Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভিক্ষুকদের নিয়ে বিজয়া সম্মিলনী নানুরের দোকানির

কেউ হারালেন কথা। কারও ভিজল কুঁচকে যাওয়া দু’চোখের কোল। বিজয়া সম্মিলনীতে আনন্দাশ্রুতে ভাসলেন ৫০ জন ভিক্ষাজীবী। শুক্রবার শুধু তাঁদের নিয়েই ওই বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিলেন নানুরের মনোহারি দোকানি গয়ানাথ রুদ্র।

মিষ্টির প্যাকেট হাতে গয়ানাথ রুদ্র।— সোমনাথ মুস্তাফি

মিষ্টির প্যাকেট হাতে গয়ানাথ রুদ্র।— সোমনাথ মুস্তাফি

নিজস্ব সংবাদদাতা
নানুর শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০৭
Share: Save:

কেউ হারালেন কথা। কারও ভিজল কুঁচকে যাওয়া দু’চোখের কোল। বিজয়া সম্মিলনীতে আনন্দাশ্রুতে ভাসলেন ৫০ জন ভিক্ষাজীবী। শুক্রবার শুধু তাঁদের নিয়েই ওই বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিলেন নানুরের মনোহারি দোকানি গয়ানাথ রুদ্র।

গত বছর থেকেই সম্মিলনীর আয়োজন করছেন তিনি। সে বারও দিনটা ছিল শুক্রবার। সে দিন গয়ানাথবাবুর দোকানে এসেছিলেন স্থানীয় মোতিপুরের বাসিন্দা ৬৫ বছরের হারাধন দাস। ভিক্ষা নিয়ে তুলেছিলেন গভীর এক প্রশ্ন, ‘‘পুজোর পরে গৃহস্থের বাড়িতে প্রভাবশালী কেউ গেলে তাঁকে যত্নআত্তি করে খাওয়ানো হয়। কিন্তু আমাদের তো সারা বছরই জোটে অবজ্ঞা! কেউ ভালবেসে বলে না একটু মিষ্টিমুখ করে যাও। আমাদেরও কি এক দিনের
জন্যেও কেউ ভালবেসে খাওয়াতে পারে না?’’

সখেদ ওই আকুতিই নাড়িয়ে দেয় গয়ানাথকে। ছোট্ট দোকানের আয়ে কোনও রকমে স্ত্রী, দুই ছেলে এবং বাবা-মাকে নিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলে ছয় সদস্যের সংসার। তা সত্বেও সাত-পাঁচ না ভেবেই তিনি ভিক্ষাজীবীদের নিয়ে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিলেন। প্রশংসা কুড়িয়েছিল সে আয়োজন। সেই মতো এ বারও নিজের দোকানের সামনে চেয়ার পেতে বসিয়ে ভিক্ষাজীবীদের হাতে তুলে দেন কেক, ভুজিয়া, চিঁড়েভাজা, নানা রকম ফল এবং মিষ্টির প্যাকেট।

কেমন লাগছে?

টিফিন খেতে খেতে নিজেদের পুরনো সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছিলেন কান্দরার ৫২ বছরের কাত্যায়নী দাস, দাসকল গ্রামের ৫০ বছরের লক্ষ্মীরানী দত্ত, রানীপুরের বছপ পঁয়ষট্টির দিলীপ হাজরারা। প্রশ্নটা শুনেই খানিক থমকালেন। তারপরে ধরা গলায় হাসি ঝুলিয়ে দিলীপ বললেন, ‘‘এ দিন একটু সম্মানের সঙ্গে খাবার পেলাম। খেয়েও তৃপ্তি পেয়েছি।’’ সে কথায় সায় দিয়ে পাশ থেকে কাত্যায়নী যোগ করেন, ‘‘আমাদের ভাল খাওয়া বলতে গেলে ভোজ বাড়িতে বিনা নিমন্ত্রণে গিয়ে সবার শেষে হতশ্রদ্ধার খাবার। কিন্তু চেয়ারে বসে বাবুদের মতো টিফিনের প্যাকেট এই প্রথম।’’

কথা বলতে গিয়ে কান্না ধরে রাখতে পারেননি হারাধন দাস। তাঁর আর্তিই সে দিন নাড়িয়ে দিয়েছিল গয়ানাথকে। এ দিন হাজির ছিলেন তিনিও। কান্না সামলে জানালেন এমন আয়োজনে নিজেকে সম্মানিত বোধ করছেন। খুশি গয়ানাথও। তিনি বলছেন, ‘‘এ ভাবেই যত দিন পারি বিজয়াটুকু চালিয়ে যাব।’’ এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সমীর কর বলছেন, ‘‘গয়ানাথের জন্যে ব্যবসায়ী হিসাবে গর্বিত।’’

এ বারের আয়োজনে খরচ হয়েছে হাজার পাঁচেক। কিন্তু, সেটুকু জোগাড় করতে গিয়েও পুজোর বাজেটে কাটছাঁট করতে হয়েছে গয়ানাথকে। সে তথ্য জানাচ্ছেন খোদ তাঁর স্ত্রী আগমনীদেবী। তিনি বলছেন, ‘‘ওঁর কথা মতো বিজয়া সম্মিলনীর জন্যেই আমরা এ বার কম দামের পোশাক কিনেছি। তাতে পোষাকের চাকচিক্য কিছুটা কমেছে ঠিকই, কিন্তু অতগুলো মানুষের হাসি মুখ দেখে সে দুঃখ কখন চলে গিয়েছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nanur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE