Advertisement
E-Paper

দশের কয়েন না নেওয়ার নালিশ আদ্রায়

দশচক্রে ভগবান ভূত! দশ টাকার কয়েন জাল হওয়ার গুজবের সঙ্গে লড়তে গিয়ে এই প্রবাদটির মর্ম টের পাচ্ছেন অনেকে। তার উপরে পুরুলিয়ার আদ্রার ব্যবসায়ীদের একাংশ অভিযোগ তুলেছেন, কিছু ভূত লুকিয়ে আছে সর্ষের মধ্যেই। ব্যাঙ্ক কর্মীদের একাংশই নাকি দশ টাকার কয়েন নিতে চাইছেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৩৭

দশচক্রে ভগবান ভূত! দশ টাকার কয়েন জাল হওয়ার গুজবের সঙ্গে লড়তে গিয়ে এই প্রবাদটির মর্ম টের পাচ্ছেন অনেকে। তার উপরে পুরুলিয়ার আদ্রার ব্যবসায়ীদের একাংশ অভিযোগ তুলেছেন, কিছু ভূত লুকিয়ে আছে সর্ষের মধ্যেই। ব্যাঙ্ক কর্মীদের একাংশই নাকি দশ টাকার কয়েন নিতে চাইছেন না। অন্য দিকে, দশ টাকার কয়েন নেওয়ার জন্য আবেদন করতে পথে নামতে হয়েছে বাঁকুড়ায় বণিকসভাকেও। সব মিলিয়ে, এখনও গুজব পিছু ছাড়ছে না দুই জেলার।

সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে সমস্ত দশ টাকার কয়েন বৈধ। তার পরেও অনেকে এই কয়েন নিতে চাইছেন না বলে আদ্রায় অভিযোগ উঠে আসতে শুরু করে। দোষ কার? শহরের দোকানদারদের একাংশের অভিযোগ, তাঁরা যে সমস্ত বড় দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনে আনেন সেখানে দশ টাকার কয়েন নেওয়া হচ্ছে না। চন্দন গুপ্ত এবং দিলীপ মোদি নামে দুই দোকানদার বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া দশ টাকা কয়েন নিয়ে অনেকে আমাদের কাছে জিনিসপত্র কিনতে আসছেন। আমরা জানি কয়েনগুলি বৈধ। কিন্তু আড়তদারেরা নেবে না বলে আমরাও নিতে পারছি না।’’

এই ভাবে অস্বীকার করার দায় গড়িয়ে পৌঁছেছে খোদ ব্যাঙ্ক পর্যন্ত। জেলার বিভিন্ন আড়তাদেরা জানান, বিভিন্ন কোম্পানি থেকে জিনিস আনানোর জন্য ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে তাঁদের টাকা পাঠাতে হয়। পাঁচশো এবং হাজারের নোট বাতিলের পরে খুচরো টাকায় ডিমান্ড ড্রাফট কাটতে হচ্ছে তাঁদের। পঞ্চাশ হাজার টাকার ড্রাফট কাটার জন্য একশো বা পঞ্চাশের নোটের সঙ্গে দশ টাকার কয়েন মিলিয়ে নগদ দিচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু অভিযোগ, ড্রাফট কাটার সময়ে ব্যাঙ্কের কাউন্টারে থাকা কর্মীদের একাংশ দশ টাকার কয়েন নিতে চাইছেন না। ওই ব্যবসায়ীদের দাবি, আদ্রা থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁদের সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের সঙ্গে বিষয়টি বুঝে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পাঁচশো ও একহাজার টাকার নোট বাতিলের পরে ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে গিয়ে গ্রাহকেরা অনেক দশ টাকার কয়েন পাচ্ছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলি একশোটি কয়েনের প্যাকেট— মোট দু’হাজার টাকা। তাহলে কয়েন দিয়েও নেওয়ার বেলায় আপত্তি কেন ব্যাঙ্কের? আদ্রার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, গোনার ঝক্কি এড়াতেই অনেক ব্যাঙ্ক কর্মী কয়েন নিতে চাইছেন না। কিছু ব্যাঙ্ক কর্মীর দাবি, দশ টাকার কয়েনে এক সঙ্গে হাজার পাঁচেক টাকা গুনতে অনেকটা সময় চলে যায়। নোট হলে মেশিনে গোনা যায়। কয়েনে সেটা করারও জো নেই— গুনতে হবে হাতে হাতেই।

কিছু ব্যাঙ্ক কর্মীর দাবি, এমনিতেই নোট বাতিলের পর থেকে গ্রাহকদের ভিড় সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন তাঁরা। প্যাকেট করা থাকে বলে কয়েন দেওয়ার সময় অসুবিধা হয় না। কিন্তু বড় অঙ্কের টাকা দশ টাকার কয়েনে নেওয়ার সময় সেই সুযোগ থাকে না। তাই কয়েন গুনতে গিয়ে দেরি হয়ে যদি গ্রাহকদের টাকা দিতে দেরি হয়, আর তার জেরে গ্রাহকদের অসন্তোষে এত দিন ধরে সামলে রাখা শৃঙ্খলা পাছে দুম করে ভেস্তে যায়— এই ভেবেই তাঁরা দশ টাকার কয়েন অনেক সময় ফিরিয়ে দিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন।

কিন্তু এই পুরো সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে সাধারণ মানুষ। আদ্রার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘দশ টাকার কয়েন নিয়ে ছুঁচো গেলার মতো অবস্থা হয়েছে আমাদের। লেনদেনই যদি না করা গেল, তাহলে বৈধ আর অবৈধতে ফারকটা কী রইল!’’

বাঁকুড়ায় পথে নামল বণিক সভা

দশ টাকার কয়েন নিয়ে বিভ্রান্তি কাটাতে এ বার বাঁকুড়া শহরে প্রচারে নামল বণিকসভা। সোমবার বাঁকুড়া চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের তরফে পুরশহরে মাইকি নিয়ে প্রচার করে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের কাছে নির্ভয়ে লেনদেন করার আবেদন করা হয়। সংগঠনের বাঁকুড়ার সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপা বলেন, “কোনও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দশ টাকার কয়েন না নেওয়ার অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হলে বণিকসভা তাঁর পাশে দাঁড়াবে না। তবে ক্রেতারদেরও এই কয়েন নিতে হবে।’’

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দশ টাকার সমস্ত কয়েন বৈধ বলে জানানোর পরেও পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি বলে জেলার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি। পুরশহরে প্রচারের ফলে যে গোটা জেলা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা গুজব থেমে যাবে না সেই কথা মেনে নিয়েছেন মধুসূদনবাবু। তিনি জানান, জেলা জুড়ে সচেতনতা প্রচারের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। বাঁকুড়া শহরের পথেও ফের ট্যাবলো নিয়ে নামা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

10 rupees coin
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy