Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অভিষেকের বার্তা, তবু পঞ্চায়েতে এল অনাস্থা

যা অভিষেকের বাঁকুড়ায় দ্বিতীয় দিনের বৈঠকের মধ্যে জেলা নেতৃত্বকে প্রবল অস্বস্তিতে ফেলে দিল।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:০০
Share: Save:

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটিয়ে সবাইকে এক সাথে চলতে হবে— রাতে বৈঠকে সোনামুখীর দলীয় কর্মীদের এই নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সকালেই দেখা গেল উল্টো ছবি। সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সোনামুখীর মানিকবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার অনাস্থার প্রস্তাব জমা দিলেন তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশ! যা অভিষেকের বাঁকুড়ায় দ্বিতীয় দিনের বৈঠকের মধ্যে জেলা নেতৃত্বকে প্রবল অস্বস্তিতে ফেলে দিল।

মানিকবাজার পঞ্চায়েতের অনাস্থার খবর পেয়ে অভিষেক ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলেই দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের এক নেতার দাবি, “এই অনাস্থা ডাকার প্রক্রিয়া অবৈধ। এর কোনও গুরুত্বই নেই।” বিডিও (সোনামুখী) রিজওয়ান আহমেদ বলেছেন, “মানিকবাজার পঞ্চায়েতের কিছু সদস্য একটি অনাস্থার আবেদন জমা দিয়েছেন বলে শুনেছি। আদৌ আবেদন গ্রহণযোগ্য কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।”

পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে বুধবার থেকে দু’দিনের জেলা সফরে এসেছিলেন অভিষেক। দ্বন্দ্ব মেটাতে বিধানসভা ভিত্তিক ব্লক ধরে ধরে তিনি বৈঠক করেন দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। বুধবারই সোনামুখী ব্লক নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন যুযুধান নেতা-নেত্রী সোনামুখীর প্রাক্তন বিধায়ক দীপালি সাহা ও সোনামুখীর পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ও। দু’পক্ষকেই এক সাথে দলের কাজ করার নির্দেশ দেন অভিষেক। যদিও মানিকবাজার পঞ্চায়েতের অনাস্থা আনার পিছনে এই দুই নেতা- নেত্রীর দ্বন্দ্বই দায়ী বলে দাবি করছেন সোনামুখীর তৃণমূল কর্মীদের অনেকে। বিষয়টি নিয়ে দু’জনেই মেপে মন্তব্য করেছেন। সুরজিৎবাবুর বক্তব্য, “দলবিরোধী কাজ যাঁরা করবেন, দলই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আমার কিছুই বলার নেই।” আর দীপালিদেবী অনাস্থা প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

সোনামুখী ব্লক তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই পঞ্চায়েতের প্রধান কদম লোহার সুরজিৎবাবুর অনুগামী বলেই পরিচিত। বর্তমানে মানিকবাজার পঞ্চায়েতের সাতটি আসনের মধ্যে চারটি তৃণমূলের, দু’টি বামফ্রন্টের ও একটি আসন নির্দল প্রার্থীর দখলে রয়েছে। প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছেন পঞ্চায়েতের দু’জন তৃণমূল, দু’জন বামফ্রন্ট ও একজন নির্দল সদস্য। ওই পঞ্চায়েতে কেন অনাস্থা আনা হল?

তৃণমূলের মানিকবাজার এলাকার নেতা দীপালি-ঘনিষ্ঠ কার্তিক গড়াইয়ের অভিযোগ, “মানিকবাজার অঞ্চল সভাপতি হিসেবে অভিষেকের বৈঠকে যাওয়ার ডাক পেয়েছিলাম। কিন্তু নিজেদের পিঠ বাঁচাতেই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কারসাজি করে ওই বৈঠকে আমাকে ঢুকতেই দিলেন না। সুযোগ পেলে পর্যবেক্ষকের সামনে এই পঞ্চায়েতের প্রধান ও সোনামুখী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির সব দুর্নীতি ফাঁস করে দিতাম।’’ তাঁর বক্তব্য, এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েই মানিকবাজার পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যেরা অনাস্থা এনেছেন। বিরোধীরা কেন অনাস্থায় সায় দিলেন? কার্তিকবাবু বলেন, “প্রধানের দুর্নীতি কেউ মেনে নিতে পারছেন না বলেই অনাস্থায় তাঁরা সায় দিয়েছেন।”

সোনামুখী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তপন হাজরার দাবি, “কার্তিকবাবু সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ আনছেন। আদপে উনি কোনও দিনই মানিকবাজারের অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন না।” তিনি যুক্ত করেন, “অভিষেকের সভায় কে বা কারা যাবেন, তা ঠিক করার অধিকার আমার নেই। তাহলে কী করে আমি তাঁর নাম বাদ দেব?’’ বাঁকুড়া জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘সিপিএমের হয়ে যাঁরা অনাস্থায় সই করেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে, আদপে তাঁরা বহুদিন আগেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE