জয়ী: অনীষার পাশে মা মিতালীদেবী। ময়ূরেশ্বরে। ছবি: কল্যাণ আচার্য
বছর আটেক আগে ক্যানসার কেড়ে নিয়েছিল বাবাকে। মেয়ে তখন অনেক ছোট। কিন্তু আদরের পাশাপাশি পড়াশোনায় বাবার উৎসাহ দেওয়ার কথা ভুলতে পারেননি। তাই উচ্চমাধ্যমিকে ভাল ফলের কৃতিত্ব বাবাকেই উৎসর্গ করলেন অনীষা মণ্ডল।
পরীক্ষা ভাল হয়েছিল, তা-ই ভাল ফল নিয়ে সংশয় ছিল না। কিন্তু ফলপ্রকাশের দিন সব পরীক্ষার্থীরই চাপা উদ্বেগ থাকে। অনীষার সেই উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছিল লোডশেডিং। শুক্রবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যখন ফলপ্রকাশের খবর প্রচারিত হচ্ছিল, সেই সময় ময়ূরেশ্বরের শিপুরা গ্রামে অনীষাদের বাড়িতে ছিল না বিদ্যুৎ। পরিবারের অন্যদের সঙ্গে বন্ধ টেলিভিশনের সামনেই বসেছিলেন তিনি। সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ মল্লারপুর থেকে পিসি কৃষ্ণা মণ্ডল ফোনে খবর দেন— ময়ূরেশ্বরের কোটাসুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কলা বিভাগে ৪৮৩ নম্বর নিয়ে মেধা তালিকায় সম্ভাব্য অষ্টম অনীষা। এলাকায় ছড়ায় খুশির আমেজ।
১৩ জনের একান্নবর্তী পরিবার। বাবা আশিসকুমার মণ্ডল ছিলেন রাজনৈতিক কর্মী। ক্যানসারে তাঁর মৃত্যু হয়। তার পর থেকে ঠাকুরদা-ঠাকুমা, কাকু–কাকিমাদের কাছে বড় হন অনীষা। ঠাকুরদা গঙ্গাধরবাবু অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক। বড়কাকু সুব্রতবাবু পুলিশকর্মী। ছোটকাকু অমরেন্দ্রনাথবাবু কাজ করেন ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে। মা মিতালীদেবী গৃহবধূ। দিদি মনীষা এ বার অঙ্কে অনার্স নিয়ে পাশ করেছেন। ভাই আকাশ ৫৪৪ নম্বর নিয়ে কুসুমী হাইস্কুল থেকে এ বারই মাধ্যমিক পাশ করেছে। একই স্কুল থেকে ৬৩৩ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করে কোটাসুর হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন অনীষা।
ফলাফলের খবর ছড়াতেই ভিড় জমে বাড়িতে। কুসুমী হাইস্কুল, স্থানীয় কোচিং সেন্টারের শিক্ষক-শিক্ষিকারা হাজির হন। যান তৃণমূলের শিক্ষা সেলের প্রতিনিধিরা। কুসুমী হাইস্কুলের শিক্ষক সুমনশঙ্কর বর্ধন, কোচিং সেন্টারের শিক্ষক অমিতাভ ভদ্র জানান— শুধু লেখাপড়া নয়, খেলাধুলো, সাংস্কৃতিক চর্চাতেও অনীষা সমান পারদর্শী। সরস্বতী পুজোয় মণ্ডপসজ্জা, আলপনা দিতে তিনি-ই বড় ভরসা। একই কথা বলেন কোটাসুর হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মানিকলাল দাসের। তিনি বলেন, ‘‘ও আমাদের স্কুলের গর্ব। আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে।’’
অনীষার প্রিয় বিষয় ইংরেজি। ওই বিষয়েই পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে শিক্ষিকা হতে চান। ভর্তির জন্য আবেদন জানিয়েছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। কথা বলতে বলতেই আনন্দে চোখ ভিজলো দাদু গঙ্গাধরবাবুর। তিনি বলেন, ‘‘বাবাকে হারিয়েও ও যে এমন ফল করবে ভাবতে পারিনি।’’
অভিনন্দন, শুভেচ্ছায় এ দিন কার্যত ভাসলেন প্রত্যন্ত গ্রামের ওই বাসিন্দা। তা-ও মন কিছুটা খারাপ অনীষার। তিনি বলেন, ‘‘বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। হাত ধরে স্কুলে পৌছে দিতে যাওয়ার সময় বলত, ভাল করে পড়াশোনা করতে হবে। সেই কথা আজ রাখতে পেরেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy