Advertisement
০৬ মে ২০২৪
বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ শিবিরে ভিড়

ডুবে রয়েছে বহু এলাকা, ত্রাণে ক্ষোভ

বুধবার থেকেই ডিভিসি ব্যাপক হারে জল ছাড়া শুরু করায় বড়জোড়ার পখন্না মানার বিস্তীর্ণ এলাকা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে জেলা থেকে। ওই মানাচরে পৌঁছতে স্পি়ড বোটই একমাত্র ভরসা।

বড়জোড়ার শ্রীপল্লিতে ডাঙার খোঁজে চলা।

বড়জোড়ার শ্রীপল্লিতে ডাঙার খোঁজে চলা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বড়জোড়া শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৭ ০১:৫৬
Share: Save:

এ বার ভাঙল ধৈর্যের বাঁধ। টানা দু’দিন ধরে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো অবস্থায় রয়েছেন বড়জোড়ার বড়মানার বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ তাঁরা উগরে দিলেন সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের উপরে। এলাকায় গিয়ে মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়লেন মহকুমাশাসক থেকে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ— সবাই। শেষ পর্যন্ত জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও জেলাশাসক গিয়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষজনের সমস্যা শুনে সমাধানের আশ্বাস দেওয়ায় ক্ষোভ কিছুটা কমে।

বুধবার থেকেই ডিভিসি ব্যাপক হারে জল ছাড়া শুরু করায় বড়জোড়ার পখন্না মানার বিস্তীর্ণ এলাকা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে জেলা থেকে। ওই মানাচরে পৌঁছতে স্পি়ড বোটই একমাত্র ভরসা। এই ঘটনার জন্য সাধারণ মানুষজন মানাচর থেকে বেরোতে পারছেন না। এলাকায় চারটি ত্রাণ শিবির চালু করে মানাচরের বাসিন্দাদের আশ্রয় দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পখন্নার বড়মানা এলাকার ভৈরবপুরের ত্রাণ শিবিরের আশ্রিত বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। তাঁদের অভিযোগ, সময় মতো খাবার পৌঁছচ্ছে না। রসদও কম আসছে। অভিযোগ, অসুস্থ রোগী এবং গর্ভবতীদেরও স্পি়ড বোটে করে বের করে আনার ব্যবস্থা করছে না প্রশাসন।

এ দিন ওই ত্রাণ শিবিরে বস্তাবন্দি শুকনো খাবার পৌঁছতে যাওয়া সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সেই সময়ে মানাচর পরিদর্শনেই গিয়েছিলেন মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা। সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের কাছে ঘটনাটি শুনে তিনি বিডিও (বড়জোড়া) পঙ্কজকুমার আচার্য, বাঁকুড়া জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুখেন বিদ, বড়জোড়ার আইসি অরূপ সরকার, বড়জোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য অলক মুখোপাধ্যায় ও বড়জোড়ার প্রাক্তন বিধায়ক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে ভৈরবপুর ত্রাণ শিবিরে যান। সেখানে মহকুমাশাসক ও কর্মাধ্যক্ষদের কাছে ক্ষোভ উগরে দেন ত্রাণ শিবিরে আশ্রিতরা।

পুরুলিয়ার বলরামপুরের খুনটাঁড় গ্রামে শুরু চাষের কাজ।

ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া শীতলা মাঝি, চম্পা রায়, গোলাপি রায়রা বলেন, ‘‘খাবারদাবার ঠিক সময়ে পাচ্ছি না। প্রশাসনিক পরিষেবা নিয়ে আমরা ক্ষুব্ধ।’’ ওই ত্রাণ শিবিরেই রয়েছেন জহর শিকদার। তাঁর ক্ষোভ, প্রশাসনের একটি স্পিড বোট থাকা সত্বেও জরুরি কাজে তাঁদের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। এমনকী বুধবার রাতে গর্ভবতী বধূদের জরুরি পরিস্থিতিতে বাইরে পাঠাতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে বলে তাঁর দাবি। মহকুমাশাসক ওই ত্রাণ শিবির ঘুরে দেখেন।

ত্রাণ শিবির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা লোকজনের যাবতীয় সমস্যার কথা সঙ্গে সঙ্গে বি়ডিও-কে জানানোর পরামর্শ দেন। এ দিন বড়মানায় গিয়েছিলেন বড়জোড়ার বিধায়ক সুজিত চক্রবর্তীও। তিনিও প্রশাসনিক পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ত্রাণ শিবিরগুলিতে সঠিক সময়ে খাবার পৌঁছতে পারছে না প্রশাসন। এর ফলে ভোগান্তি হচ্ছে আশ্রিতদের।’’

এ দিন বাঁকুড়ার সোনামুখী এবং বড়জোড়ার বন্যা কবলিত মানাচরগুলি পরিদর্শনের বেরিয়েছিলেন বাঁকুড়া জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু এবং বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। বড়মানাতে সমস্যা হচ্ছে শুনে তাঁরা সেখানে যান। যে কোনও ধরনের সমস্যা এড়াতে জেলাশাসক ওই ত্রাণ শিবিরে সিভিল ডিফেন্সের কয়েক জন কর্মীকে নিয়োগ করেন। প্রয়োজনে তাঁদের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেন। অরূপবাবু বলেন, ‘‘ত্রাণ শিবিরে কোনও রকম সমস্যা নেই। চাল ডাল ও অন্য খাদ্য সামগ্রী বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। প্রয়োজনে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা জরুরি দরকারে প্রশাসনের স্পিড বোটে ওঠার সুযোগ পাচ্ছেন না বলে যে অভিযোগ তুলেছেন সেই ব্যাপারে জেলাশাসক বলেন, ‘‘বিপদসীমার উপর দিয়ে দামোদর বইছে। এই পরিস্থিতিতে কোনও ভাবেই স্থানীয় মানুষজনকে আমরা স্পিড বোটে চড়ার অনুমতি দিতে পারি না। কেবল গর্ভবতী বা অসুস্থ রোগী ছাড়া আর কেউই স্পিড বোটে চড়তে পারবেন না।’’

তিনি জানান, ১৩ নম্বর ব্যাটেলিয়ন থেকে একটি স্পিড বোট বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনকে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য দেওয়া হয়েছে। সেটিকে আপাতত সোনামুখীতে ত্রাণের জন্য পাঠানো হয়েছে। জেলায় এখনও পর্যন্ত ১২টি ত্রাণ শিবির চলছে বলে জানান তিনি। ত্রাণ সামগ্রীর কোনও ঘাটতি নেই বলেই তাঁর দাবি। জেলাশাসক বলেন, ‘‘সামগ্রিক পরিস্থিতির উপরে জেলা প্রশাসনের নজর রয়েছে।’’

দামোদরের জল ঢুকেছে বড়জোড়ার মানা এলাকা সীতারামপুরেও। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনামুখীর নিত্যানন্দপুরের মানাসমিতিতে প্রায় ৮০০ মানুষ জলবন্দি হয়ে রয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

relief distribution flood বড়জোড়া
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE