E-Paper

বিদ্যুৎকেন্দ্রে এক সপ্তাহে আবার মৃত্যু

তাপস কোল হ্যান্ডলিং প্লান্টের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতেন। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা গুঁড়ো করার যন্ত্রের বেল্ট ছিঁড়ে গিয়েছিল। এ দিন কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে মেরামত করছিলেন তাপস।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৪ ০৬:১৪
বাঁকুড়ার মেজিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্ঘটনায় মৃত শ্রমিকদের দেহ আটকে চলছে বিক্ষোভ।

বাঁকুড়ার মেজিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্ঘটনায় মৃত শ্রমিকদের দেহ আটকে চলছে বিক্ষোভ। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

‘জাতীয় নিরাপত্তা সপ্তাহ’ চলাকালীন পাঁচ দিনের ব্যবধানে দুর্ঘটনায় আরও এক ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যু হল বাঁকুড়ায় ডিভিসির মেজিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠল।

সোমবার বেলায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোল হ্যান্ডলিং প্লান্টে কয়লা গুঁড়ো করার যন্ত্রের বেল্ট মেরামতের কাজ করার সময় তাতে জড়িয়ে মৃত্যু হল ঠিকা শ্রমিক তাপস রায়ের (৪৬)। বড়জোড়ার সাবগ্রামে তাঁর বাড়ি। ঘটনার প্রতিবাদে এবং মৃতের পরিবারকে যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার দাবিতে রাত পর্যন্ত দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখান শ্রমিকেরা। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্তারা বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এর আগে ৫ মার্চ বিদ্যুৎকেন্দ্রের লিফটে কাজ করার সময় প্রায় ১৫ ফুট নীচে পড়ে মারা যান আর এক ঠিকা শ্রমিক।

সূত্রের খবর, তাপস কোল হ্যান্ডলিং প্লান্টের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতেন। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা গুঁড়ো করার যন্ত্রের বেল্ট ছিঁড়ে গিয়েছিল। এ দিন কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে মেরামত করছিলেন তাপস। কাজ চলাকালীন কোনও ভাবে ফিতেতে জড়িয়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

শ্রমিকদের একাংশের দাবি, সেই সময় তাপস হেলমেট ও সেফটি জুতো পরে থাকলেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। ঘটনার পরেই বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকেরা দেহ আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। অরাজনৈতিক শ্রমিক সংগঠনের কর্মীরা মৃতের পরিবারকে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজনকে চাকরিতে নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান।

শ্রমিক সংগঠনের তরফে অনন্ত লায়েক, প্রণব কর্মকার, উজ্বল ঢাং বলেন, “মৃত শ্রমিকের স্ত্রী ও দুই মেয়ে রয়েছে। তাঁদের দেখভালের জন্য আর কেউ নেই। তাই ওই পরিবারের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতেই হবে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে।” বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রিন্সিপাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার (প্রকল্প আধিকারিক) সুশান্ত ষন্নিগ্রহী বলেন, “অনভিপ্রেত ঘটনা। শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’’

৪ মার্চ থেকে এমটিপিএসে জাতীয় সুরক্ষা সপ্তাহ শুরু হয়। তার মধ্যেই দুই শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতিই দেখছেন শ্রমিকদের একাংশ। বিক্ষোভকারীদের দাবি, “শ্রমিকদের নিরাপত্তার সরঞ্জাম ঠিক সময়ে জোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎকেন্দ্রের গড়িমসি রয়েছে। সে সব চাওয়া হলে সাত-আটমাস পরে আমাদের দেওয়া হয়।”

বিদ্যুৎকেন্দ্রের আইএনটিইউসি নেতা অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়, সিটু নেতা সমীর বাইন বলেন, “এ দিনের ঘটনায় ওই ঠিকা সংস্থার সুপারভাইজার বা শ্রমিক নিরাপত্তার দেখভালকারী আধিকারিকের ভূমিকা খতিয়ে দেখা দরকার। পর পর দু’টি শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।” চেষ্টা করেও ঠিকা সংস্থার সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রিন্সিপাল চিফ ইঞ্জিনিয়ারের দাবি, “কী ভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে খতিয়ে দেখা হবে। শ্রমিকদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোথাও কোনও রকম গাফিলতি আমরা প্রশ্রয় দিই না।” দুর্ঘটনার জেরে এ দিন জাতীয় সুরক্ষা সপ্তাহের সমাপ্তি অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mejia Thermal Power Station bankura

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy