Advertisement
০৫ মে ২০২৪

‘যুদ্ধ হলে তো কত স্বপ্ন নষ্ট’

এ দিন বললেন, ‘‘ওঁর কথাগুলোই স্মৃতি। আজ যদি বেঁচে থাকতেন জওয়ানদের মৃত্যুর খবর শুনে অস্থির হয়ে উঠতেন। কিন্তু দেশপ্রেমের নামে নিজের দেশের লোকেদের হুমকি দেওয়া, ভয় দেখানো দেখে কষ্ট পেতেন।”

মইলি ছেত্রী। িনজস্ব চিত্র

মইলি ছেত্রী। িনজস্ব চিত্র

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৪
Share: Save:

পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে হামলার কথা শোনার পর থেকেই মন ভাল নেই মইলি ছেত্রীর। ফোনের ও পার থেকে হোঁচট খাওয়া বাংলায় সেই কথাই বলছিলেন তিনি। জঙ্গি হামলার পরে দেশে নানা জায়গায় সোশ্যাল মিডিয়ায় বক্তব্যের জেরে হামলা, মারধরের অভিযোগ উঠেছে। কোথাও কোথাও আক্রমণ নেমে এসেছে রুজির খোঁজে অন্যত্র যাওয়া কাশ্মীরিদের উপরেও। কয়েকবার দম নিয়ে ফের ভাঙা বাংলায় বললেন, “এ ভাবে চললে তো সব নষ্ট হয়ে যাবে। জাতীয় পতাকা হাতে নিজের দেশের লোককে হুমকি দেওয়া যায় না। আমার স্বামী বলতেন এই দেশ তো সবার।” মইলি ছেত্রীর স্বামী ত্যাগবাহাদুর ছেত্রী ছিলেন ফৌজি। একাত্তরে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে মারা যান তিনি। তারপরে ৪৭টা বসন্ত পেরিয়েছে। এখনও প্রতিদিন স্বামীর ছবির সামনে মোমবাতি জ্বালেন মইলি দেবী।

এ দিন বললেন, ‘‘ওঁর কথাগুলোই স্মৃতি। আজ যদি বেঁচে থাকতেন জওয়ানদের মৃত্যুর খবর শুনে অস্থির হয়ে উঠতেন। কিন্তু দেশপ্রেমের নামে নিজের দেশের লোকেদের হুমকি দেওয়া, ভয় দেখানো দেখে কষ্ট পেতেন।”

বীরপাড়া থেকে ভুটান পাহাড়ের চড়াই পথে ৬ কিলোমিটার উঠলে দলমোড় বস্তিতে বাড়ি মইলি দেবীর। তাঁর স্বামী ত্যাগবাহাদুর ছেত্রীর নাম এখনও এলাকায় এক ডাকে চেনে সকলে। ছেত্রী দম্পতির এক মেয়ে। বিয়ে হয়ে গিয়েছে অনেকদিন আগে। এখন একাই বাড়িতে থাকেন মইলি দেবী। কেমন আছেন এখন? উত্তর দিতে গিয়ে অভিমান ঝরে পড়ে তাঁর গলায়। বলেন, ‘‘প্রথমে পঞ্চাশ হাজার টাকা পেলাম। তারপরে কার্গিল যুদ্ধের পরে মহারাষ্ট্রে গিয়ে আরও পঞ্চাশ হাজার পেলাম। ওই ১ লক্ষ টাকাই সরকারি ক্ষতিপূরণ। তাও অর্ধেক পেয়েছি স্বামী মারা হওয়ার তিন দশকেরও বেশি সময় পরে।”

যুদ্ধে স্বামীকে হারিয়েছেন। তাই আর যুদ্ধ চান না মইলি দেবী। বলেন, ‘‘জওয়ানদের মৃত্যুর পাল্টা পদক্ষেপ হোক। কিন্তু যুদ্ধ যেন না হয়। তা হলে তো অনেক ধ্বংস হবে। কতজনের কত স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যাবে।” সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা মন্তব্য নিয়ে হুমকি, মারধরের প্রসঙ্গ উঠতেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন তিনি। বলেন, ‘‘রাগ হতেই পারে। তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমার স্বামী কথায় কথায় জয়হিন্দ বলতেন। দেশের মর্যাদা, সম্মানে ক্ষতি হয় এমন কাজ করা উচিত নয়।”

বারবার ফৌজি কনভয়ে হামলা, ফৌজি ছাউনিতে হামলার ঘটনাতেও ক্ষুব্ধ তিনি। মনে করেন, এই ঘটনা ঠেকাতে পদক্ষেপ করতে পারে একমাত্র দেশের সরকার, সেটাই করা হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pulwama Pulwama Attack Pulwama Terror Attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE