Advertisement
E-Paper

মঞ্চে বক্তা কৃষকেরা, শুনলেন কৃষি-কর্তারা

কৃষি দফতরের সঙ্গে সেচ দফতরের সমন্বয় কি নেই? কৃষকদের সাহায্য করতে সহায়ক মূল্যে সরকার ধান কিনলে বিভিন্ন পঞ্চায়েতে ক্রয়কেন্দ্র কেন খোলা হচ্ছে না? বীরভূম বীজ উৎপাদনের জন্য আদর্শ হলেও কেন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে আরও বেশি চাষিকে ওই কাজে লাগানো হচ্ছে না?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪৬
বক্তা: সিউড়ি কৃষিমেলায় নিজেদের কথা বলছেন কৃষকেরা। নিজস্ব চিত্র

বক্তা: সিউড়ি কৃষিমেলায় নিজেদের কথা বলছেন কৃষকেরা। নিজস্ব চিত্র

মঞ্চে দাঁড়িয়ে একের পর এক প্রশ্ন তুলছেন চাষিরা।

কৃষি দফতরের সঙ্গে সেচ দফতরের সমন্বয় কি নেই? কৃষকদের সাহায্য করতে সহায়ক মূল্যে সরকার ধান কিনলে বিভিন্ন পঞ্চায়েতে ক্রয়কেন্দ্র কেন খোলা হচ্ছে না? বীরভূম বীজ উৎপাদনের জন্য আদর্শ হলেও কেন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে আরও বেশি চাষিকে ওই কাজে লাগানো হচ্ছে না?

বৃহস্পতিবার সিউড়ি মহকুমা কৃষিমেলা প্রাঙ্গণে হাজির কৃষিকর্তাদের কাছে এমনই অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলেন তাঁরা।

এত দিন চাষিদের একতরফা ভাবে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন কৃষিকর্তারা। যাঁদের জন্য এত পরিকল্পনা, সেই কৃষিজীবীদের কথা বলার কোনও মঞ্চ ছিল না এত দিন। তার ব্যতিক্রম হলো এ বার। জেলার বিভিন্ন ব্লক ও মহকুমায় ‘মাটি, কৃষি, উদ্যানপালন, মৎস্য, কৃষি বিপণন, সমবায় ও প্রাণী সম্পদ মেলা’য় এ বার প্রথম চাষিদের মতামত, পরামর্শ এবং তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনেছে কৃষি দফতর। কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চান, যাঁদের কথা ভেবে এত পরিকল্পনা— সেই কৃষিকদের কথা আগে শুনতে হবে। নীতি নির্ধারণে যা সহায়ক ভূমিকা নেবে। মতবিনিময়ের মাধ্যমে নীতি ঠিক হলে আরও বেশি করে উপকৃত হবেন চাষিরা।’’

এমন সুযোগ পেয়ে সিউড়ি মহকুমা কৃষিমেলায় কী কী বললেন এলাকার চাষিরা? ভূরকুনার ভক্তদাস দে, দোলগোবিন্দপুরের সুভাষচন্দ্র মণ্ডল, আলুন্দার শেখ মনিরুদ্দিন, নগরীর কৃপাসিন্ধু মণ্ডল, লিয়ারার শেখ ফিরোজ খান বা চাঙ্গুরিয়ার নিতাই দাসদের কথায় উঠে এল নানা প্রসঙ্গ। তাঁরা বললেন— ‘চাষ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সেচ। কিন্তু কৃষি ও সেচ দফতরের সমন্বয়ের অভাবে চাষিরা সময়মতো জানতেই পারেন না কখন থেকে কোন এলাকা বা মৌজায় সেচের জল মিলবে। কোনও একটি ফসল লাগানোর অন্তত দু’মাস আগে সেচ দফতর কোথায়, কত জল দেবে তা জানা জরুরি। কিন্তু ঠিক সময়ে খবর না পেয়ে সমস্যায় পড়েন চাষি।

ধান কেনা নিয়ে সরকারি উদ্যোগকে আরও ক্ষুদ্র-পর্যায়ে নামিয়ে আনার প্রসঙ্গ তোলেন চাষিরা। তাঁদের কথায়, ‘‘অভাবে চাষিরা যাতে আড়ৎদারের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য না হন, সে জন্যই সরকার সহায়ক মূল্যে ধান কেনে। কিন্তু জেলার ব্লকে ব্লকে একটি কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে যাওয়ার হয়রানি এড়াতে অনেক প্রান্তিক চাষি আড়ৎদারদের কাছেই কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন।

জেলায় বীজ উৎপাদনে আরও বেশি সংখ্যক কৃষিজীবীকে সামিল করতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার জন্য কৃষি দফতরকে অনুরোধ জানানো হয়। চাষিদের কথায়, ‘‘বীজ উৎপাদেন বীরভূম যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। তাতে বেশি লাভ হবে চাষিদের।

তাঁদের বক্তব্যে জৈব ও সময়োপযোগী চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা, চাষের কাজে মহিলাদের আরও বেশি করে সামিল করানোর পরিকল্পনা, মাটি পরীক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলার মতো বিভিন্ন প্রসঙ্গও তোলেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকে ব্লকে বা জেলার তিনটি মহকুমায় ‘মাটি, কৃষি, উদ্যানপালন, মৎস্য, কৃষি বিপণন, সমবায় ও প্রাণী সম্পদ মেলা ২০১৭’-এ দু’ভাবে চাষিদের কথা শোনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথমত, চাষিদের কথা বলার জন্য একটি পৃথক মঞ্চ গড়ে দেওয়া হয়েছে। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে চাষিরা তাঁদের মতামত জানাবেন বা পরামর্শ দেবেন। দ্বিতীয়ত, একটি ছাপানো তালিকা দিয়ে চাষিদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে কৃষিমেলা কেমন হলো, মেলায় আরও কী করলে ভাল হয়। এ ছাড়াও চাষিদের নিজস্ব ভাবনা বা পরামর্শ লিখে জানাতে বলা হয়েছে তাতে। কৃষিকর্তারা জানিয়েছেন, পূরণ করা ওই তালিকা এবং চাষিদের মতামত, পরামর্শ বা সুবিধা-অসুবিধার কথা সরকারের উচ্চমহলে পাঠানো হবে। জেলার কৃষিকর্তা এবং চাষি, উভয়েরই বক্তব্য— এটিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

Farmers Agriculture
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy