Advertisement
০২ মে ২০২৪

কার কপালে কী জোটে, জোর গুঞ্জন তৃণমূলে

কার কপালে প্রশংসা, আর কে খাবেন ঝাড়— জেলা তৃণমূলের অন্দরে আলোচনার বিষয় এখন এটাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ০১:৫৮
Share: Save:

কার কপালে প্রশংসা, আর কে খাবেন ঝাড়— জেলা তৃণমূলের অন্দরে আলোচনার বিষয় এখন এটাই।

কলকাতায় বৈঠকের পরে ভোট-ফলের পর্যালোচনা এ বার শুরু হচ্ছে জেলায় জেলায়। রবিবার দুপুরে ও বিকেলে বর্ধমানে দলের নেতাদের নিয়ে দুটি বৈঠক করবেন পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস। প্রথমটি হবে দুর্গাপুরের সৃজনী হলে, দ্বিতীয় বৈঠক হবে বর্ধমান শহরের একটি স্কুলে।

দুটি বৈঠক ঘিরেই টানটান তৃণমূল নেতারা। কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে, কার কপাল পুড়বে তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনাও। দলের অনেক নেতাই মনে করছেন, ভোট-পরবর্তী রিপোর্ট দলের কাছে রয়েছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী বেশ কিছু নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে দল। সাংগঠনিক ভাবে দায়িত্বে থেকে কয়েক দশক পর বামেদের হাত থেকে বিধানসভা ছিনিয়ে নেওয়ায় পর্যবেক্ষকের প্রশংসাও পেতে পারেন কোনও কোনও নেতা। তবে মোটের উপর পর্যবেক্ষক যে কড়া বার্তা দেবেন তা মনে করছেন দলের একাংশ। যাতে আগামী দিনে নেতা-কর্মীদের পা মাটিতে থাকে। দলের নির্দেশের বাইরে গেলে যা কাউকেই রেয়াত করা হবে না তা-ও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেবেন পর্যবেক্ষক। তৃণমূলের শীর্ষ স্থানীয় এক নেতার কথায়, “বর্ধমান গ্রামীণে ১৬টির মধ্যে ১৪টি এবং শিল্পাঞ্চলে ৯টির মধ্যে ৫টিতে জিতেছে দল। দুর্গাপুরে হারার পিছনে এবং গ্রামীণ এলাকায় বেশ কয়েকটি বিধানসভা আসনেও অন্তর্ঘাত হয়েছে বলে দলের কাছে রিপোর্ট রয়েছে। সেই সব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।”

দুপুর দুটোয় দুর্গাপুরে সৃজনী হলে বৈঠক শুরু হওয়ার কথা। সেখানে দুর্গাপুরের কাউন্সিলরেরা, শিল্পাঞ্চলের তৃণমূলের প্রার্থীরা ছাড়াও আইএনটিটিইউসি এবং দলের কিছু নেতাকে ডাকা হয়েছে। দলের একাংশের দাবি, দুর্গাপুরে দুটি আসনেই দল কেন হারল তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। শ্রমিকদের মধ্যে তৃণমূল প্রভাবিত দুটি সংগঠনের সারা বছর নিজেদের মধ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে থাকা এবং শেষ মূহুর্তে অন্তর্ঘাত হওয়ার ফলে আসন দুটি হাতছাড়া হয়েছে বলেও দলের কাছে প্রাথমিক রিপোর্ট রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। হারের ‘দায়’ নিয়ে কয়েকজন নেতার কপালে দুঃখ থাকতে পারে বলেও তাঁদের অনুমান।

ভোটে জেতার পর থেকে দলনেত্রী যে যথেষ্ট কড়া তা নানা ঘটনাতেই স্পষ্ট। কিছুদিন আগেই জেলার অন্যতম নেতা তথা জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কর্মাধ্যক্ষ গোলাম জার্জিসের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ করেছিলেন দলেরই সংখ্যালঘু সেলের জেলা সভাপতি সুরমান আলি। তাঁর দাবি ছিল, গোলাম জার্জিসের নির্দেশে দশ যুবক তাঁর কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা চেয়েছেন। ওই টাকা না দিলে ব্যবসা বন্ধের হুমকিও দেওয়া হয়। দলের পর্যবেক্ষক অরূপবাবু দু’জনের সঙ্গে কথা বলার পরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর কাছে রিপোর্ট পাঠান। এরপরেই গোলামবাবুকে সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সুরমান আলিকেও ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই উদাহরণকে সামনে রেখে বর্ধমানের সভায় পর্যবেক্ষক সোজা ব্যাটে খেলবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে। বিকেল পাঁচটায় শহরের টাউন স্কুলে জেলা পরিষদের সভাধিপতি, ১৬টি বিধানসভার প্রার্থী, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধানদের নিয়ে এই বৈঠক হবে। পূর্বস্থলী উত্তরের প্রার্থী তপন চট্টোপাধ্যায়, জামালপুরের প্রার্থী উজ্জ্বল প্রামাণিক কেন হারলেন, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আবার জিতলেও আশাতীত ফল না হওয়ার পিছনে কী কারণ রয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিতে হতে পারে দীর্ঘদিনের কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। দলের এক নেতার কথায়, “কলকাতায় ইন্ডোরে সভার আগে সাংগঠনিক রদলবদলের সম্ভাবনা কম। তার মধ্যেও দলে বিশৃঙ্খলা যে কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না, সেই বার্তা দিয়ে যাবেন পর্যবেক্ষক।”

পর্যবেক্ষক অরূপবাবুর কথায়, “দুর্গাপুর ও বর্ধমানে দলের সাংগঠনিক বৈঠক রয়েছে। সেখানে দলের সংগঠন নিয়ে নানারকম আলোচনা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arup biswas TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE