Advertisement
০৫ মে ২০২৪

প্রার্থীর বিরুদ্ধে বেনিয়মের নালিশ

তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে তিনি পুরভোটে নির্দল হয়ে লড়ছেন। ঠিক পুরভোটের মুখে এ বার রঘুনাথপুরের সেই বিদায়ী কাউন্সিলর সাধনা মোহান্ত-র বিরুদ্ধে শ্রমিকদের নামে টিপছাপ দিয়ে কর্মসংস্থান তৈরির একটি প্রকল্পের অর্থ তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠল। সোমবার সাধনাদেবী ও তাঁর স্বামী প্রাক্তন তৃণমূল কর্মী বিজয় মোহান্তর বিরুদ্ধে রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের কাছে গণস্বাক্ষর করে সই জাল করে টাকা তোলার অভিযোগ জানিয়েছেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের জনা পঞ্চাশেক শ্রমিক। সাধনাদেবী ওই ওয়ার্ড থেকেই এ বারও লড়ছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৩
Share: Save:

তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে তিনি পুরভোটে নির্দল হয়ে লড়ছেন। ঠিক পুরভোটের মুখে এ বার রঘুনাথপুরের সেই বিদায়ী কাউন্সিলর সাধনা মোহান্ত-র বিরুদ্ধে শ্রমিকদের নামে টিপছাপ দিয়ে কর্মসংস্থান তৈরির একটি প্রকল্পের অর্থ তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠল। সোমবার সাধনাদেবী ও তাঁর স্বামী প্রাক্তন তৃণমূল কর্মী বিজয় মোহান্তর বিরুদ্ধে রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের কাছে গণস্বাক্ষর করে সই জাল করে টাকা তোলার অভিযোগ জানিয়েছেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের জনা পঞ্চাশেক শ্রমিক। সাধনাদেবী ওই ওয়ার্ড থেকেই এ বারও লড়ছেন।

সাধনাদেবীর বিরুদ্ধে বিষয়টি নিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছে কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএমের প্রার্থীরা। পিছিয়ে নেই তৃণমূলও। অপপ্রচার বলে দাবি করেছেন সাধনাদেবী ও বিজয়বাবু। রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক সুরেন্দ্রকুমার মিনা বলেন, ‘‘শ্রমিকদের অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত করা হবে।”

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন বছর আগে ১ নম্বর ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় সরকারের এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন স্কিমে কয়েক লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে পুকুর সংস্কার, নর্দমা তৈরির মতো বিভিন্ন কাজ হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছে এই প্রকল্পেই মাস্টাররোলে শ্রমিকদের সই জাল করে টাকা তুলে নিয়েছেন শাসকদলের ওই বিদায়ী কাউন্সিলর। ওই ওয়ার্ডের মুন্সেফডাঙা এলাকার শ্রমিকদের একাংশের দাবি, তাঁদের সই জাল করে মজুরির টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এতে জড়িত বিদায়ী কাউন্সিলর ও তাঁর স্বামী-সহ আরও কয়েকজন। মূলত অভিযোগটা উঠেছে ১ নম্বর ওয়ার্ডে কফির বাঁধ, তাঁতী পুকুর সংস্কারের কাজে টাকা নয়ছয় করা নিয়ে।

শ্রমিকদের মধ্যে দুলাল বাউরি, সাগর বাউরি, বাপি বাউরি, সুবল রজকদের অভিযোগ, ‘‘প্রথমত ১ নম্বরের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও তাঁর স্বামী ওই প্রকল্পে পুকুরগুলির মাটি কাটিয়েছেন যন্ত্রের সাহায্যে। দ্বিতীয়ত আমরা কাজ করিনি অথচ আমাদের কাজে লাগানো হয়েছে বলে মাস্টার রোল তৈরি করা হয়েছে। তৃতীয়ত আমাদের সই জাল করে মজুরির টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।’’ এমনকী মাস্টাররোলে মৃত ব্যক্তির নামও রয়েছে বলে তাঁদের দাবি। এক শ্রমিক সমীর বাউরির দাবি, মাস্টার রোলে তাঁর মৃত বাবা মদন বাউরির নাম রয়েছে। দুলালবাবুরা বলেন, ‘‘সম্প্রতি ওই মাস্টাররোলগুলি হাতে পাওয়ার পরেই দেখা গিয়েছে যে সমস্ত শ্রমিকদের নামের পাশে টিপসই দিয়ে টাকা তোলা হয়েছে তাঁরা আদৌও কাজই করেননি।” ওই শ্রমিকদের আরও দাবি, তিন বছর আগে যন্ত্র দিয়ে যখন পুকুর সংস্কারের কাজ হয়েছিল তখন তাঁদের জানানোই হয়নি, ওই প্রকল্পে যন্ত্র নয়, মানুষকে কাজ দেওয়াই মূল উদ্দেশ্য।

স্থানীয় সূত্রের খবর, বিষয়টিকে প্রকাশ্যে আনার মূল হোতা ওই ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী তারকনাথ পরামানিক। মাস্টাররোল-সহ অন্যান্য নথি তিনিই প্রথম প্রকাশ্যে এনেছেন.এবং তারপরেই শ্রমিকদের জড়ো করে তাঁদের দিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করানোর নেপথ্যে অন্যতম ভূমিকা নিয়েছেন সেখানকার তৃণমূলের প্রার্থী তথা শহরের যুব নেতা ভবেশ চট্টোপাধ্যায়। তবে ঘটনা হল, নির্বাচনের মুখে শাসকদলের বিদায়ী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠাতে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে শাসকদল। তাঁরা অবশ্য ওই কাউন্সিলর ও তাঁর স্বামীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে দাবি করে ক্ষত মেরামতের চেষ্টা চালাচ্ছে।

দলবিরোধী কাজের অভিযোগে সাধনাদেবী ও বিজয়বাবুকে কয়েকদিন আগেই তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেই প্রসঙ্গ টেনে ভবেশবাবু বলেন, ‘‘১ নম্বর ওয়ার্ডের আমাদের প্রাক্তন কাউন্সিলর ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় নির্বাচনে তাদের কাউকেই প্রার্থী করেনি দল। এ বার তাঁদের বিরুদ্ধে ভোটারদেরই একাংশ দুর্নীতির অভিযোগ তোলায় দলের কথাই প্রমাণিত হল। এই অবস্থায় আমরা চাইছি ওঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিক প্রশাসন।” তবে তৃণমূলের এই দাবিকে রাজনৈতিক দ্বিচারিতা বলে পাল্টা অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস প্রার্থী তারকনাথবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘ওই প্রকল্পে যখন দুর্নীতি হয়েছে তখন সাধনাদেবী বা বিজয়বাবুর মাধ্যমেই তৃণমূল ওয়ার্ডের সমস্ত কাজ করিয়েছে। আর ভবেশবাবু তখন থেকেই তৃণমূলের ওয়ার্ড কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ফলে তাঁর অজান্তে এইসব দুর্নীতি হয়েছে, এটা মানা সম্ভব নয়।”

বিজেপি ও সিপিএম দাবি করেছে, গত পাঁচ বছরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি করেছে। ১ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনা কার্যত হিমশৈলের চূড়া মাত্র। খুঁড়লে কেউটে বেরোবে। সাধনদেবীর স্বামী বিজয়বাবু দাবি করেন, ‘‘ নিয়ম অনুযায়ী নিজের ভাতার টাকা ছাড়া কোনও টাকাই সরাসরি তুলতে পারেন না কোনও কাউন্সিলর। এই ধরনের প্রকল্পে কাজ হয় জব ওয়ার্কার নিয়োগ করে। মাস্টাররোল তৈরি-সহ সমস্ত কাজই করেন জব ওয়ার্কার। কাউন্সিলার শুধুমাত্র কাজ হয়েছে কি না সেই বিষয়ে সার্টিফিকেট দেন। ফলে কোনও ভাবেই কাউন্সিলর এই কাজে দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকতে পারেন না। আমরাও প্রশাসনিক তদন্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE