Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এক বৃষ্টিতেই কোপ তাপে, পারা নেমে গেল ১১ ডিগ্রি

পরপর ক’দিন ধরেই আকাশে কালো মেঘ দেখা যাচ্ছিল। তবে বৃষ্টির দেখা মিলছিল না। উল্টে জোরালো হওয়া এসে মেঘকে ঢেলে সরিয়ে দিয়েছে। গরমে তেতে পুড়ে দিন কাটছিল বাসিন্দাদের। মঙ্গলবার রাতেই বদলে গেল আবহাওয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০১:৪২
Share: Save:

পরপর ক’দিন ধরেই আকাশে কালো মেঘ দেখা যাচ্ছিল। তবে বৃষ্টির দেখা মিলছিল না। উল্টে জোরালো হওয়া এসে মেঘকে ঢেলে সরিয়ে দিয়েছে। গরমে তেতে পুড়ে দিন কাটছিল বাসিন্দাদের। মঙ্গলবার রাতেই বদলে গেল আবহাওয়া। তপ্ত বাঁকুড়াবাসীকে স্বস্তির তৃপ্তি দিল ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টি। দীর্ঘদিন পর ভিজল বাঁকুড়ার মাটি। হাসি ফুটল চাষির মুখে।

মঙ্গলবারের রাতের বৃষ্টির জেরে বুধবারও তাপমাত্রা তেমন বাড়েনি। সেই সঙ্গে গরম হাওয়ার ছোবল থেকেও মিলেছে রক্ষা। সব মিলিয়ে গরমের জ্বালা থেকে অনেকটাই স্বস্তি পেয়ে হাঁফ ছাড়লেন বাঁকুড়ার মানুষ।

আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, গত কয়েক দিন ধরেই তাপমাত্রা খানিক কমে বাতাসে আপেক্ষিক আদ্রতার পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল। তাতে জেলাবাসীর অস্বস্তি কিছুটা বাড়লেও স্থানীয় ভাবে মেঘ সৃষ্ট হয়ে বৃষ্টি নেমেছে। সেই সঙ্গে ছিল ঝড়ের দাপট।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাঁকুড়ায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৮.২ মিলিমিটার। অল্পবিস্তর শিলাবৃষ্টিও হয়েছে। জেলার কিছু জায়গায় ঝড়ে বাড়ি ভাঙার ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ার খবর মিলেছে। তবে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে তেমন বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেই জানিয়েছেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। তিনি বলেন, “টানা গরমের জেরে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল জেলায়। সাময়িক বৃষ্টি পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাল।”

উল্লেখ্য, গত বছর বৃষ্টির ঘাটতি ছিল ৩০ শতাংশ। জেলায় খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির অভাবে জেলার কংসাবতী জলাধারের জলস্তর নেমে যাওয়ায় সেচের জল না পেয়ে বহু চাষির ধান মাঠেই শুকিয়ে নষ্ট হয়। শীতকালেই পুকুর-ডোবা, নদ-নদীও শুকিয়ে গিয়েছে। বাঁকুড়া শহর সহ গ্রামাঞ্চলে জলস্তর নেমে গিয়ে জলকষ্ট শুরু হয় ডিসেম্বর মাস থেকে। এই পরিস্থিতিতে বৃষ্টি কবে হয়, সেদিকেই তাকিয়ে ছিল জেলা প্রশাসন থেকে জেলাবাসী।

এ দিকে চলতি বছরে গত মাসে একটিও কালবৈশাখী হয়নি জেলায়। প্রখর রোদে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে জেলার জলাভূমি থেকে বনভূমি সবই। একের পর এক জঙ্গলে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলার বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও খাতড়া তিন মহকুমাতেই বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হয়। মাত্রায় বেশি না হলেও এ দিনের বৃষ্টি শুখা পরিস্থিতিকে খানিক সামাল দিয়েছে বলেই মত সব মহলের। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল বৃষ্টির পরে তাপমাত্রা প্রায় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়।

বস্তুত, দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টিতে রোদে পুড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে জেলার সব্জি ও বোরো চাষ। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বোরো চাষ প্রায় ৫ শতাংশ, তিলচাষ প্রায় ৩০ শতাংশ ও সব্জি চাষ প্রায় ৩৫ শতাংশ ক্ষতির মুখে পড়েছে। জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) আশিসকুমার বেরা বলেন, “বৃষ্টি খুব বেশি না হলেও মাটিতে কিছুটা রস সঞ্চার করেছে। বাতাসে আপেক্ষিক আদ্রতা বেড়ে যাওয়াটাও কৃষির ক্ষেত্রে সহায়ক।”

জেলার সব্জি চাষিরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন এই বৃষ্টির পরে। ওন্দার তপোবন গ্রামের গয়াসুর মানিক কুন্দরি চাষ করেছেন কয়েক বিঘা জমিতে। ঝড়-বৃষ্টিতে তাঁর সব্জির মাচা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গয়াসুরবাবু বলেন, “রোদে সব্জি, ফুল ও ফল ঝলসে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। চাষ ভাল হচ্ছিল না। তবে এই বৃষ্টি কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছে।” একই কথা বলছেন ওই গ্রামের পটল চাষি সাধন পাত্র, বুদ্ধদেব মানিকরাও।

তবে মঙ্গলবার রাতের আকস্মিক ঝড়ে বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত বন বিভাগের বাঁকাদহ রেঞ্জের জঙ্গলে প্রচুর গাছগাছালি ভেঙে পড়ার খবর মিলেছে। রেঞ্জ অফিসের মধ্যেই ভেঙে পড়েছে ৬০ ফুট উঁচু দফতরের ওয়ারলেস টাওয়ারও। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছেস ভেঙে পড়া গাছের মধ্যে আকাশমণির সংখ্যাই বেশি। বাঁকাদহ জঙ্গলের জিয়াবান্ধি, দুন্দুড় ও ভুয়াডাঙা এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি বলে জানিয়েছেন বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত বন বিভাগের ডিএফও অয়ন ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘ঝড়ে পড়ে যাওয়া গাছগুলি উদ্ধারের চেষ্টা হচ্ছে। ভেঙে পড়া ওয়ারলেস টাওয়ারটির মেরামতির কাজও দ্রুততার সঙ্গে শুরু করার চেষ্টা চলছে।’’

এ দিকে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিষ্ণুপুরের কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহও ব্যাহত হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Bankura Temperature
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE