Advertisement
২৭ জুলাই ২০২৪
প্রশ্নে সিউড়ি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক

রক্ত দিতে ‘দেরি’, মৃত্যু ক্যানসার আক্রান্তের

চিন্ময়ীর পরিবারের সদস্যদের দাবি, খবর পেয়ে সকাল ১০টা নাগাদ রক্তের নমুনা নিয়ে তাঁরা সিউড়ি সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে হাজির হন।

ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে প্রতিবাদ।

ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে প্রতিবাদ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:১৭
Share: Save:

এক ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগ উঠল সিউড়ি সদর হাসপাতালের বিরুদ্ধে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা নিয়ম মেনেই কাজ করেছেন। এ নিয়ে হাসপাতালের সুপারের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। রোগীর পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, আজ, মঙ্গলবার, সরকারি অফিস খুললে তাঁরা সিএমওএইচ এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতির কাছেও এ নিয়ে অভিযোগ জানাবেন।

পরিবার সূত্রে খবর, রবিবার ক্যানসারে আক্রান্ত চিন্ময়ী পাল (৪১) অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে সিউড়ির একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। চিন্ময়ীকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন বলে জানান চিকিৎসকেরা। তাঁর ব্লাড গ্রুপ ‘বি নেগেটিভ’। আত্মীয়েরা রক্তের খোঁজ শুরু করেন। তাঁরা ‘বীরভূম ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাহায্যও নেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিউড় সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে মাত্র এক ইউনিট ‘বি নেগেটিভ’ গ্রুপের রক্ত আছে।

চিন্ময়ীর পরিবারের সদস্যদের দাবি, খবর পেয়ে সকাল ১০টা নাগাদ রক্তের নমুনা নিয়ে তাঁরা সিউড়ি সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে হাজির হন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বীরভূম ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরাও। অভিযোগ, ব্লাড ব্যাঙ্কের তরফ থেকে তাঁদের জানান হয়, নমুনার পরিমাণ অল্প থাকায় সেটিকে পরীক্ষা করে রক্ত দেওয়া সম্ভব নয়। রোগীর আত্মীয়েরা আবার রক্তের নমুনা নিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কে ফিরে আসেন।

রোগীর পরিবারের অভিযোগ, প্রথমে ডোনার কার্ডে রক্ত দিতে রাজি হলেও পরে ডোনার ছাড়া রক্ত দেওয়া যাবে না বলে ব্লাড ব্যাঙ্কের তরফ থেকে জানানো হয়। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজার পরে দুপুর ২টো নাগাদ রক্তদাতা জোগাড় করে আবার ব্লাড ব্যাঙ্কে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, ডোনারকে প্রায় চার ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়।

শেষ পর্যন্ত রবিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ যখন রক্ত নিয়ে চিন্ময়ীর কাছে পৌঁছন সদস্যেরা। রক্ত দেওয়া শুরু হতেই মারা যান চিন্ময়ী। এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিবার ও ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা। মৃতার দিদি সাহা বলেন, “আমরা রক্তের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। ওর শরীরে রক্তের পরিমাণ অনেকটাই কমে গিয়েছিল। সময়ে রক্ত পাওয়া গেলে হয়তো ভাল হত।’’ ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক নুরুল হকের অভিযোগ, “সিউড়ি ব্লাড ব্যাঙ্কের দেরির মাসুল গুনতে হল রোগীকে। যে অমানবিক আচরণ আমাদের সঙ্গে করা হল, তার পর আর সারা বছর রক্ত আন্দোলনে যুক্ত থেকে কী লাভ? সারা বছর শিবির আয়োজন করে এমন ব্যবহার আমাদের প্রাপ্য ছিল না।”

যদিও ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যে এক ইউনিট বি নেগেটিভ গ্রুপে রক্ত তাঁদের কাছে মজুত ছিল, সেটি সদর হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক রোগীকে দিয়ে দিতে হয়। এর পরে নতুন এক ইউনিট রক্ত পাওয়া যায়। কিন্তু সেটিকে সমস্ত পরীক্ষা না করে ছাড়া সম্ভব নয়। সমস্ত পরীক্ষা করতে ঘণ্টা চারেক সময় লাগে। এ ক্ষেত্রেও সে সময়েই লেগেছে। সিউড়ি সদর হাসপাতালের চিকিৎসক তথা বর্তমানে ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত নারায়ণ করণ বলেন, ‘‘ঘটনার কথা শোনার পরে আমি সমস্ত তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে বুঝলাম আমাদের তরফ থেকে কর্তব্যে কোনও গাফিলতি নেই। যে অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়।’’

সোমবার বিকেলে অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সিউড়ি সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়। হাসপাতাল সুপার ও ব্লাড ব্যাঙ্কের এমওআইসিকে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। আজ সিএমওএইচ এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতির কাছেও অভিযোগের প্রতিলিপি জমা দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE