Advertisement
E-Paper

বড় মিছিল, পাল্টা বার্তা গাঁওতারও

কেউ বলছেন বারো হাজার। কয়েক হাজার কমিয়ে বিরোধীরা বলছে, ‘‘অত না হলেও আট হাজার তো বটেই।’’ ভোটের আগে বাম-কংগ্রেসের বোঝাপড়া তৃণমূল নেতৃত্বের কপালের ভাঁজ চওড়া করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১৬
রামপুরহাটে আদিবাসী গাঁওতার এই মিছিল উদ্বেগ বাড়িয়েছে তৃণমূল নেতাদের।— নিজস্ব চিত্র

রামপুরহাটে আদিবাসী গাঁওতার এই মিছিল উদ্বেগ বাড়িয়েছে তৃণমূল নেতাদের।— নিজস্ব চিত্র

কেউ বলছেন বারো হাজার। কয়েক হাজার কমিয়ে বিরোধীরা বলছে, ‘‘অত না হলেও আট হাজার তো বটেই।’’

ভোটের আগে বাম-কংগ্রেসের বোঝাপড়া তৃণমূল নেতৃত্বের কপালের ভাঁজ চওড়া করেছে। বীরভূমের মতো জেলায় অন্যতম ‘ফ্যাক্টর’ যে তারাও রামপুরহাটে বড়সড় মিছিল করে এ বার বোঝাল আদিবাসী গাঁওতারাও। একান্তে তৃণমূল নেতাদের অনেকেই মানছেন, ‘‘এক সময়ের এই জোট সঙ্গী জেলার ১১টি আসনের ১০টিতে প্রার্থী দিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলেছে।’’

বীরভূম জেলা আদিবাসী গাঁওতা সমর্থিত নির্দল প্রার্থী রবীন সরেনের সমর্থনে মঙ্গলবার বিকালে রামপুরহাট শহরে মিছিল হল। মিছিলের বহর দেখে এবং মিছিলে হাঁটা কর্মী-সমর্থকদের শরীরী ভাষা দেখে রাস্তায় উপস্থিত অনেকে আলোচনা করেছেন, ‘‘মিছিলে তো শুধুই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। আর প্রার্থীও আদিবাসী গাঁওতার জেলা নেতা। সুতরাং মিছিলে হাঁটা মানুষদের ভোট অন্যদের ভোটবাক্সে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।’’ এঁদের মত, এই মিছিল শুধু তৃণমূল নয়, অন্য দলের কাছেও চিন্তায় বিষয় হবে। মিছিল থেকে শ্লোগান ওঠে, ‘‘কুলকুল সরকার/ আর নাই দরকার। ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে সরকার/ আর নেই দরকার।’’ সঙ্গত করেছে ধামসা, মাদল, ঢাক, ব্যাঞ্জো। তাতে পা মিলিয়েছেন আদিবাসী মহিলারা।

বস্তুত, একদা জোটসঙ্গী এখন মাথাব্যাথা তৃণমূলের। সে কথা এর আগেও বুঝিয়ে দিয়েছেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল নিজেই। দিন কয়েক আগে মহম্মদবাজারের হিংলো পঞ্চায়েতের সারেন্ডায় তৃণমূলের মহিলা কর্মিসভায় অনুব্রতর হুঁশিয়ারি ছিল, ‘‘১৭ তারিখের পরে (ওই দিনেই ভোট রয়েছে বীরভূমে) আমরা গাঁওতার বিষ দাঁত ভেঙে দেব।’’ মুহূর্তে দানা বাঁধে বিতর্ক। যাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন অনুব্রত, সেই আদিবাসী সংগঠনের সম্পাদক রবিন সরেন কমিশনে অভিযোগ জানান। সমালোচনায় সরব হয় বিজেপি থেকে বাম-কংগ্রেস নেতারাও। এক সময়ের শরিক দল গাঁওতাদের প্রতি হঠাৎ হুঙ্কার কেন?

জবাবে ভোট রাজনীতির সমীকরণের ব্যাখ্যাই উঠে এসেছিল। অনেকের মত ছিল, রামপুরহাট কেন্দ্রের বিস্তীর্ণ এলাকায় গাঁওতার প্রভাব আছে। বিশেষ করে, মহম্মদবাজারের পাথর শিল্পাঞ্চল এলাকায় গাঁওতার প্রভাবের কথা অনেকেই মানেন। সেই কেন্দ্রেই এ বার বিধানসভার প্রার্থী হয়েছেন সংগঠনের জেলা সম্পাদক রবিন সোরেন। সংগঠনের তরফে দাবি, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০০৯ সাল থেকেই এলাকার উন্নয়ন ও দূষণ রোধের দাবিতে তাঁরা সরব। সেই নিয়েই সে সময়ের বাম সরকারের সঙ্গে গাঁওতার বিরোধের শুরু। গত বিধানসভা নির্বাচনে গাঁওতা পূর্ণ সমর্থন করে তৃণমূলকে। কিন্তু তৃণমূল এলাকা উন্নয়ন বা দূষণ রোধের ব্যাপারে যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পূরন করেনি বলে অভিযোগ নেতৃত্বের। সেই সমীকরণ মেনেই অনুব্রত সে দিন সিপিএম-কংগ্রেস বোঝাপড়া বা বিজেপিকে যত না আক্রমণ করেছেন, তার চেয়ে ঢের বেশি বিঁধেছেন গাঁওতাকে।

এ দিন রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম জাতীয় সড়কের ধারে রামপুরহাট ভাঁড়শালাপাড়া মোড় থেকে শুরু হওয়া মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন বীরভূম জেলা আদিবাসী গাঁওতা রবীন সরেন। তিনি মনে করেন, ‘‘ওই হুমকি গোটা সমাজকে অপমান করেছে। তার প্রতিবাদ করতেই মিছিলে সামিল হয়েছেন অনেকে।’’ এই নেতার কথায়, ‘‘আদিবাসী এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট, রাস্তাঘাটের অনুন্নয়ন, সর্বপরি ক্র্যাসার শিল্পে দূষণ নিয়ে আন্দোলনকে বাম বা তৃণমূলের আমলে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এ সবের প্রতিবাদ করতেই প্রার্থী হওয়া।’’ গাঁওতা নেতাদের হিসেবে প্রায় ১২ হাজার লোক হয়েছে। বিরোধীদের হিসেবে সংখ্যাটা আট হাজার।

মুখে অবশ্য দুঃশ্চিন্তার কথা স্বীকার করছেন না তৃণমূল নেতারা। রামপুরহাট বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় মিছিলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের মিছিল প্রায় প্রতিদিন বুথে বুথে হচ্ছে।’’ তা শুনে গাঁওতার এক কর্মী বলছেন, ‘‘আমাদের গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। ভোটের ফলেই টের পাবে ওরা!’’

rally campaign election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy