Advertisement
০২ মে ২০২৪
শহরের আবর্জনা নিয়ে নাজেহাল বিষ্ণুপুর পুরসভা

মাঠে পাহারা, ঘুরছে গাড়ি

দেখা গিয়েছে, ওই জমি খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করেন এলাকার মানুষজন। তাঁরা মাঠ পাহারায় বসেছেন। ফলে গাড়ি নিয়ে হন্যে হয়ে পথে পথে ফিরছেন পুরসভার জনস্বাস্থ্য বিভাগের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর তুহিন কুণ্ডু।

নিস্তার: জঙ্গলের ফাঁকে চলছে ময়লা ফেলা। রয়েছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

নিস্তার: জঙ্গলের ফাঁকে চলছে ময়লা ফেলা। রয়েছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

শুভ্র মিত্র
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৭ ০৪:০৬
Share: Save:

ময়লা ফেলার গাড়ির কনভয় চলেছে। সামনে পুলিশের গাড়ির এসকর্ট। শুক্রবার বিষ্ণুপুরের বাসিন্দারা এই ছবিই দেখলেন।

শতবর্ষের পুরনো বিষ্ণুপুর পুরসভার ময়লা ফেলার কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই। সরকারি খাস জমি চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু হাতে আসার আগেই আগ বাড়িয়ে সেখানে ময়লা ফেলতে গিয়ে বিপত্তি বেধেছে। দেখা গিয়েছে, ওই জমি খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করেন এলাকার মানুষজন। তাঁরা মাঠ পাহারায় বসেছেন। ফলে গাড়ি নিয়ে হন্যে হয়ে পথে পথে ফিরছেন পুরসভার জনস্বাস্থ্য বিভাগের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর তুহিন কুণ্ডু। তিনি জানান, ময়াল বোঝাই ১০টি গাড়ি নিয়ে শুক্রবার দিনমান চরকিপাক খেয়েছেন। এ গ্রাম থেকে সে গ্রাম— কোথাও ময়লা ফেলার উপায় নেই।

শেষ পর্যন্ত ময়লার বোঝা কিছুটা হালকা হয়েছে পানশিউলি যাওয়ার পথে শিরোমণিপুর গ্রামের কাছের জঙ্গলে। কিন্তু ওই জায়গায় ময়লা ফেলা নিয়ে আগেও আপত্তি জানিয়েছে বন দফতর। তার পরেও পুলিশের নাকের ডগায় এমনটা হল? এক পুলিশ কর্মী বলেন, ‘‘কী আর করব। শেষে যদি থানার সামনেই ময়লা ফেলে দিয়ে যায়!’’

বিষ্ণুপুর পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার রবীন্দ্রনাথ সরকার জানান, ১৯ টি ওয়ার্ড মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ টন আবর্জনা হয়। ১৫ টি গাড়ি করে সেগুলি তুলে আনা হয়। ঝঞ্জাট ফেলার জায়গা নিয়ে। গত কয়েক দিনে সেই সমস্যা আরও বেড়েছে। শুধু যে গাড়িতে বোঝাই ময়লা, তা নয়। বাসস্ট্যান্ড , যদুভট্ট মঞ্চ, সরকারি ট্যুরিস্ট লজের পাশের কলেজ রোড— সর্বত্র জমে থাকে জঞ্জালের স্তূপ। রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, আবেদন করায় সম্প্রতি বিষ্ণুপুর ব্লক ভূমি রাজস্ব দফতর বেলশুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ময়রাপুকুর গ্রামের কাছে প্রায় পাঁচ খাস জমি চিহ্নিত করেছে। তবে বিষ্ণুপুর মহাকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক কিঙ্করনাথ চট্টপাধ্যায় জিনিয়েছেন, শুধু চিহ্নিতই করা হয়েছে। পুরসভাকে ওই জমি দেওয়া হয়নি।

জঞ্জাল নিয়ে জেরবার রবীন্দ্রনাথবাবুর বক্তব্য, ‘‘কাগজে কলমে জমি হাতে আসেনি বটে, তবে খাস জমি জানতে পেরে ময়লা ফেলছিলাম।’’ এই যুক্তি মানতে নারাজ ময়রাপুকুর ও আশপাশের বাঁধগাবা, ঘুটবন, পানশিউলি, শিরোমণিপুর গ্রামের বাসিন্দারা। বিমলেন্দু শতপথী, গৌর লোহার, ইব্রাহিম শেখ, রফিকুল খানরা বলেন, ‘‘পাঁচটি গ্রামের প্রায় দু’হাজার বাসিন্দার জন্য সাকুল্যে একটাই খেলার মাঠ। সেটাকেই আস্তাকুঁড় বানানোর তাল করছে পুরসভা। আমরা হতে দেব না।’’ ওই খাস জমি পালা করে পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জেলাশাসক, মহাকুমাশাসক ও বিডিও-কে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বেলশুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান আঞ্জুরা বিবি। তিনি বলেন, ‘‘এলাকার একমাত্র খেলার মাঠ। পাশেই বিষ্ণুপুর যাওয়ার রাস্তা। বসতিও রয়েছে। অন্যায় ভাবে সেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে।’’ বিডিও (বিষ্ণুপুর) জয়িতা চক্রবর্তীও বলছেন, ‘‘এ ভাবে হুট করে গ্রামের পাশে আস্তাকুঁড় বানানো যায় না। গ্রামের মানুষজন, পঞ্চায়েত আধিকারিক ও অন্যদের সঙ্গে বলে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে। আপাতত ওই জায়গায় ময়লা ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে।’’

কিন্তু এক দিনে তো এই অবস্থা হয়নি। এত দিন কোথায় ময়াল ফেলা হচ্ছিল? বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের জবাব, ‘‘এ দিক সে দিক— যেখানে ফাঁকা পেয়েছি।’’ তাঁর দাবি, জমি নিয়ে সমস্যার জেরে আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা করা যায়নি এত দিন। তা ছাড়া বাম জামানায় জমি কেনার মতো টাকাও দেওয়া হত না বলে তাঁর অভিযোগ। শ্যামবাবুর বক্তব্য, ‘‘আবর্জনা নিয়ে শহরবাসীর জীবন ওষ্ঠাগত। ময়রাপুকুরে প্রশাসন জমিও খুঁজে দিয়েছে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে গ্রামবাসীকে প্ররোচিত করা হচ্ছে।’’

এই নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএম নেতা স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘জমি মাফিয়াদের প্রশ্রয় দেওয়ার ফল এখন ভুগতে হচ্ছে।’’ বিষ্ণুপুরের বিজেপি নেতা স্বপন ঘোষ মন্তব্য, ‘‘দিনের পর দিন অপরিকল্পিত ভাবে কাজ করলে এটাই হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE