Advertisement
E-Paper

এফআইআর নিতে ঘোরাচ্ছে থানা

কখনও থানায় হামলায় ফেরার তৃণমূল নেতাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কখনও আবার বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের কাছে পেটো উদ্ধার হওয়ার অভিযোগে বিস্ফোরক আইনের মারাত্মক ধারা দিয়ে দেওয়া হয়। বীরভূম পুলিশের এমন নানা কাণ্ডকারখানার সঙ্গে জুড়ল এ বার এক স্কুল শিক্ষিকার নামও। প্রতারণা চক্রের শিকার হওয়া ওই মহিলাকে দু’দিন ধরে ঘোরানোর পরেও অভিযোগ নিচ্ছে না থানা।

মহেন্দ্র জেনা

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৫ ০২:২৬

কখনও থানায় হামলায় ফেরার তৃণমূল নেতাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কখনও আবার বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের কাছে পেটো উদ্ধার হওয়ার অভিযোগে বিস্ফোরক আইনের মারাত্মক ধারা দিয়ে দেওয়া হয়।

বীরভূম পুলিশের এমন নানা কাণ্ডকারখানার সঙ্গে জুড়ল এ বার এক স্কুল শিক্ষিকার নামও। প্রতারণা চক্রের শিকার হওয়া ওই মহিলাকে দু’দিন ধরে ঘোরানোর পরেও অভিযোগ নিচ্ছে না থানা। উল্টে, কখনও কলকাতায় গিয়ে কখনও আদালতে গিয়ে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এমনই অভিযোগ তুলে শান্তিনিকেতনের রতনপল্লির বাসিন্দা, পাপড়ি বসাক নামে ওই শিক্ষিকা ফ্যাক্স মারফত অভিযোগ পাঠিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপারের কাছে। চিঠি পাঠিয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও।

পেশায় কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক ওই শিক্ষিকা শনিবার দাবি করেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি মোবাইল নম্বর তাঁর কাছে ফোন আসে। তাঁর কথায়, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে বলছি জানিয়ে এক ব্যক্তি বারবার করে ফোন করে আমার কাছ থেকে এটিএম কার্ডের নম্বর জানতে চায়। নম্বর না দিলে কার্ড ব্লক হয়ে যাবে বলেও জানায়। আমি কোনও কিছু বুঝতে না পেরে তাঁকে নম্বরটি জানিয়ে দিই।’’ পাপড়িদেবীর অভিযোগ, এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তাঁর ফোনে ব্যাঙ্ক থেকে মেসেজ আসে। তাতে লেখা রয়েছে, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৯,৯৯৯ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরেই অভিযোগ জানাতে মহিলা ছোটেন শান্তিনিকেতন তদন্ত কেন্দ্রে। মহিলার দাবি, সব শোনার পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার বোলপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জানাতে বলেন। পাপড়িদেবী বলেন, ‘‘অফিসারের পরামর্শ মেনে বোলপুর থানায় যাই। কিন্তু, ওই থানায় সেই সময়ে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার এক বার জানান, বোলপুরে অভিযোগ জানালে হবে না। কলকাতার সাইবার সেলে অভিযোগ করতে হবে। আবার পরক্ষণেই জানান বোলপুর আদালতে সিআর কেস করতে হবে।’’

অভিযোগ নথিভুক্ত করতে না পেরে ওই রাতে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। তার পরেই কলকাতার সাইবার ক্রাইম বিভাগের এক অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। স্বাভাবিক ভাবেই তিনি বোলপুর থানাতেই অভিযোগ দায়ের করতে বলেন। মহিলার অভিযোগ, ‘‘ফের শুক্রবার বোলপুর থানায় এফআইআর করতে যাই। সেখানে আমাকে বিকেলে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসিয়ে রাখা হয়। থানা থেকে বলা হয় বড়বাবু নেই। এলে অভিযোগ হবে। বহু রাত পর্যন্ত কোনও কিছু না হওয়ায় বাড়ি ফিরে আসি।’’ গত দু’দিন ধরে একই অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়ে শেষমেশ শনিবার এসপি অফিসে ফ্যাক্স মারফত অভিযোগ জানান পাপড়িদেবী। চিঠি পাঠিয়ে বিচার চান মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও।

খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, যে নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছে, তা বিহার ও ঝাড়খণ্ড রিজিওনের। একটি ফোন বেজে গেলেও কেউ ধরেনি। বাকিগুলি বন্ধ করা রয়েছে। এ দিকে, গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে জেলা পুলিশ। এ দিন শান্তিনিকেতন তদন্ত কেন্দ্রের আইসি পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়, বোলপুর থানার আইসি প্রবীরকুমার দত্ত থেকে বোলপুরের এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ— কেউ-ই ফোন ধরেননি। এমনকী এসএমএস-এরও জবাব দেননি। একই অভিজ্ঞতা হয়েছে এসপি মুকেশ কুমারের ক্ষেত্রেও।

ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই পুলিশের নিন্দায় সরব হয়েছে সব বিরোধী দল। এমনকী, বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শাসকদলেহর নেতারাও। কংগ্রেসের বোলপুর ব্লক সভাপতি মহম্মদ জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, “এমন কোনও দিন শুনিনি। যে এলাকায় ঘটনা ঘটছে, সেই এলাকায় অভিযোগ না নিয়ে রাজ্যের রাজধানীতে পাঠানো হচ্ছে! তৃণমূলের জমানায় মা-মাটি-মানুষকে আরও অনেক কিছু দেখার বাকি আছে।” অন্য দিকে, বিজেপি-র অন্যতম সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “এটাই প্রত্যাশিত। আসলে দিদি আর দাদাদের নির্দেশ না পেলে পুলিশ কী করে কাজ করবে!’’ আর সিপিএমের বোলপুর জোনাল সম্পাদক উৎপল রুদ্রের কটাক্ষ, “অভিযোগ না নিয়ে থানা তো সাধারণ মানুষদের ফেরাবেই। থানার কাজই হচ্ছে শুধু শাসকদলের হয়ে কথা বলা। তাদের নেতাদের নিরাপত্তা জুগিয়ে দেওয়া। এলাকায় চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি, খুন, সন্ত্রাস যা-ই হোক না কেন, তাদের কোনও হেলদোল নেই।’’ অভিযোগ না নিয়ে পুলিশ ঠিক কাজ করেনি বলেই মনে করছেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শেখ রহিম চৌধুরী থেকে শুরু করে দলের জেলা যুব সভাপতি তথা বোলপুরের উপ-পুরপ্রধান নরেশচন্দ্র বাউড়িও।

দিনের শেষে পাপড়িদেবীর ক্ষোভ, ‘‘এক জন শিক্ষিকাকে অভিযোগ জানাতে এ রকম হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে। বর্তমান সমাজে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁরা শিক্ষার আলোর বাইরে। তাঁদের কী অবস্থা হয়, সহজেই অনুমান করতে পারি!’’

santiniketan police bolpur birbhum trinamool rahim chowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy