Advertisement
০২ মে ২০২৪
বৃদ্ধ খুনে দাবি পুলিশের

ডাইন অপবাদেই সুপারি দিয়ে খুন

কুসংস্কারের বশেই সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধকে খুন করতে সুপারি কিলার লাগানো হয়েছিল। রাইপুরের রূপচাঁদ মান্ডি খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে দু’জনকে গ্রেফতারের পরে এমনই দাবি করছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, এখনও পর্যন্ত তদন্তে উঠে এসেছে ওই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে ডাইন অপবাদ দিয়ে খুন করা হয়েছে।

রাইপুর কাণ্ডে ধৃত পূর্বনাথ সোরেন ও কার্তিক মুর্মু।—নিজস্ব চিত্র

রাইপুর কাণ্ডে ধৃত পূর্বনাথ সোরেন ও কার্তিক মুর্মু।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রাইপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ০৭:৪৭
Share: Save:

কুসংস্কারের বশেই সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধকে খুন করতে সুপারি কিলার লাগানো হয়েছিল। রাইপুরের রূপচাঁদ মান্ডি খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে দু’জনকে গ্রেফতারের পরে এমনই দাবি করছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, এখনও পর্যন্ত তদন্তে উঠে এসেছে ওই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে ডাইন অপবাদ দিয়ে খুন করা হয়েছে। আর সেই খুনে জড়িয়ে গিয়েছেন তাঁরই আত্মীয়েরা।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম পূর্বনাথ সোরেন ও কার্তিক মুর্মু। পূর্বনাথ সম্পর্কে নিহতের মেজভাইয়ের ছোট জামাই। তার বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড় থানার পাপুড়িয়া গ্রামে। পুলিশ তাকে আগেই আটক করেছিল। বছর চব্বিশের কার্তিকের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড় থানার বাবুইডাঙা গ্রামে। সেও ওই খুনে জড়িত বলে পুলিশ জানিয়েছে। সোমবার রাতে বাড়ি থেকে তাকে ধরা হয়। মঙ্গলবার তাদের খাতড়া আদালতে তোলা হয়। বিচারক ধৃতদের আটদিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এ দিন অভিযুক্তদের পরিবারের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

বাঁকুড়া জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “নিহতের মেজ ভাই মোহন মান্ডি ও ভাইপো বাবুলাল মান্ডি কয়েক মাস আগে মারা যান। তাঁদের মৃত্যুর জন্য রূপচাঁদবাবু ও তাঁর স্ত্রী-কে দায়ী করেছিলেন মোহনবাবুর পরিবার। ডাইনবিদ্যার তুকতাক করেই ওই দু’জনকে মেরে ফেলা হয়েছে, নিছক এই সন্দেহের বশেই অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষককে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য মিলেছে। ধৃতদের জেরা করে এই খুনের পিছনে আরও কয়েকজন রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হবে। বাকি অভিযুক্তদেরও ধরার চেষ্টা চলছে।”

রবিবার ভোরে বাঁকুড়ার রাইপুর থানার পচামি গ্রামের বাসিন্দা রূপচাঁদ মান্ডি (৭০) বাড়ির অদূরে শৌচকর্ম করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। সে দিন দুপুরে নিহতের স্ত্রী কল্যাণী মান্ডি তাঁর মেজ জা হীরামণি মান্ডি এবং জায়ের তিন জামাই মনোহর মুর্মু, কালীপদ মুর্মু ও পূর্বনাথ সোরেনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সোমবার ভোরেই অভিযুক্ত তিন জামাইকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে রাতে পূর্বনাথকে গ্রেফতার করলেও বাকি দুই জামাইকে অবশ্য এখনও গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

অপর ধৃত কার্তিক মুর্মুর নাম অবশ্য এফআইআর-এ নেই। পুলিশের এক আধিকারিকের দাবি, পারিবারিক বিবাদের কারণেই রূপচাঁদবাবুকে খুনের ছক কষার কথা পূর্বনাথ জেরায় তাঁদের কাছে স্বীকার করেছে। খুনের জন্য বাইরে থেকে লোক ভাড়া করা হয়েছিল। পরিকল্পনা করেই যে এই খুন তা স্পষ্ট। এখন বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

নিহতের ছোট মেয়ে সাগুন অবশ্য প্রথম থেকেই এই খুনের পিছনে তাঁর মেজকাকিমা ও তাঁদের তিন জামাইয়ের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। সাগুনের অভিযোগ, “মেজ কাকা ও খুড়তুতো ভাই বাবুলালের মৃত্যুর পর থেকেই আমার বাবা-মাকে দায়ী করে নানা অপবাদ দিচ্ছিল ওরা। এমনকী আমাদের খুন করারও হুমকি দিয়েছিল ওরা। প্রথম দিকে আমরা ওসব হুমকি পাত্তা দিইনি। কিন্তু বাবাকে খুনের পর বুঝতে পারছি ওরাই ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে এ সব করিয়ে আমাদের পরিবারটাকে শেষ করে দিতে চাইছে।”

পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক তদন্তের পরে ধৃতদের জেরা করেও সাগুনের অভিযোগ অনেকাংশেই ঠিক বলে প্রমাণ মিলেছে। রূপচাঁদবাবু যে প্রতিদিন ভোরে গ্রামের ওই মাঠে শৌচকর্ম করতে যেতেন তা আততায়ীরা জানত। সেই সময়েই তাঁকে ‘টার্গেট’ করে খুনের ছক কষা হয়। কয়েকদিন তাঁর গতিবিধির উপর নজর রেখে সুযোগ বুঝে রবিবার সকালেই গুলি চালিয়ে খুন করা হয় তাঁকে। এই কাজে পরিচিত লোকজনও ছিল। আততায়ীরা কাজ সেরে ওই পরিচিত লোকের সাহায্যেই এলাকা ছাড়ে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, খুনের কারণ তাঁদের কাছে মোটামুটি পরিষ্কার। এখন ঘটনায় যুক্ত বাকিদের ধরার চেষ্টা চলছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু পুলিশ জানাতে চাইছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Witch Police arrested
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE