Advertisement
E-Paper

খয়রাশোলে তৃণমূল নেতা খুনে ধৃত দলের ৩ নেতাকর্মী

দ্বন্দ্ব যাতে প্রকাশ্য না আসে তা নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মাথা ব্যাথার শেষ নেই। কিন্তু বারবরাই তা প্রকাশ্য আসছে। কেন না, পুলিশের ধারণা ছিল গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে খুন হয়েছেন খয়রাশোলের তৃণমূল নেতা অশোক মুখোপাধ্যায়। বুধবার রাতে বিরোধী গোষ্ঠীর অভিযুক্ত তিন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করার পর সেই ধারণাতেই কার্যত শীলমোহর পড়ল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:১৩
দুবরাজপুরে ধৃতেরা। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

দুবরাজপুরে ধৃতেরা। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

দ্বন্দ্ব যাতে প্রকাশ্য না আসে তা নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মাথা ব্যাথার শেষ নেই। কিন্তু বারবরাই তা প্রকাশ্য আসছে। কেন না, পুলিশের ধারণা ছিল গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে খুন হয়েছেন খয়রাশোলের তৃণমূল নেতা অশোক মুখোপাধ্যায়। বুধবার রাতে বিরোধী গোষ্ঠীর অভিযুক্ত তিন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করার পর সেই ধারণাতেই কার্যত শীলমোহর পড়ল। ধৃত আব্দুর রহমান, আশিস ঘোষ এবং কিশোর মণ্ডল সকলেই তাঁদের দলের নেতাকর্মী বলে স্বীকার করে নিয়েছেন দলের জেলা সহসভপতি মলয় মুখোপাধ্যায়।

ধৃতদের বুধবার দুবরাজপুর আদালতে তোলা হলে ৯ দিন পুলিশ হেফাজত হয়। এসপি অলোক রাজোরিয়া বলেন, “প্রথমিক ভাবে মনে হয়েছে ধৃতেরা ঘটনায় যুক্ত এবং জেরা করলে সূত্র মিলতে পারে। তাই পুলিশ হেফাজত চাওয়া হয়েছিল।”

গত ১৬ অগস্ট রাতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন অশোক মুখোপাধ্যায়। নিহতের ছোট ছেলে বিশ্বজিত্‌ মুখোপাধ্যায় বিরোধী অশোক ঘোষ গোষ্ঠীর (যিনি গত বছর অগস্টে দুষ্কৃতীদের গুলিতেই খুন হয়েছিলেন) ৪৪ জনের বিরুদ্ধে বাবাকে খুন করার অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তের মধ্যে নাম ছিল নিহত অশোক ঘোষের ভাই ও ছেলে দীপক ও বিশ্বজিত্‌ ঘোষের। অভিযোগ হওয়ার পরে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তিনি বলেছিলেন, “এই খুনে কীভাবে বিশ্বজিত্‌ ও দীপকের নাম জড়াল!” কাজেই মূল অভিযুক্তদের না ধরার ক্ষেত্রে চাপ তৈরি হওয়ায় খুব ধীরে গতিতে এগোতে হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। কারণ, দিন কয়েক আগে খয়রাশোলে অশোক ঘোষ প্রতিষ্ঠিত তৃণমূল দলীয় কার্যালয়ে ঘোষ ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীদের উপরে হামলার ঘটনায় রাতারাতি পুলিশ অশোক মুখোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠদের গ্রেফতার করার পর পুলিশের উপর চাপ তৈরি হয় মুখোপাধ্যায় খুনে অভিযুক্তদের ধরার ব্যাপারেও।

এলাকা ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, খয়রাশোলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মূলত কয়লা কারবারের রাশ কার হাতে থাকবে তা নিয়ে। বিবাদ বা এলাকার দখলের লড়াই কারণ যাই থাক একটি খুন, তার পাল্টা খুনের ঘটনা সমানে চলছে খয়রাশোলে। বছর দু’য়েকের কিছু বেশি সময় ধরলে এ পর্যন্ত মোট ৬ জন নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। অশোক মুখেপাধ্যায়ের বিরোধী গোষ্ঠী বলে পরিচিত খয়রাশোলের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা অশোক ঘোষ খুন হওয়ার ঠিক মাস খানেক অর্থাত্‌ গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে আগে বাড়ি যাওয়ার পথে খুন হন দিলীপ ঘোষ নামে খয়রাশোলের এক তৃণমূল নেতা। যিনি অশোক ঘোষের বিরোধী বলে পরিচিত ছিলেন। ২০১২ সালের ২৮ মে এক ঘণ্টারও কম ব্যবধানে খুন হন দলের ৩ নেতাকর্মী।

এলাকাসূত্র ও রাজনৈতিক কারবারীদের কথা ধরলে, এখনও পর্যন্ত যতগুলো খুনের ঘটনা ঘটেছে সবেতেই মূলে রয়েছে খয়রাশোলের রমরমা কয়লা কারবারের দখলদারি। অবৈধ কয়লা কারবারের পাশাপাশি খয়রাশোলে দু’টি (একটি বছর কয়েক ধরে চালু রয়েছে, আরও একটি খোলামুখ কয়লা খনি গড়ার কাজ শেষ পর্যায়ে) খোলামুখ কয়লা খনির সত্ত্ব কাদের দখলে থাকবে সেটিকে ঘিরেই দ্বন্দ্ব চলেছে সমানে।

তবে নেতৃত্বের নির্দেশে পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে ঘোষ ও মুখোপাধ্যায়ের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য না এলেও ভোট পর্ব পেরিয়ে যাওয়ার পর আর চাপা থাকেনি। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির অধিকাংশ আসনে তাঁর অনুগামীরা জয়ী হয়েছেন বলে দাবি করেন অশোক ঘোষ। অন্য দিকে, অশোক মুখোপাধ্যায় ঠিক উল্টো দাবি করেন। সমস্যা মেটাতে যখন দলীয় নেতৃত্বের অলোচনা ব্যর্থ ঠিক তথনই খুন হন অশোক ঘোষ। মূল অভিযুক্ত হন মুখোপাধ্যায়-সহ ওঁর বেশ কিছু অনুগামী। দীর্ঘদিন বেপাত্তা থাকার পর গত ৩ মার্চ আদালতে জামিন পান অনুব্রত ঘনিষ্ঠ নেতা অশোক মুখোপাধ্যায়। লোকসভা নির্বাচনের পর বাড়িতে ফেরেন তিনি। দলের জেলা কমিটির সদস্য পদে থাকলেও খয়রাশোলের ব্লক সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এতদিন ক্ষমতা ভোগ করতে থাকা দীপক ঘোষদের পাশাপাশি মুখোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠরাও তাঁদের অধিকার দাবি করেন জেলা নেতৃত্বের কাছে। তৈরি হয় পাঁচ সদস্যর কমিটি। যাঁরা খয়রাশোল ব্লক পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন। কমিটির মধ্যে ঘোষ গোষ্ঠীর ৩ ও মুখোপাধ্যায় গোষ্ঠীর ২ জন সুযোগ পান। কিন্তু দ্বন্দ্ব তাতেও থামেনি। বরং বেড়েছে। সম্প্রতি খয়রাশোলের লোকপুর ফাঁড়ি ইনচার্জকে মারধর ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মুখোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠদের অনেকর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করলে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল মুখোপাধ্যায় অনুগামীরা। এই অবস্থায় নিজেদের জমি শক্ত করতে নেতৃত্বের কথা না শুনে মুখোপাধ্যায় খুনের ঘটনায় তাঁর অনুগামীরা বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও প্রভাবশালীদের পুলিশ ধরেনি। পুলিশের দাবি, সংখ্যা নিয়ে যেমন আপত্তি আছে, তেমনি প্রভাবশালীদের ধরে আরও সমস্যা বাড়তে পারে। সে জন্য কিছুটা ধীরে চলো নীতি নিয়েছে পুলিশ। দু’তিন জন ধরা পড়লেও তদন্তের জাল অনেকটাই গোটানো হয়ে গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

khoyrashol tmc leader murder case arrest latest news online news online news latest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy