E-Paper

ভাষা দিবস লেখা ইংরেজিতে! বিতর্কে ভাষাভবন

সকালে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’, ‘অমর একুশ’-এর মতো গানে আন্তর্জাতিক অতিথি সদন থেকে বাংলাদেশ ভবন পর্যন্ত শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়।

বাসুদেব ঘোষ 

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:১৯
‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ লেখা ইংরেজিতে। ভাষাভবনে অনুষ্ঠানের ফ্লেক্সে।

‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ লেখা ইংরেজিতে। ভাষাভবনে অনুষ্ঠানের ফ্লেক্সে। নিজস্ব চিত্র ।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে বাংলাভাষার মর্যাদা দাবি করে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন জব্বর, বরকত, রফিক, সালামের মতো অনেকে। সেই আন্দোলনকে স্মরণে রাখতেই রাষ্ট্রপুঞ্জ ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়। এমনই এক দিনে ভাষা দিবস উদ‌্‌যাপনের অনুষ্ঠানে বিতর্কের রেশ রয়ে গেল বিশ্বভারতীর ভাষাভবনে!

প্রতি বছরের মতো এ বারেও বিশ্বভারতী ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করেছে। বাংলাদেশভবন এবং ইন্দিরাভবনের তরফে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা করেছিল। পাশাপাশি ভাষাভবনও এ দিন নিজেদের মতো করে অনুষ্ঠান করেছে। সেই অনুষ্ঠানে বিশ্বভারতীর লোগো দেওয়া একটি ফ্লেক্সে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’—এই শব্দগুলি লেখা হয়েছে ইংরেজিতে। ঠিক তার নীচে ইংরেজিতে লো ‘ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ ডে’। তার নীচে ইংরেজিতে আয়োজক হিসাবে ভাষাভনের নাম।

এই নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ভাষাভবন কর্তৃপক্ষ। প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “এটাই এখন রুচি হয়ে দাঁড়িয়েছে শান্তিনিকেতনের। তাই এমন একটা দিনেও ইংরেজি শব্দের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা যাচ্ছে না। কিছুই বলার নেই।” প্রবীণ আশ্রমিক অনিল কোনার বলেন, “এই দিনটিতে বাংলা শব্দকে বাদ দিয়ে ইংরেজি শব্দের ব্যবহার আগে কখনও এখানে হয়েছে বলে জানা নেই। এটা দুর্ভাগ্যজনক।” ভাষাভবনের অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন প্রধানকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষেরও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

এই বিতর্কটুকু বাদ দিলে অবশ্য এ দিন শান্তিনিকেতনে মহা সমারোহে পালিত হয়েছে ভাষা দিবস। সকালে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’, ‘অমর একুশ’-এর মতো গানে আন্তর্জাতিক অতিথি সদন থেকে বাংলাদেশ ভবন পর্যন্ত শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। শোভাযাত্রায় ছিলেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সঞ্জয়কুমার মল্লিক, অধ্যাপক, কর্মী থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ভবন সহ বিভিন্ন ভবনের ছাত্রছাত্রীরা।

পদযাত্রা শেষে বাংলাদেশ ভবনে শহিদ বেদিতে মাল্যদান, পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন উপাচার্য-সহ অনেকে। ভাষা দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য। সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান শেষ হয়। এ দিন সন্ধ্যায় দ্বিতীয় পর্যায়ে মূল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় বাংলাদেশ ভবনের সভাঘরে। সেখানে এমবারও সংস্কৃত, বাংলা-সহ দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন ভাষায় অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন ভাষা ভবনের পড়ুয়ারা।

ভাষা শহিদদের স্মরণ করে বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা বিশেষ গীতি আলেখ্য পরিবেশন করেন। ভাষা আন্দোলনের এ বার ৭২ বছর পূর্তি। সেই উপলক্ষে মূল অনুষ্ঠান ছিল ‘বাহান্নর বাহাত্তর’। আশ্রম সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ থেকে আসা পড়ুয়া রকি সরকার, কথা ঘোষ বলেন, “এটা যেমন আমাদের কাছে শোকের স্মৃতি, তেমনই বাংলা ভাষা অর্জনের দিন। তাই এই বিশেষ দিনকে স্মরণ করতে পেরে ভাল লাগছে।”

ভারপ্রাপ্ত উপচার্য বলেন, “আজ শ্রদ্ধা, স্মরণ, প্রত্যয় ও প্রতিজ্ঞার দিন। আজ ভাবারও দিন, মাতৃভাষা স্বীকৃতির দাবিতে কত জন তরুণের রক্ত ঝরেছে। তার পরে সেই মাতৃভাষা রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। এ-পার ও-পারের সব বাধা যেন ঘুচে যায় আজকের দিনে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Visva Bharati University

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy