Advertisement
২১ মে ২০২৪

ধৃতদের চিনতেই পারলেন না অমিতের দুই সহকর্মী

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন দু’জনেই। এক জন জখম সহকর্মীকে হাসপাতালে নিয়েও গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় জন প্রাথমিক ভাবে ঘটনার তদন্তেই ছিলেন। তবু এজলাসে দাঁড়িয়ে উপস্থিত ধৃতদের কাউকেই চিহ্নিত করতে পারলেন না ওই দুই পুলিশ আধিকারিক।

দুই সাক্ষী। মঙ্গলবার সিউড়ি আদালত চত্বরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

দুই সাক্ষী। মঙ্গলবার সিউড়ি আদালত চত্বরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৬ ০৩:০৮
Share: Save:

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন দু’জনেই। এক জন জখম সহকর্মীকে হাসপাতালে নিয়েও গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় জন প্রাথমিক ভাবে ঘটনার তদন্তেই ছিলেন। তবু এজলাসে দাঁড়িয়ে উপস্থিত ধৃতদের কাউকেই চিহ্নিত করতে পারলেন না ওই দুই পুলিশ আধিকারিক।

মঙ্গলবার সিউড়ি জেলা আদালতে দুবরাজপুর থানার এসআই অমিত চক্রবর্তী হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ পর্বের ঘটনা। যেখানে এএসআই আদিত্যকুমার মণ্ডল এবং আর এক এসআই রণজিৎ বাউড়িরা কেবল মাত্র সে দিনের ঘটনার বিবরণ দিলেন। সরকারি আইনজীবী তপন গোস্বামী বলেন, ‘‘এ দিন তিন জনের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। ওই দুই পুলিশ আধিকারিক উপস্থিত থাকলেও কনস্টেবল দীপককুমার সিংহ সাক্ষ্য দিতে আসেননি। বুধবার আরও তিন পুলিশ কর্মীর সাক্ষ্য নেওয়া হবে।’’

২০১৪ সালের ৩ জুন দুবরাজপুরের যশপুর পঞ্চায়েতের আউলিয়া-গোপালপুর গ্রামে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে একটি পুকুর সংস্কার করাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ও সিপিএমের সংঘর্ষ শুরু হয়। তা থামাতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমার আঘাতে মারাত্মক জখম হন দুবরাজপুর থানার তৎকালীন এসআই অমিত চক্রবর্তী। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অমিত মারা যান। ওই ঘটনায় খুনের অভিযোগ দায়ের করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যেই মূল অভিযোগকারী, তৎকালীন দুবরাজপুর থানার ওসি ত্রিদীপ প্রামাণিকের সাক্ষ্য নিয়েছে আদালত। মঙ্গলাবার সাক্ষ্য দিলেন ওই দুই পুলিশ আধিকারিকও।

সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, সে দিন ঠিক কী ঘটেছিল, এ দিন আদালতে তার বিবরণ দেন রণজিৎরা। আদিত্য জানান, সে দিন সিপিএম ও তৃণমূল দু’পক্ষের মধ্যে একটা উত্তেজনা চলছিল। সন্ধ্যার পরে দু’পক্ষের শতাধিক লোক বন্দুক, বোমা, লাঠি, টাঙি-সহ নানা অস্ত্র নিয়ে একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষের জন্য তৈরি হচ্ছিল। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে আন্দাজ করেই তিনি ওসিকে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স প্রয়োজন বলে খবর পাঠিয়েছিলেন বলে দাবি আদিত্যর। অন্য দিকে রণজিৎ বলেন, ‘‘আমি সেই সময় রাতের পুলিশি টহলের ডিউটিতে ছিলাম। আমাকে ওসি খবরটা যাচাই করতে বলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ চাই, সে কথা ওসিকে জানিয়েওছিলাম।’’

দু’জনেই এ দিন আদালতের কাছে দাবি করেন, রাত ৮টার কিছু পরে ওসি ত্রিদীপ প্রামাণিক এসআই অমিত চক্রবর্তী এবং বেশ কিছু কনস্টেবল নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু জমায়েত হওয়া লোক জন পুলিশ আসতেই আরও আক্রমণাত্বক হয়ে ওঠে। বোমাও ছুড়তে শুরু করে। ‘‘গাড়ি থেকে নেমে অমিত এগোতেই একটা বোমা এসে ওঁর বাঁদিকের কোমরের কাছে লাগে। সঙ্গে সঙ্গেই পিচ রাস্তার উপরে ও লুটিয়ে পড়ে’’—বলেন দু’জনেই। অমিতকে প্রথমে দুবরাজপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও পরে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেফার করা হয়। জখম অমিতের সঙ্গে তিনিও দুবরাজপুরের হাসপাতালে এসেছিলেন বলে জানান আদিত্য।

যদিও ঘটনার ঠিক পরপরই এলাকা থেকে যে ১২ জনকে পুলিশ ধরল এবং পরে যারা ধরা পড়ল, অভিযানে থাকা ওই দুই পুলিশ আধিকারিক তাদের কাউকেই এ দিন চিহ্নিত করতে পারেননি। এমনটা কেন হল, তা নিয়ে বিস্ময় আইনজীবীদের মধ্যে। রণজিৎরা কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। এ দিন আদালতে দুই সাক্ষী যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘এত দিন পরে আমাদের আর মনে নেই।’’ আদিত্য গোটা তিনেক নাম আওড়ালেও রণজিৎ সেটাও করেননি। তবে সে দিন ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা মাটি, বোমার অবশেষ, কার্তুজ ও লাঠি-সহ যা যা উদ্ধার হয়েছিল, তার উল্লেখ করেছেন দুই সাক্ষী।

দুই সাক্ষীর এমন বক্তব্যে সন্তুষ্ট হননি নিহত অমিতের স্ত্রী পুতুলদেবী। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘এ দিন ওই দুই সাক্ষীর ভূমিকা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এক জন ঘটনার তদন্তকারী অফিসার। অন্য জন ঘটনাস্থলেই ছিলেন। ওঁরাই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছেন। আর তাঁরাই যদি চিনতে না পারেন, তা হলে কে চিনবেন? এই মামলার ভবিষ্যৎ আমি দেখতে পাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

co-worker crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE