বিষ্ণুপুরের গুমগড়ের পাশে গড়ে ওঠা বেসরকারি লজ ভেঙে দিল পুরসভা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
পর্যটন শহর বিষ্ণুপুরে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ কম নেই। বাসিন্দারা অভিযোগ তুলতেন, প্রশাসন সব দেখেও ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে। তবে বৃহস্পতিবার প্রশাসনকে অন্য ভূমিকায় দেখা গেল।
বিষ্ণুপুরে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সংরক্ষিত জোড় বাংলা মন্দিরের কাছে এবং ঐতিহ্যবাহী গুমগড়ের ঠিক পাশেই মাসখানেক আগে চালু হওয়া একটি দোতলা বেসরকারি লজ বেআইনি ভাবে নির্মাণ করার অভিযোগে এ দিন গুঁড়িয়ে দিল পুরসভা। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া চেয়ে বারবার লজের মালিক অসীম সরকারকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মোবাইল ফোনে পাঠামো বার্তারও জবাব দেননি। তবে আগে তিনি দাবি করেছিলেন, অনুমতি নিয়েই লজটি তৈরি করা হয়েছে।
যদিও জোড় বাংলা মন্দিরের কাছাকাছি এলাকায় ওই লজ নির্মাণ বেআইনি বলে এক বছর আগে কাজ বন্ধের নোটিস দিয়েছিল ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ। তারা পদক্ষেপ করতে পুরসভা ও পুলিশ-প্রশাসনকেও মাসখানেক আগে চিঠি দেয়। তারপরেই সক্রিয় হয় বিষ্ণুপুর পুরসভা।
অভিযোগ কাজ বন্ধ হয়নি। এ বার পর্যটন মরসুমে লজটি পুরোদমে চালু হয়ে যায়। লজের চার পাশ তার দিয়ে ঘেরার তোড়জোড় শুরু হয়। হাইমাস্ট আলোর স্তম্ভ এবং পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের দিগ-নির্দেশক বোর্ডও ওই ঘেরাটোপের মধ্যে নিয়ে আসা হয়। বিষ্ণুপুরের এক পুরপ্রতিনিধি দয়াল পাত্র এ নিয়ে পুরপ্রধানের কাছে অভিযোগ করেন।
বিষ্ণুপুর পুরসভা দাবি করে, তাদের অনুমতি ছাড়াই ওই লজ তৈরি করা হয়েছে। পুরপ্রধান গৌতম গোস্বামীর দাবি, “পুরসভার অনুমতি ছাড়াই ওই বেসরকারি লজ নির্মাণ করা হয়েছে। পুরাতত্ব সর্বেক্ষণও নোটিস দিয়েছিল। অবৈধ লজ নির্মাণকারীকে একাধিকবার পুরসভা থেকে নোটিস দিয়ে নথিপত্র-সহ দেখা করতে বলা হয়েছিল। তিনি ভ্রুক্ষেপ করেননি। কিছু দিন আগে তাদের সময় বেঁধে দিয়ে লজ ভেঙে ফেলতে নোটিস দেওয়া হয়। সে সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে বৃহস্পতিবার পুরসভার বোর্ড অব কাউন্সিলরেরা বৈঠকে বসে অবৈধ লজ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।’’ তিনি জানান, বিষয়টি লজ কর্তৃপক্ষকে নোটিস দিয়ে জানানো হয়। পুলিশ প্রশাসন ও রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরেও জানানো হয়।
এ দিন বেলা ১১টার মধ্যে লজ ভাঙার যন্ত্রপাতি, দমকলের ইঞ্জিন চলে এলেও প্রশাসনের লোকজনের দেখা মেলেনি। তবে কি ভাঙা হবে না, এমন গুঞ্জনও ছড়ায়। তবে বেলা যত গড়িয়েছে, কৌতূহলী মানুষের ভিড় বরং বেড়েছে। দুপুর ১২ টার কিছু পরে পুরসভার কর্মী ও পুরপ্রতিনিধিদের নিয়ে লজের সামনে হাজির হন পুরপ্রধান। শুরু হয় লজ ভাঙার কাজ।
বাঁকুড়া থেকে বিষ্ণুপুরে মেয়ের বাড়ি বেড়াতে আসা এক বৃদ্ধ বলেন, ‘‘আইনের ঊর্দ্ধে কেউ কেউ নিজেদের ভেবে নিয়ে এ সব করে বসেন। নিয়ম মেনে নির্মাণ করলে তো টাকাগুলো নষ্ট হত না!’’ কেউ কেউ বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুরে এমন অবৈধ নির্মাণ তো কম নেই। প্রশাসন সেগুলি নিয়েও একই ভাবে সক্রিয় হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy