Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ধর্মঘটেও স্বাভাবিক দুই জেলা

ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে, বুধবার, মোটের উপরে জনজীবন স্বাভাবিকই থাকল দুই জেলায়। বেসরকারি বাস চলেছিল অন্য দিনের তুলনায় কম। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির শাখা ছিল বন্ধ। ফলে ভোগান্তি হয়েছে। 

বাঁকুড়া হেড পোস্টঅফিসে

বাঁকুড়া হেড পোস্টঅফিসে

নিজস্ব সংবাদদাতা পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২০
Share: Save:

ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে, বুধবার, মোটের উপরে জনজীবন স্বাভাবিকই থাকল দুই জেলায়। বেসরকারি বাস চলেছিল অন্য দিনের তুলনায় কম। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির শাখা ছিল বন্ধ। ফলে ভোগান্তি হয়েছে।

এ দিনও ধর্মঘটের সমর্থনে পুরুলিয়া শহর ও জেলার কয়েকটি এলাকায় মিছিল হয়েছে। ধর্মঘটের বিরোধিতা করে বাঘমুণ্ডি, ঝালদা, রঘুনাথপুর ও অন্য কয়েকটি এলাকায় মিছিল করেছে তৃণমূল। মঙ্গলবার জেলায় বেসরকারি বাস রাস্তায় কম নেমেছিল। সেই তুলনায় এ দিন সংখ্যায় কিছুটা বেশি চলেছে‌। তবে বাস না পেয়ে এ দিনও নাজেহাল হয়েছেন অনেক যাত্রী। বিকেলে রঘুনাথপুর স্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা নিতুড়িয়ার একটি স্কুলের শিক্ষিকা জয়তী দেওঘরিয়া। তিনি জানান, সকালে বেসরকারি বাসে স্কুলে আসেন। এ দিন সেই বাস না পেয়ে উঠেছিলেন সরকারি বাসে। ভিড়ে ঠাসা বাস। রঘুনাথপুর থেকে স্কুলে পৌঁছেছিলেন কোনও রকমে। কিন্তু ভোগান্তির বাকিটা তোলা ছিল ফেরার সময়ের জন্য। বললেন, ‘‘ঠায় দাঁড়িয়ে আছি, বাসের দেখা নেই।’’

প্রতি বুধবার পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ শিবির বসে। আবেদনের ভিত্তিতে ডাকা হয় প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের প্রার্থীদের। এ দিন যাঁরা ডাক পেয়েছিলেন, বাসের অভাসে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাঁদেরও। নির্দিষ্ট দিনে শিবিরে না গেলে ঝঞ্ঝাট হতে পারে— সেই আশঙ্কায় প্রায় কেউই গরহাজির থাকতে চান না। আড়শা থানার কুদাগাড়া গ্রামের জয়ন্ত কুমার এসেছিলেন ভাই মঙ্গল কুমারকে নিয়ে। মঙ্গল দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর শংসাপত্র চান। জয়ন্ত বলেন, ‘‘সকালে বেরিয়ে বাস পাইনি। কিন্তু শিবিরে পৌঁছতেই হবে। তাই ভাইকে কোনও ভাবে মোটরবাইকের পিছনে চাপিয়ে পুরুলিয়ায় এসেছি।” বাস না পেয়ে মোটরবাইকে মেয়ে নিবেদিতাকে চাপিয়ে শিবিরে এসেছেন পাড়া থানার চিত্রা গ্রামের প্রথম মাহাতো। দীর্ঘ রাস্তা সাইকেল চালিয়ে স্টেশনে এসে ট্রেন ধরতে হয়েছে বলে জানালেন পাড়া থানার ভাগাবাঁধ গ্রামের বাসিন্দা প্রতিবন্ধী জগদীশ মাজি।

ধর্মঘটে ব্যাঙ্কগুলি সামিল হওয়ায় গত দু’দিন ধরেই সমস্যায় পড়তে হয়েছিল জেলার বাসিন্দাদের। মঙ্গলবার যদি বা এটিএমগুলিতে টাকা ছিল, বুধবার অনেক জায়গায় সেটাও বাড়ন্ত হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। আদ্রার বাসিন্দা প্রৌঢ়া শান্তিবালা চৌধুরীর দাবি, তিনি জানতেন না ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকবে। বেনিয়াসোল এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় এসে টের পেয়েছেন। ছুটেছিলেন পাশের একটি এটিএমে। সেখানেও টাকা মেলেনি। অনেক রাস্তা উজিয়ে ঝালদা শহরের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে এসে ফিরেছেন কোটশিলার মনোজ সাউ। তাঁর আবার এটিএম কার্ড নেই। মনোজবাবু বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক বন্ধ আছে বলে জানতাম না। টাকার দরকার ছিল। এসে দেখি এই কাণ্ড।’’ মঙ্গলবারের মতো এ দিনও জেলার সরকারি অফিসগুলিতে হাজিরা স্বাভাবিক ছিল বলে জানিয়েছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়। তিনি বলেন, ‘‘জেলায় জনজীবন পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল।’’

বুধবারেও বাঁকুড়ায় বেসরকারি বাস কিছু কম চলেছে। পথে নেমেছিল বাড়তি কিছু সরকারি বাস। তবে তাতে ভোগান্তির থেকে রেহাই মেলেনি বলেই অভিযোগ বেশ কিছু যাত্রীর। জেলার এক বাস মালিক বলেন, “রাস্তায় বেরিয়ে ধর্মঘটিদের হাতে আটকে পড়ে সমস্যায় পড়ার আশঙ্কাতেই বাস নামানো যায়নি।” অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লইজ় অ্যাসোসিয়েশনের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক সাগর রায় বলেন, “জেলার বেশিরভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। কিছু জায়গায় পুলিশ ও প্রশাসন ব্যাঙ্কের লোকজনকে চাপ দিয়েছিল কাজে যোগ দেওয়ার জন্য। তবে সেই চাপ উপেক্ষা করেই ধর্মঘট সফল করেছেন কর্মীরা। পুলিশের এই ভূমিকার আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” তবে সেই কথা অস্বীকার করেছে পুলিশ।

এ দিন ধর্মধটের সমর্থনে বড়জোড়া চৌমাথা মোড়ে মিছিল করে সিপিএম। অভিযোগ, পুলিশ তাদের বাধা দেয়। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরীর অভিযোগ, “ধর্মঘটের সমর্থনে আমাদের মিছিল পুলিশ জোর করে আটকে দেয়। আমাদের কিছু কর্মীকে লাঠি নিয়ে আক্রমণও করা হয়।” বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও–এর অবশ্য দাবি, “শান্তিপূর্ণ ভাবেই সাধারণ ধর্মঘটের দু’টি দিন কেটেছে। কোথাও কোনও অভিযোগ ওঠেনি। জেলায় কোথাও কোনও বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হয়নি।” জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস জানান, বিভিন্ন সরকারি দফতরগুলিতে কর্মীদের হাজিরা স্বাভাবিক ছিল। পরিবহণ ব্যবস্থা ছিল সচল। কোথাও কোনও যাত্রী সমস্যায় পড়েছেন বলে প্রশাসনের কাছে খবর নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bharat Bandh Strike Purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE