষই একে অপরকে দায়ী করে। শীর্ষ আদালতে এ বার ওই বিবাদের মীমাংসা হয় কি না, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy